ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৫ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কয়টি দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে চলছিল একের পর এক নাটকীয়তা। প্রথমে চার দেশকে নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম সমালোচিত হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সমালোচনা এড়ানোর জন্য পরে জানানো হয় দল দুটি বাড়বে। তারও পরে জানানো হয়, পাঁচ দল অংশ নেবে। বিজোড় সংখ্যার দল হওয়ায় গ্রুপভিত্তিক নয়, লীগ ভিত্তিতে নাকি দলগুলো খেলবে এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দেশ ফাইনালে খেলবে। অথচ শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে টুর্নামেন্টের গ্রুপিং ড্র অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, টুর্নামেন্ট নাকি ৬ দেশ নিয়েই আয়োজিত হবে। ড্রতে র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে ৬ দলকে রাখা হয়েছিল ৩টি পটে। সেখান থেকেই লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় দুই গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে খেলা। ৬ দেশ হওয়ায় লীগ পদ্ধতিতে নয়, দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রুপ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল। ফাইনাল ২৫ জানুয়ারি। ফাইনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রতিযোগিতার সব ম্যাচই সরাসরি সম্প্রচারিত হবে আরটিভিতে। এই আসরে বাংলাদেশ আছে ‘এ’ গ্রুপে। যেখানে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন ও শ্রীলঙ্কা। কঠিন গ্রুপেই পড়েছে বাংলাদেশ। ‘বি’ গ্রুপে থাকছে বুরুন্ডি, সিশেলস ও মরিশাস। উল্লেখ্য, এ-গ্রুপের তিনটি দলই এশিয়ার আর বি-গ্রুপের তিনটি দেশই আফ্রিকার। মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া থেকে কোন দেশ খেলছে না বলে এই আসরের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে আবারও বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে বাফুফে। ফুটবলামোদীরা বলছেন এসএ গেমস ফুটবলে দুর্দান্ত খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নেপাল ও রানাসর্আপ ভুটানকে রাখা হলে এই আসরের গুরুত্ব-আকর্ষণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত। একমাত্র ফিলিস্তিন বাদে বাকি চার অতিথি দেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং এবং ফুটবল শক্তিমত্তা খুব একটা আহামরি কিছু নয়। এদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও সিশেলস তো বাংলাদেশের চেয়েই র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে। কাজেই দুর্বল দল ডেকে এনে বাংলাদেশকে ফাইনালে নেয়ার বাফুফের এই প্রক্রিয়া মোটেও সাধুবাদ পাচ্ছে না কারোর কাছে। ছয় দলের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার ওপরে আছে ফিলিস্তিন। তারা রয়েছে ১০৬-এ। এরপর রয়েছে বুরুন্ডি (১৫১) ও মরিশাস (১৭২)। বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭তম। সিশেলস রয়েছে বরাবর ২০০তম স্থানে। শ্রীলঙ্কা রয়েছে সবার নিচে (২০৫)। প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল সেমিফাইনালে খেলবে। সেখান থেকে দুটি দল খেলবে ফাইনালে। শনিবার ড্র অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবু নাছের চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ এম করিম, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, ফিফা কাউন্সিল মেম্বার মাহফুজা আক্তার কিরণ ও বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগসহ অনেকে। ‘মিস ইন্ডিয়া’ খেতাব জেতা রূপালি সুরির চমৎকার উপস্থাপনার সঙ্গে মোহনীয় নৃত্য অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ হয়। ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবলের সাফল্য গাথা। অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ‘সব ভাল কাজের অনুপ্রেরণার উৎস জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু নিজেও ফুটবলার ছিলেন। তার নামের এ টুর্নামেন্টটি যেন সফল হয়, সেই কামনা করছি।’ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে ১০০টি ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজন করব। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজন করছে ৬ জাতির বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ।’ বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, ‘এ বছর বঙ্গবন্ধুর নামে মোট দুটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে।’ ৫ দল নিয়েই আসরের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শুক্রবার রাতে নাটকীয়ভাবে আরও একটি দলকে পেয়ে যায় বাফুফে। সেই দেশটির নাম বুরুন্ডি। দলসংখ্যার নাটকীয়তা শেষ হলেও নাম নিয়ে হয়েছিল আরেক নাটক। আগে জানা গিয়েছিল বাংলাদেশের সঙ্গে এই টুর্নামেন্টে খেলবে শ্রীলঙ্কা, লাওস, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া ও কিরগিজস্তান। পরে জানা যায় শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি চারটি দলই খেলবে না। ২০১৯ সালের শেষদিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটির আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল বাফুফের। তবে এখন নতুন বছরের শুরুতে হচ্ছে। ড্র অনুষ্ঠানে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘এই প্রতিযোগিতা ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এটা মুজিববর্ষে নিয়ে আসতে বলেন।’ ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফিলিস্তিন। সেবার ফাইনালে টাইব্রেকারের তাজিকিস্তানকে ৪-৩ (০-০) গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফিলিস্তিন। অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশ শুরু করলেও সেবার সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতায় এখনও শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের। আগের পাঁচ আসরের মধ্যে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ দলের কাছে ৩-২ গোলে হেরে রানার্সআপ হওয়াটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাওয়া। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে শেষ চারে হেরে বিদায় নিয়েছিল লাল-সবুজরা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপকে সামনে রেখে ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক দল ঘোষণা হতে পারে ৬ জানুয়ারি।
×