ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ, সতর্ক থাকুন ॥ জেপি সম্মেলনে কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৫ জানুয়ারি ২০২০

বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ, সতর্ক থাকুন ॥ জেপি সম্মেলনে কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে বিএনপি বিভেদের দেয়াল সৃষ্টি করেছিল এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হত্যার পরে তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেছিল। শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি (জেপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনে আগামী তিন বছরের জন্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি চেয়ারম্যান ও শেখ শহীদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন মঞ্জু। এতে কাজ হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রতি শেষ পর্যন্ত এরশাদের সমর্থন অব্যাহত ছিল। এর মধ্য দিয়ে এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জোটভুক্ত হয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর পৃথক দল গঠন করেন মঞ্জু। যদিও পরবর্তীতে মঞ্জুও আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দেন এবং পানিসম্পদমন্ত্রী হন। সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেছিল। তাদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিয়েছিল। দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজনীতিতে বিভেদের দেয়াল সেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিতে আজ সৌজন্য বোধ বিরল। দেশের রাজনীতিতে খুবই খারাপ সময় চলছে, এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ, রক্তের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিরোধী দলকে শক্তিশালী হতে হবে। শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া শক্তিশালী গণতন্ত্র হয় না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন কিছু আসন সঙ্কটে ছিল, সে সময় আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জাতীয় পার্টি-জেপি। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছিল। আজ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টি-জেপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এই কথা বলতে চাই-আসুন আমরা এক সঙ্গে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করি। আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে বিতর্কিত করবেন না। নির্বাচনের মাঝপথে পালিয়ে যাবেন না। ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিন। জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এর আগে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও গণতন্ত্রের বিকাশে অপরিহার্য শক্তি। বিরোধী দলকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আওয়ামী লীগের ওপর বিভিন্ন সময়ে আঘাত আসার পরও রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বারবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু বিএনপির অসহযোগিতার কারণে সেই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে সামাজিক অনুষ্ঠান, কারো মৃত্যুর পর জানাজায় যাব কিনা এটা নিয়ে দ্বিধা কাজ করে। কারণ, কে কি মনে করে এটা মাথায় কাজ করে। এ বিষয়গুলো রাজনীতির জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিরোধী দলকেও শক্তিশালী করতে হবে। এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। যা আমরা বিশ্বাস করি তা পালন করি না। এটাও বাংলাদেশের রাজনীতির আরেক বাস্তবতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ একটা অলঙ্ঘনীয় দেয়াল উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দেয়াল আমাদের কর্ম সম্পর্কের পথে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দেয়ালের সৃষ্টি হয়েছে ’৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে যারা ছিল ইতিহাস থেকে তাদের সেই ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাস লেখার উপায় নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২১ আগস্টেও গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। কারা তখন ক্ষমতায়, কারা প্ল্যানার, কারা মাস্টারমাইন্ড, সবাই তা জানে। তারপরও এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল কীভাবে ভাঙব। আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না। এতকিছুর পরও খালেদা জিয়ার সন্তানের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন, কিন্তু দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের আগে শেখ হাসিনা গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে। তিনি ঘৃণাভরে গালাগাল করে যে ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন আপনার কি তা শোনেননি? এ সময় ওবায়দুল কাদের ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আছে। রক্তের গন্ধ আছে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। জেপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে আগামী তিন বছরের জন্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি চেয়ারম্যান ও শেখ শহীদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহিমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং শাহ্ রফিকুল বারী চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ মল্লিককে কমিশনার করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
×