ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দু’লাখ টন আনা হচ্ছে

সরবরাহ কমার অজুহাতে পেঁয়াজ ফের আক্রা

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৫ জানুয়ারি ২০২০

সরবরাহ কমার অজুহাতে পেঁয়াজ ফের আক্রা

এম শাহজাহান ॥ দেশীটির দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির আমদানিকৃত পেঁয়াজ কিনতে ফের দীর্ঘলাইনে যেতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। খুচরা বাজারে যেসব পেঁয়াজ কিনতে এখন ৮০-১৩০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে সেই একই মানের পেঁয়াজ টিসিবি বিক্রি করছে ৩৫ টাকায়। ক্রেতাদের ভরসা এখন আমদানিকৃত চীনা, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ। বাজারে নতুন ওঠা দেশী পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশী পেঁয়াজের দাম আবার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ২ লাখ টন পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এদিকে শুক্রবার হঠাৎ করেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা দাম বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয় দেশী পেঁয়াজ। এতে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। অনেকে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে ভিড় জমান ‘ট্রাকসেল’ কার্যক্রমের সামনে। ফলে দ্রুত টিসিবির পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। এরই ধারবাহিকতায় শনিবার সকাল থেকে টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘলাইন দেখা গেছে ক্রেতাদের। অথচ একদিন আগে টিসিবির ট্রাকগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত পেঁয়াজ সারাদিনেও বিক্রি হয়নি। ক্রেতারা লাইন ছাড়াই যতখুশি ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ী মনির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে দেশী পেঁয়াজের সাপ্লাই কমে গেছে। শ্যামবাজার, কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং ঢাকার মৌলভী বাজারের মতো বড় বাজারগুলোতে চাহিদামতো দেশী পেঁয়াজ নেই। ফলে পাইকারি বাজারেই দেশী পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তিনি বলেন, সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দেশী পেঁয়াজের দাম কমবে না। জানা গেছে, দুদফা বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া বেশি দামের আশায় ক্ষেত থেকে অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলায় এ বছর ফলন কম হয়েছে। চাষীরা আবার দ্রুত পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন। তবে ক্ষেতে বীজ দেয়ার পর পেঁয়াজ পেতে আড়াই থেকে তিন মাসের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়। এবার বেশি দামের আশায় দ্রুত পেঁয়াজ তুলে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজ সঙ্কট পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির চেষ্টা থাকে সব সময়। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির পেঁয়াজ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর গুদামে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ভর্তুকি দিয়ে আনা এসব পেঁয়াজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও অলিগলির দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে দেদার। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-টিসিবির পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কাছে যায় কিভাবে? এদিকে পেঁয়াজের যে সঙ্কট হতে পারে সেব্যাপারে আগাম সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই সময় তিনি জানান, রমজান সামনে রেখে আরও ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ কারণে আগামী রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভোক্তাদের অস্থির না হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকের মাত্র দু’দিনের মাথায় পেঁয়াজের দাম একলাফে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে গেছে। দেশীটির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শনিবার বিকেলে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের পেঁয়াজ। বাজারে আমদানিকৃত চীনা সাদা বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। অথচ একদিন আগেও এই পেঁয়াজ ৬০ টাকায় কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা। খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে বাজার করছিলেন দক্ষিণ শাজাহানপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ আর এ বছর স্বস্তি দিল না। নতুন ওঠা দেশী পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকায় নেমে এলেও আবার তা ১৮০ টাকায় উঠে গেছে। দেশে কি এমন হয়েছে যে হঠাৎ করে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা দাম বেড়ে গেল। তিনি বলেন, মসলা জাতীয় এই পণ্যটি এত ভুগিয়েছে যে, ভোক্তারা অল্পতে ভয় পেয়ে যায়। এদিকে দেশী নতুন ওঠা পেঁয়াজের মৌসুম সামনে রেখে সম্প্রতি টিসিবি কেজিতে ১০ টাকা কমিয়ে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবি থেকে কমদামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। তবে খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে এই দামে সংস্থাটি পেঁয়াজ দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ভোক্তাদের। প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্পটে ৫০টি ট্রাকে করে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি করছে। দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে খোলাবাজারে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। ঢাকার বাইরে দেশের জেলাশহরগুলোতে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু রয়েছে।
×