ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করুন

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ৫ জানুয়ারি ২০২০

ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নতুন বছরে এবং মুজিববর্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এ কারণে শুধু রাজপথে মিছিল-মিটিং নয়, ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের মুলতবি যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নেতারা দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দুই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমে ভোট প্রদানের ব্যাপারে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে এ বিষয়ে জানাতে হবে। আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপি এ নির্বাচনকে ইস্যু করে নানা ষড়যন্ত্র করবে। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা এ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করতে না পারে। সেজন্য সবাইকে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, যৌথসভায় মূলত আসন্ন ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদগুলোতে কিভাবে জয় পাওয়া যায় সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা পরামর্শ শোনেন শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও নেতাদের নানা নির্দেশনা দেন। সূত্রগুলো জানায়, যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আরপিওতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও এমন আইন নেই। সব দেশেই সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রচারে অংশ নেন। এমপি হিসেবে আমরা ২০১৬ সালেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিয়েছি। কিন্তু এখন আরপিও পরিবর্তন করে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী রাখার ওপরে জোর দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী না থাকলে শুধু কাউন্সিলর নয়, মেয়র পদেও জয় পেতে সমস্যা হবে বলে মন্তব্য করেন। সূত্র জানায়, এ সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ডেকে আলোচনার মধ্য দিয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেন। দরকার হলে দল মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনেরও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া নির্বাচনে জয় পেতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিছিল-সমাবেশ করলে সেখানে শুধু দলের লোক আসে। সাধারণ ভোটাররা আসে না। সেজন্য সাধারণ ভোটারদের কাছে পৌঁছার কাজ করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। বিগত কয়েক বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি সেগুলো তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুত দিয়েছি, রাস্তা-ঘাট করেছি, পানি সমস্যার সমাধান করেছি। যেসব সমস্যা আমরা এখনও সমাধান করতে পারিনি সেগুলোও সমাধান হবে, আমরা বসে নেই, সেটা ভোটারদের বোঝাতে হবে। ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে বিএনপি এমন কোন আহামরি প্রার্থী দেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা দলের নেতাদের সিরিয়াসলি নির্বাচনে কাজ করার নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণে ঢাকাইয়া প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সন্তান ইশরাক হোসেন এগিয়ে থাকতে পারবে কিনা সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা ওঠে। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম বলেন, আমাদের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের শ্বশুরবাড়ি ওয়ারি থানার বনগ্রামে। আর তার নানার বাড়ি বরিশাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বরিশালেরও অনেক মানুষের বাস। ফলে আমরাই এগিয়ে থাকব। এ সময়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, পুরনো ঢাকায় বিক্রমপুরের বহু মানুষ আছে। সেখানেও আমরা এগিয়ে থাকব। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সভায় বলেন, একটি সুষ্ঠু ভোটের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে আমাদের প্রমাণ করতে হবে মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। বিএনপি এখনই বলতে শুরু করেছে যে, ভোট সুষ্ঠু হবে না। তাদের সে বক্তব্য জনগণের সামনে ভুল প্রমাণ করতে হবে। তারা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল যে, বিএনপির প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও সে মিথ্যাচারে তারা সফল হয়নি। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়। সভায় মুজিববর্ষে নানা কর্মসূচী পালনের বিষয়েও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য। মুজিববর্ষ উদ্যাপনে জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় নেতাদের কাজ করারও নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, মুলতবি যৌথসভায় নতুন বছরে সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বছরব্যাপী সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ব্যাপকভাবে মুজিববর্ষ পালনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় এবং সাংগঠনিক বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে প্রবীণ জননেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গঠিত দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম অংশের যৌথসভায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ওই দুটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএসসিসি) উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য আমির হোসেন আমুকে সমন্বয়ক করে এই দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি এই দুই সিটির নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবেন দলের বর্ষীয়ান এই দুই নেতা। গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে টানা নবম বারের মতো দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন। ওই সম্মেলনে গঠিত নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এটিই ছিল প্রথম যৌথসভা।
×