ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শব্দদূষণ রোধে

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৬ জানুয়ারি ২০২০

শব্দদূষণ রোধে

নগর-মহানগরে শব্দদূষণ বলতে পথে ঘাটে যানবাহনের আওয়াজ ও হর্নের তীব্র তীক্ষ্ন শব্দকেই বোঝানো হয়ে থাকে। এটাও ঠিক যে, শব্দদূষণ বেশি সৃষ্টি করছে যানবাহনই। কিন্তু ঘরে ঘরে উচ্চৈঃশব্দে গান-বাজনা বাজানো এবং দিনরাত গৃহনির্মাণ থেকে শুরু করে নানা নির্মাণযজ্ঞের ফলেও মারাত্মক শব্দদূষণ হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে এটাও যোগ করা জরুরী যে, গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে সেলফোনে অনর্গল জোরে কথা বলাও শব্দদূষণের পরিধির মধ্যেই পড়ে। ঢাকার সড়কে দিন দিন শব্দদূষণ বেড়েই চলেছে। সিগন্যালে লাল বাতি দেখে থেমে যাওয়া বিবিধ গতির যানবাহন রেসের ঘোড়ার মতোই ছোটে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে। গন্ডারের মতো তেড়েফুঁড়ে আসতে থাকে মোটরসাইকেলগুলো। হর্ন বাজানোর কোন প্রয়োজন নেই, তবুও প্রতিটি মোটরসাইকেলই হর্ন বাজাতে বাজাতে ছোটে। হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ। তাহলে তাদের হর্নগুলো কী? বাঁয়ে বা ডানে মোড় নেয়ার সময় পথচারীকে সতর্ক করার জন্য মৃদু হর্ন বাজানো যেতেই পারে। অথচ পথচারীকে চমকে দিয়ে তার হৃদপিন্ডকে যাতনা না দিয়ে তার যেন শান্তি নেই! শব্দদূষণ হলো নীরব ঘাতক, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের ক্ষতি করে মানুষের। অথচ শব্দদূষণের প্রতিকারে তেমন কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এই তো সেদিন ‘আমরা হর্ন বাজাই না বন্ধু’ নামের একটি অনলাইনভিত্তিক সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। তাদের মূলমন্ত্র ‘হর্নমুক্ত বাংলাদেশ, আরও সুস্থ বাংলাদেশ’। দুটো স্টিকার রয়েছে সংগঠনটির। তাতে লেখা- ‘আপনার দেওয়া হর্নে, ব্যথা পাই দুই কর্ণে’, ‘ভালো ড্রাইভার হর্ন দেয় না, বাপ! হর্নে দিস না চাপ’। কিছুটা রসময় বটে, তবে উপেক্ষা করার মতো নয়। সম্প্রতি রাজধানীর সচিবালয়ের চারপাশ ‘নো হর্ন জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এলাকাটিতে কোন গাড়ি হর্ন দিলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানার আওতায় আসবে। অথচ ঐ এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধের পরও আগের মতোই উচ্চমাত্রার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে। বয়স্ক এবং অসুস্থরা শব্দদূষণের বড় শিকার। এছাড়া শব্দদূষণের ফলে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। শব্দদূষণে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়। শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। সেখানে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল। শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা অনেকেই জানেন না। তবে এখন জনস্বার্থে সরকারী প্রচারণার কল্যাণে রাজধানীবাসীসহ বহুসংখ্যক মানুষ শব্দদূষণের ক্ষতিকর বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। দুঃখজনক হলো, সচেতন হলেও সতর্ক নন। শব্দদূষণ সৃষ্টি করা হলে যিনি এটা করেন, তিনিও একই ক্ষতির শিকার হন। রাজধানীতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন গাড়ি নামছে। রাস্তা সীমিত, অথচ যানবাহন সীমাহীন। সেইসঙ্গে অসীম তার শব্দদূষণ। ঢাকার রাজপথে হরেকরকম উচ্চৈঃশব্দের ভেতর সবচেয়ে অসহনীয় মনে হয় এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। সাইরেন শুনে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম ঘটে। একইসঙ্গে মোটরসাইকেলগুলোর হর্নের ব্যাপারেও একটা কার্যকর অভিযান চালানো অনিবার্য হয়ে পড়েছে। শব্দদূষণ তথা শব্দসন্ত্রাস রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে জোরালো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরী হয়ে পড়েছে।
×