ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়া শহরের সাতমাথায় আলোড়ন

কমলাগাছের দাম ১৪ হাজার টাকা

প্রকাশিত: ১১:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০২০

কমলাগাছের দাম ১৪ হাজার টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ একটি কমলাগাছের মূল্য ১৪ হাজার টাকা হেঁকে শনিবার শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এক বিক্রেতা। ছোট্ট একটি গাছে থরে থরে কমলা ধরা। গাছটিতে পাতার চেয়ে কমলাই যেন বেশি দৃশ্যমান। গাছজুড়ে ঝুলছে মনলোভা দারুণ কমলা। এমন একটি কমলাগাছ বিক্রি করতে এসে হৈ চৈ ফেলে দেন বিক্রেতা। উৎসুক মানুষ কমলাসহ গাছটিকে এক নজর দেখতে সেখানে এসে ভিড় জমান। ছোট্ট এই গাছে রয়েছে ৬২টি কমলা, যা অনেককে বিস্মিত করেছে। শখের বশে বাড়িরছাদে ফলের গাছ লাগিয়েছিলেন মুনসুর আলী। এই শখই এখন তার ব্যবসা। বর্তমানে তিনি ছাদে কমলার গাছ লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসায় উদ্যোগী হয়েছেন। দেশী-বিদেশী নানা জাতের ফল চাষে দেশে সাফল্যর খবর অনেকেরই জানা। উত্তরের জেলায় কমলা চাষ নতুন কিছু নয়। কমলা চাষ করে অনেকেই সফল হয়েছেন। তার মতো দেশে এখন আরও অনেক চাষী রয়েছেন। প্রচুর আবাদের ফলে দেশে কমলার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বগুড়া সদরের মুনসুর আলীর বাড়ির ছাদের একটি ছোট্ট কমলাগাছ সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা শহরে। ছাদে ড্রামে লাগানো চারা থেকে গাছ হয়ে ওঠায় তাতে ধরেছে প্রচুর ফল। আর এই গাছেই ঝুলছে একটি/দুটি নয় ৬২টি দৃষ্টিনন্দন কমলা, যা সবাইকে উৎসুক করে তোলে। রিক্সাভ্যানের ওপর প্লাস্টিকের ড্রাম ভর্তি মাটিতে লাগানো এই কমলাগাছটি বিক্রি করতে এনেছিলেন সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের ছোট সরলপুর উত্তরপুর গ্রামের মোঃ মুনসুর আলী। সকালে ভ্যানটি শহরের সাতমাথা এলাকায় বিক্রির জন্য আনার পর তাকে ঘিরে ধরেন লোকজন, দুপুর পর্যন্ত চলে এর দরদাম। ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত এর দাম উঠলেও বিক্রেতার কথা অন্তত ১২ থেকে ১৪ হাজারের কম দামে তিনি তার এই শখের কমলাগাছটি বিক্রি করবেন না। এর আগে মুনসুর আলীর নার্সারির ব্যবসা ছিল না। তিনি সিমেন্টের তৈরি ছোট আকারের খুঁটি তৈরির ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর আগে সেই ব্যবসায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর তার আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই ক্রমে তিনি শুরু করেন ফলের চারা বিক্রির ব্যবসা। তার এক প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম তাকে ফলের চারা কেনা-বেচায় আগ্রহী করেন। শফিকুলের নিজের জায়গা না থাকায় একবিঘা জমি বছরে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে ছোট আকারে একটি নার্সারি চালু করেন। এছাড়া,স্থানীয় গোকুল এলাকার বড় বড় নার্সারি থেকে ফলের চারা কিনে এনে প্রথমে ভ্যানে করে বিক্রি করেন তিনি। পরবর্তীকালে মুনসুর আলী এসে তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দুজনে মিলে উত্তরের জেলা দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি শুরু করে দেন। এর মধ্যেই মুনসুর আলী নিতান্ত শখের বসে নিজের দ্বিতল বাড়ির ছাদে ফলের গাছের বাগান করেন। ১৭শ’ বর্গফুটের ছাদে প্লাস্টিকের বালতি ও ড্রামে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগান। লেবু, বারোমাসি আম, পেয়ারা, বেদানা, বরই, মাল্টা ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরেন ফলের গাছের ছোট্ট বাগান তৈরি করেন। এরই একটি কমলাগাছ তিনি ব্যবসার অংশীজন শফিকুলের ভ্যানে বিক্রি করতে শহরের নিয়ে আসেন। এর আগে এমনভাবে ফলের গাছ তিনি কখনও বিক্রি করেননি। তবে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে তিনি অভিভূত। ছাতকী জাতের কমলার ছোট্ট গাছটিতে এত বেশি কমলার ফলন দেখে লোকজনের আগ্রহ বেড়ে যায়। তাই একটি গাছ কিনতে বহু লোক এসে ভিড় জমান। ৬২টি কমলাসহ গাছের দাম ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠলেও মুনসুর আলী দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাছটি বিক্রি করেননি। তার আশা গাছটি তিনি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন...।
×