ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারমুক্ত হলেন জয় ও লেখক

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৫ জানুয়ারি ২০২০

ভারমুক্ত হলেন জয় ও লেখক

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ অবশেষে ‘ভারমুক্ত’ হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তাদের ভারমুক্তির ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরিচিতি পর্বে স্থান পায়নি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির দায়ে অপসারিত সর্বশেষ সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জয়-লেখকের ভারমুক্তির প্রস্তাব তোলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী। ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত যুক্ত আছে। সেটা কেমন দেখায় না? ভার উঠিয়ে দিন। পরবর্ততীতে শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাব করেছেন ছাত্রলীগের দুজনের ভার উঠিয়ে দিতে। ভার উঠিয়ে দিলাম। আজ থেকে তাদের উপর আর ভার নেই, তাদের ভারমুক্ত করে দিলাম। এর মধ্য দিয়ে কোন নিয়মিত সম্মেলন ছাড়াই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পূর্ণ দায়িত্ব পেলেন জয়-লেখক। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির দায়ে অপসারিত হয়েছিলেন সাবেক সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের অব্যাহতি দেয়া হলে শীর্ষ দুই পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান জয়-লেখক। আল নাহিয়ান খান জয় বরিশালের বাবুগজ্ঞ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলী খানের ছেলে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা শুরু করেন বরিশাল জেলা স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্র্তি হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটিতে আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান জয়। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির দায়ে সভাপতি শোভন অপসারিত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন এই ছাত্র নেতা। অন্যদিকে ভারমুক্ত ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন তিনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। শোভন রাব্বানীর কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য। পরে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে গোলাম রাব্বানী অপসারিত হলে সেখানে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন লেখক ভট্টাচার্য। এদিকে অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সব সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পরিচয় করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। কিন্তু সেই পরিচিতি পর্বে স্থান পাননি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির দায়ে অপসারিত সর্র্বশেষ সাবেক দুই শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতা। তারা হলেনÑ সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। উল্লেখ্য, হাইকমান্ডের নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নিমন্ত্রণপত্রও পাননি সাবেক এই দুই নেতা। ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য পরবর্তী সম্মেলনের আগেই বিদায় নিতে হয়েছে এই দুই নেতাকে। শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কর্মসূচী শুরু করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটেন তারা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আরও কিছু কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনের নেতারা। সেগুলো হলোÑ ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা সংলগ্ন বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী; ৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ।
×