ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধ বাবার লাশ পাহারায় কুকুর ॥ সন্তানরা ব্যস্ত সম্পত্তি বণ্টনে

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৫ জানুয়ারি ২০২০

বৃদ্ধ বাবার লাশ পাহারায় কুকুর ॥ সন্তানরা ব্যস্ত সম্পত্তি বণ্টনে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন আবুল হোসেন। মৃত্যুর পর তিনি হয়ে গেলেন সম্পূর্ণ নিঃস্ব। সম্পত্তি, সন্তান, নিকটাত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী কোন কিছুই তার কাজে আসেনি। সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে সন্তানদের বিরোধের কারণে রাতভর তার লাশটি দাফনের অপেক্ষায় থাকলেও লাশের পাশে ছিল না কেউ। তবে একটি বেওয়ারিশ কুকুরকে রাতভর লাশের পাশে পাহারারত অবস্থায় দেখা গেছে। এমনই একটি ছবি শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। শনিবার এনিয়ে বরিশালজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।জানা গেছে, জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন খান (৮০) বার্ধক্যজনিত কারণে গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক আবুল হোসেন খান মারা যাওয়ার পর তার সন্তানরা সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ওইসময় এক ছেলে তার বাবার লাশ দাফনে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে আসলে সন্তানরা তার বাবার লাশ স্থানীয় মসজিদের সামনের সড়কের পাশে রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে কিছুক্ষণ এলাকাবাসী লাশের পাহারায় ছিলেন। কিন্তু রাত গভীর এলে তারাও যে যার মতো স্থান ত্যাগ করেন। তখন একা পরে থাকে আবুল হোসেন খানের লাশ। এরপর সেখানে আসে একটি বেওয়ারিশ কুকুর। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত লাশের পাশে ওই কুকুর ছাড়া আর কেউ ছিল না। পাহারাদারের মতো কুকুরটি সারারাত লাশের পাশেই বসে থাকে। ভোরে ওই মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা বিষয়টি দেখে হতবাক হয়ে যান। এর মধ্যে কোন এক ব্যক্তি কুকুরের লাশ পাহারার একটি ছবি তোলেন। শুক্রবার রাতে ওই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওইদিন সারারাত আবুল হোসেনের সন্তানরা সম্পত্তির ভাগবণ্টনের কোন সুরাহা করতে না পারায় বাবার লাশ দাফন করা থেকে বিরত থাকে। খবর পেয়ে পরেরদিন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমএ জব্বার বাবুল। শনিবার সকালে তিনি (চেয়ারম্যান) সাংবাদিকদের বলেন, আমি ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। এমন ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে। চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুরো বিষয়টি শুনে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ও গ্রামবাসীর সহায়তায় আমি বৃদ্ধ আবুল হোসেন খানের দাফনের ব্যবস্থা করেছি।
×