ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবার আগে প্লে-অফে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৫ জানুয়ারি ২০২০

সবার আগে প্লে-অফে চট্টগ্রাম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে এ যোগ্যতা অর্জন করে তারা। আগে ব্যাট করে খুলনা ১৯.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানেই গুটিয়ে যায়। জবাবে ১৮.১ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান তুলে সহজ জয় পায় চট্টগ্রাম। ১০ ম্যাচে সপ্তম জয়ে চট্টগ্রামের পয়েন্ট ১৪। নিয়ম অনুসারে রাউন্ড রবিন লীগ শেষে শীর্ষ চারটি দল প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। পয়েন্ট টেবিলের বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে কোনভাবেই ৫টি দলের পয়েন্ট ১৪ হওয়ার উপায় নেই। সে কারণে চট্টগ্রামের নিশ্চিত হয়েছে প্লে-অফ খেলা। এই মুহূর্তে ঢাকা প্লাটুন, রাজশাহী রয়্যালসের পয়েন্ট ১২ করে আর খুলনার পয়েন্ট ১০। রেসে টিকে থাকা কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও রংপুর রেঞ্জার্সের পয়েন্ট ৮ করে। রংপুরের ২ ম্যাচ বাকি থাকায় কোনভাবেই আর ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। আর কুমিল্লা ও খুলনা উভয় দলের পয়েন্ট ১৪ হওয়া সম্ভব হবে না পরস্পরের মধ্যেই দুই ম্যাচ থাকার কারণে। যে কোন একটি ম্যাচ হারলেই এ দু’দলের একটি দল চট্টগ্রামের ১৪ পয়েন্ট ছুঁতে পারবে না। চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলে সিলেট পর্বের শেষদিন শনিবার। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয় চট্টগ্রাম ও খুলনা। প্লে-অফে ওঠার রাস্তা সহজ করতে এই ম্যাচে জয় খুব জরুরী ছিল খুলনার, আর জিতলেই প্লে-অফে উঠবে চট্টগ্রাম এমনটাই সমীকরণ ছিল। সেই ম্যাচ জিতে সর্বাধিক ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছে প্লে-অফে। ৫টি দলের ১৪ পয়েন্ট করে হলেই শুধু বাদ পড়ার সুযোগ থাকবে চট্টগ্রামের। কিন্তু তা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ১৪ পয়েন্টের বেশি হতে পারে অন্য দলগুলোর, সেক্ষেত্রে বাকি ২ ম্যাচে চট্টগ্রাম হারলেও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারে থেকে প্লে-অফ খেলবে তারা। সেদিক থেকে হিসেবটা তাদের শুধু খুলনা ও কুমিল্লার সঙ্গেই। খুলনা ৯ ম্যাচে সংগ্রহ করেছে ১০ পয়েন্ট। তাদের বাকি ৩ ম্যাচের দুটিই কুমিল্লার বিপক্ষে আর ১ ম্যাচ খেলবে ঢাকা প্লাটুনের সঙ্গে। এ তিনটি ম্যাচ জিতলে তাদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ১৬ এবং প্লে-অফ নিশ্চিত করবে। সেক্ষেত্রে খুলনার কাছে পরবর্তী দুই ম্যাচ হেরে যাওয়াতে বাদ পড়বে কুমিল্লা। আর কুমিল্লা যদি বাকি ৩ ম্যাচের দুটিতেই খুলনাকে এবং সিলেটকে হারিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে আপাতত ৯ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করা কুমিল্লার পয়েন্ট দাঁড়াবে ১৪। তখন বাদ পড়তে পারে খুলনা। কিন্তু কোনভাবেই ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রামের বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ইতোমধ্যেই সিলেট থান্ডার বাদ পড়ে গেছে এবং রংপুরও বিদায়ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছে। এমন একটি ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে খুলনা। কিন্তু প্রথম থেকেই তারা বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানার দাপটের মুখে বিপাকে পড়ে যায়। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এদিন প্রথম বল হাতে নিয়েই জোড়া আঘাত হানেন তিনি। সেই ওভারের প্রথম বলেই মেহেদী হাসান মিরাজকে (৪) এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান রানা। চতুর্থ বলে বোল্ড করে দেন প্রথমবার বিপিএলে খেলতে এসে প্রথম ম্যাচে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার হাশিম আমলাকে (৮)। নিজের প্রথম ওভারে ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান রানা। বিপাকে পড়া খুলনাকে প্রথম থেকেই আঁটোসাঁটো বোলিং করা অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন পরের ওভারে শিকার করেন শামসুর রহমান শুভকে (০)। ফলে ১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত খুলনার হাল ধরেন রাইলি রুশো ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কিন্তু রানের গতি শুরুতেই শ্লথ হয়ে যাওয়ায় পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ওঠে মাত্র ২২ রান। তবে রুশো-মুশফিক জুটি ৪৯ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপদ কিছুটা সামাল দেন। ওই সময় মিডিয়াম পেসার জিয়াউর রহমান আঘাত হানেন। ২৪ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রান করা মুশফিককে বোল্ড করে দেন তিনি। নতুন করে বিপদে পড়ে খুলনা। এরপর খুলনার দলীয় সংগ্রহ এক শ’ পেরিয়েছে শুধু দুই প্রোটিয়া তারকা রুশো ও রবি ফ্রাইলিঙ্কের দৃঢ়তায়। তারা ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩ রান যোগ করেন। কিন্তু ১৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাতে রুশো ও আমির ইয়ামিনকে সাজঘরে ফেরান কেসরিক উইলিয়ামস। রুশো ৪০ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৪৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি খুলনা রুবেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতেই খুলনার ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১২১ রানে। রুবেল ৩.৫ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে এবং মেহেদী রানা ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে লেন্ডল সিমন্স ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু পায় চট্টগ্রাম। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই তারা বিনা উইকেটে ৪২ রান তুলে ফেলেন। ইনিংসের ১১তম ওভারে জুটি ভাঙ্গেন খুলনার ডানহাতি অফস্পিনার আলিস আল ইসলাম। গত বিপিএলের পর প্রথম কোন ম্যাচ খেলতে নেমেই এ তরুণ সিমন্সকে কট এ্যান্ড বোল্ড করে দেন। সিমন্স ২৮ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৩৬ রান করেছিলেন। পরের ওভারেই জুনায়েদ ফিরে যান। তিনি ৩৮ রান করেছিলেন ৩৯ বল খেলে ৪ চার, ১ ছক্কায়। চলতি আসরে এটিই ছিল অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম উইকেট। এরপর ফ্রাইলিঙ্কের পেস আক্রমণে দ্রুতই ফিরে গেছেন শ্রীলঙ্কান আসেলা গুনারতেœ (০) ও চ্যাডউইক ওয়ালটন (৭)। কিন্তু অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ২৭ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় করা অপরাজিত ৩০ রানের সুবাদে ১১ বল হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় চট্টগ্রাম। ১৮.১ ওভারে ৪ উইকেটে ১২৪ রান তুলতেই নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের প্লে-অফ। তবে হারলেও রেসে ভালভাবেই টিকে আছে খুলনা। স্কোর ॥ টস ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স (ফিল্ডিং)। খুলনা টাইগার্স ইনিংস- ১২১/১০; ১৯.৫ ওভার (রুশো ৪৮, মুশফিক ২৯, ফ্রাইলিঙ্ক ১৭; রুবেল ৩/১৭, মেহেদী রানা ৩/২৯, কেসরিক ২/২১, জিয়া ১/২২)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস- ১২৪/৪; ১৮.১ ওভার (জুনায়েদ ৩৮, সিমন্স ৩৬, ইমরুল ৩০*; ফ্রাইলিঙ্ক ২/২০, মিরাজ ১/১০, আলিস ১/২৭)। ফল ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মেহেদী হাসান রানা (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।
×