ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন

আজ পুলিশ সপ্তাহ শুরু রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উৎসব

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৫ জানুয়ারি ২০২০

আজ পুলিশ সপ্তাহ শুরু রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উৎসব

শংকর কুমার দে ॥ আজ ৫ জানুয়ারি, পুলিশ সপ্তাহ-’২০। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দাবি দাওয়া নিয়ে বসবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহ এলেই পুলিশের দাবি দাওয়া থাকে প্রতিবছরই। বিগত বছরগুলোয় পুলিশ কর্মকর্তার অনেক দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিদায়ী পুলিশ সপ্তাহে যেসব দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার পরও বাস্তবায়ন হয়নি, সেসব পুরনো দাবি দাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার পুনরাবৃত্তি হবে আবার। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের অনেক দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছেন, অনেক উন্নয়ন হয়েছে পুলিশের। এ জন্য পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানানো হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আজ ৫ জানুয়ারিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-’২০ অনুষ্ঠানে এবারের পুলিশ পদক পেতে যাচ্ছেন ১১৮ জন। বিদায়ী ’১৯ সালে সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য এসব পদক দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন ও প্যারেড পরিদর্শন শেষে পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল নয়টায় রাজারবাগ ঢাকা মেট্রোপলিটনস পুলিশ লাইন্সে হবে পুলিশ প্যারেড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাদন গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে রয়েছে সোয়া আটটায় অতিথিবৃন্দের আগমন, সকাল আটটা ২০ মিনিটে প্যারেডের স্থান গ্রহণ, আটটা ৫৯ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর আগমন, নয়টায় প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন গ্রহণ, প্যারেড পরিদর্শন শেষে পদক বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, প্যারেড মার্চ আউট। সকাল দশটায় আপ্যায়ন ও প্যারেডের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, চার ক্যাটাগরিতে এবার পুলিশ পদক দেয়া হচ্ছে। চারাটি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক-সেবা’ (বিপিএম-সেবা), ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক-সাহসিকতা’ (বিপিএম-সাহসিকতা), ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-সেবা’ (পিপিএম-সেবা) এবং ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-সাহসিকতা’ (পিপিএম সাহসিকতা)। এবার ১৪ জনকে দেয়া হচ্ছে বিপিএম সেবা, ২৮ জনকে বিপিএম সাহসিকতা, পিপিএম সেবা ২০ ও পিপিএম সাহসিকতা ৫৬। ’১৯ সালে ৩৪৯ পুলিশকে পদক দেয়া হয়। এবার পুলিশ পদক দেয়া হচ্ছে ১১৮ জনকে। আগের বছরের তুলনায় এবার ২৩১ জন কম পুলিশ পদক পাচ্ছেন। আগের বছর নির্বাচনী বছর উপলক্ষে পদকপ্রাপ্তদের সংখ্যা বেড়েছিল। এ বছর মাঠ পর্যায়ে পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে ১১৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে পদক দেয়া হচ্ছে। ’১৮ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১৮২ জনকে পদক দেয়া হয়। ’১৭ সালে পদক দেয়া হয় ১৩২ জনকে এর আগের বছর ’১৬ সালে পদক দেয়া হয় ১২২ জনকে, ’১৫ সালে ৮৬ ও ’১৪ সালে ১০৫ পুলিশকে পদক দেয়া হয়। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, আজ সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন, পুলিশ প্যারেড পরিদর্শন, পুলিশ পদক বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স সাজ সাজ রবে সজ্জিত। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যেসব দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়ার পরও বাস্তবায়ন হয়নি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবার তুলে ধরবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, দাবি দাওয়া পূরণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ও বাস্তবায়নের নির্দেশের পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক দাবি দাওয়ার আটকে আছে মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়াও পুলিশ সরকারী কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বে অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে অনেক বৈষম্য রয়েছে, যা এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো যাতে বাস্তবায়ন হয় সেই যৌক্তিতার বিষয়টি সামনে আনা হবে। ২০১৭ সালের আগে পরিদর্শক থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম কেনার টাকা দিত সরকার। ’১৭ সালে পরিদর্শক থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের বছরে দুটি পোশাক দেয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। দাবিটি মেনে নিয়ে কয়েক বছর ধরে তাদের দুটি ইউনিফর্ম দেয়া হচ্ছে। এই দাবি যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। পুলিশের এই দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি পুলিশ কর্মকর্তারা। ১৬ থেকে ২০১৯ সাল এই ৪ বছরে অনেক দাবি দাওয়া তুলে ধরেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এসব দাবি দাওয়ার কথা শুনে তা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদায়ী পুলিশ সপ্তাহ-’১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা যেসব দাবি জানিয়েছিল তার মধ্যে আছে পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স বানানো। সদর দফতরের ডেভেলপমেন্ট-২ শাখা সবেমাত্র উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ করছে। ডিপিপি তৈরির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এরপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যাবে এই প্রস্তাব। এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খুব দ্রুত নিজস্ব স্পোর্টস কমপ্লেক্স পাচ্ছে না পুলিশ। সূত্র মতে, বিদায়ী পুলিশ সপ্তাহ-’১৯ সালে পুলিশ সদস্যদের পরিবারের আজীবন (দুই সদস্যের, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত) পারিবারিক রেশন সুবিধা চাওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের এই প্রস্তাব মেনে নেন। বর্তমানে এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে। এছাড়াও দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তাদের পারিবারিক রেশন দেয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিহত হওয়া কর্মকর্তাদের এই সুবিধা পান না। যদিও তাদেরও এই সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তবে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৯ সালে পুলিশের বিশেষ ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের কথা থাকলেও এই প্রস্তাবটিও স্বরা¿ মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় ঝুলে আছে। দীর্ঘদিনের দাবির পর অর্থ বিভাগ রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি ও মিরপুরের স্টাফ কলেজে কর্মরত ও পদায়িত বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারদের শর্তসাপেক্ষে ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা দিতে সম্মতি জানায়। এছাড়া জাতীয় বেতন স্কেল ১৫ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব মেনে নেয় সরকার। তবে এটাও বাস্তবায়িত হয়নি। এটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে। পুলিশ ৩৬৫ দিনে ২৪ ঘণ্টা করে দেশের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারী সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ ভাতা পেলেও কেবল পুলিশের বিসিএস ক্যাডারদের ভাতা দেয়ার বিষয়টি বৈষম্যমূলক। কর্তব্যরত অবস্থায় কোন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হলে তিনি ৫ লাখ টাকা পান। অথচ চাকরিরত অবস্থায় (ছুটিতে থাকলেও) কোন সরকারী কর্মকর্তা যদি মারা যান, তাহলে তাকে ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা এটিকে ‘চরম বৈষম্যমূলক’ বলে মনে করেন। এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা অবশ্য আলোচনা করবেন। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতির জন্য ’১৭ ও ’১৮ সালে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ১০ তলা ভবন করার প্রস্তাব ছিল পুলিশের। সরকার এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কন্সালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। একই বছর পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট ও এএসআইদের সরকারী কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ক্রয়ে স্বল্প সুদের কিস্তির বা ঋণের প্রস্তাব ও জ্বালানি ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এটি আটকে আছে পুলিশের ট্রান্সপোর্ট ও অডিট শাখায়। যদিও পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় বাহিনী সদস্যরা সেখান থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক কর্মকর্তা যোগ্য হলেও পদ না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না বলে কথা উঠেছিল। এজন্য পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে পদ সৃষ্টির জন্য ’১৮ সাল থেকেই দাবি তোলা হয়। এই কার্যক্রম ‘চলমান’, পুলিশ সদর দফতর এমন মন্তব্য করলেও ’১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ সৃষ্টি করা হয়নি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ বছর আগে পুলিশে পাঁচটি পদকে গ্রেড-১ পদ অনুমোদনের দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি মেনে নেয়া হলেও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা হয়নি। পাঁচটি পদের মধ্যে এডিশনাল আইজি এবং এডিশনাল আইজি-এসবিকে গ্রেড-১ পদে উন্নীত করা হয়। র‌্যাবের ডিজি, সিআইডির সাবেক এডিশনাল আইজি, সাবেক ডিএমপি কমিশনারকে উন্নীত করা হয় নিউমারারি (গ্রেড-১) পদে। পুলিশের নিউমারারি পদে উন্নয়নের বিষয়টি দাবি দাওয়া পূরণের বিরাট অগ্রগতি ও সাফল্য। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, বিদায়ী পুলিশ সপ্তাহ-’১৯ সালে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের সব দাবি গুরুত্ব দিয়ে শোনেন এবং তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে আজীবন পেনশন সুবিধা, বিশেষ ভাতা, ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন, আলাদা মেডিক্যাল কলেজ ও কোর ইত্যাদি। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে বিদায়ী পুলিশ সপ্তাহের সভায় বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাবি দাওয়া উত্থাপন করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এতে স্বাগত বক্তব্য দিয়েছিলেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ সভায় কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার পুলিশরা তাদের দাবি দাওয়া, সমস্যা ও বৈষম্যের কথা বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এবারের পুলিশ সপ্তাহে যেসব দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি তা আবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে।
×