ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফেড কাপে বসুন্ধরার আক্ষেপ ঘোচানোর লড়াই

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৫ জানুয়ারি ২০২০

ফেড কাপে বসুন্ধরার আক্ষেপ ঘোচানোর লড়াই

রুমেল খান ॥ ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম-সূচক আসর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে ফেডারেশন কাপকে। ১৯৮০ সাল থেকে আসরটির যাত্রা শুরু। ৩৯ বছরে মোট ৩০ বার আয়োজিত হলেও ১৯৯০, ৯২, ৯৩, ৯৬, ৯৮, ২০০৪, ০৬, ০৭ এবং ১৪ সালে মোট ৯ বার মাঠে গড়ায়নি আসরটি। এই ৩০ বারের মধ্যে আসরটির শিরোপা জিতেছে মাত্র ছয়টি ক্লাব। এরা হলো : আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। সাত নম্বর ক্লাব হিসেবে এই তালিকায় আজ নাম ওঠানোর সুযোগ রয়েছে একই সঙ্গে দুটি ক্লাবের। একটি বসুন্ধরা কিংস, অন্যটি রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩১তম আসরের ফাইনালে যে দলই জিতুক না কেন, তারাই পরিণত হবে ফেডারেশন কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন দলে। দুই দলেরই প্রত্যাশা পূরণের ম্যাচ এটি। অন্যভাবে বললে আজ বসুন্ধরার আক্ষেপ ঘোচানোর দিন এবং রহমতঞ্জের ইতিহাস গড়ার দিনও বটে। গত মৌসুমেই প্রিমিয়ার লীগে প্রথমবারের মতো নাম লিখিয়েছিল ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। সেবার তারা অভিষেকেই লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজিমাত করেছিল। এছাড়াও জিতেছিল স্বাধীনতা কাপের শিরোপাও। অল্পের জন্য তারা ‘ট্রেবল’ জিততে পারেনি মোহামেডান (১৯৮২) এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের (২০১২) মতো। কেননা গতবারের ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও তারা নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে আবাহনী লিমিটেডের কাছে ৩-১ গোলে হতাশার অনলে দগ্ধ হতে হয় তাদের। এবারও সেই একই আসরের ফাইনালে উঠেছে কিংসরা। এবার আর গতবারের মতো ফাইনালে হেরে কাঁদতে চায় না অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। জিতে ঘোচাতে চায় আক্ষেপ। এই আসরে বি-গ্রুপে রানার্সআপ হয় কিংস। সেখানে তারা ১-০ গোলে ব্রাদার্সকে হারায় ও ২-০ গোলে হেরে যায় চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। কোয়ার্টারে তারা টাইব্রেকারে ৪-১ (১-১) গোলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে হারায়। সেমিতে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ পুলিশকে। ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে নিজেদের ঐহিত্য এই আসরে দারুণভাবে ধরে রেখেছে পুরনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ। সৈয়দ গোলাম জিলানির শিষ্যরা ‘সি’ গ্রুপে গোলশূন্য ড্র করে সাইফের সঙ্গে। আর ১-১ গোলে ড্র করে শেখ জামাল ধানম-ির সঙ্গে। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টার খেলা নিশ্চিত করে। সেখানে তারা সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটায়। টাইব্রেকারে ৪-৩ (১-১) গোলে হারিয়ে দেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও সর্বাধিক ১১ বারের শিরোপাধারী আবাহনীকে। এরপর সেমিফাইনালে হারায় আরেক জায়ান্ট মোহামেডানকে, ১-০ গোলে। সেমিতে জিতে ইতিহাস গড়ে ‘ডাইলপট্টি’ খ্যাত রহমতগঞ্জ। ২০১৭ আসরে তারা যা পারেনি, সেটা পারে চলতি আসরে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় এই প্রথম ফাইনালে নাম লেখায়। ২০১৭ আসরে সেবার সেমিতে তারা চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হার মেনেছিল ১-০ গোলে। টুর্নামেন্ট শুরুর পর দীর্ঘ ৩৯ বছর পর ফাইনালে পা রাখল রহমতগঞ্জ। শুধু তাই নয়, ক্লাবটির ৮৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম তারা কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে। রবিবারের ফাইনালে বসুন্ধরা জিতলেও তাদের একটা অতৃপ্তি থেকেই যাবে। সেটা হলো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না তারা। অথচ রহমতগঞ্জ জিতলে তারাই হবে অপরাজিত শিরোপাধারী। চলতি আসরে তারাই এখন পর্যন্ত একমাত্র দল যারা একটি ম্যাচেও হারেনি। রহমতগঞ্জের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী বলেন, ‘আমার কোচিংয়ে রহমতগঞ্জ এই প্রথম কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে। আমার স্বপ্ন ছিল এই আসরের সেমিতে সরাসরি জিতেই ফাইনালে উঠব। কেননা গ্রুপপর্বে আমরা দুই ম্যাচেই ড্র করি। কোয়ার্টারে জিতি টাইব্রেকারে। সেই অর্থে এই আসরে আমাদের কোন জয়ই ছিল না। বলা যায় সেমিতেই প্রথম জয় ছিল আমাদের। ফাইনালে খেলতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের আসলে হারনোর কিছু নেই, তবে পাওয়ার অনেক কিছুই আছে।’ জয় চাই বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের, ‘আগের ম্যাচে দল পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছে। সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নিতে পেরেছে। ফাইনালেও এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। ফাইনালে আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়া।’ শক্তির নিরিখে কিংস অনেক শক্তিশালী। আর রহমতগঞ্জ আন্ডারডগ। তবে অনেক সময় আন্ডারডগ দলের কাছে ফেবারিট দল হেরেও যায়। আজও কী তাই হবে? সেক্ষেত্রে চমক সৃষ্টির পাশাপাশি ইতিহাসও সৃষ্টি করবে জায়ান্ট কিলাররা? তা নাহলে ফেবারিট কিংসরাই গতবারের অপূর্ণতা ঘুুচিয়ে হাসবে শেষ হাসি। কোনটা ঘটবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×