ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৬ কাস্টমস হাউসের ৫টিতেই ঘাটতি;###;হাউসগুলোর মোট ঘাটতি ১১ হাজার ৮শ কোটি টাকা ;###;চট্টগ্রাম কাস্টমসে ঘাটতি ৯ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৫ জানুয়ারি ২০২০

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অধিকাংশ কাস্টম হাউসের ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে দেশের ৬ কাস্টম হাউসের মধ্যে ৫টিই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পরেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এই ৫ কাস্টমস হাউসের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮শ কোটি টাকা। শুধু ব্যতিক্রম আইসিডি কমলাপুর। আলোচ্য সময়ে আইসিডির রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯৪ কোটি টাকা বেশি। আর দেশের প্রধান কাস্টম হাউস চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে নিম্নগতি বিরাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজস্ব আদায়ে শুধু আয়কর ছাড়া অন্য খাতে তেমন বাড়ছে না রাজস্ব আদায়। জিরো শুল্ক ও অব্যাহতির কারণে কাস্টম হাউসগুলোর রাজস্ব আদায়ে এর প্রভাব পড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অধিকাংশ কাস্টম হাউস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম ছিল আইসিডি কমলাপুর। আলোচ্য সময়ে কমলাপুর আইসিডির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু দেশের প্রধান কাস্টমস হাউস চট্টগ্রামে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। ঘাটতির দিক দিয়ে এর পরে অবস্থানে রয়েছে বেনাপোল কাস্টমস। আলোচ্য সময়ে বেনাপোল কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কাস্টমস নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সৈয়দ মোঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার মূল কারণ আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। আর দেশের শিল্পায়নের জন্য আমদানি পর্যায়ে কিছু অব্যাহতি দেয়া ছিল। যেমন- মোটরসাইকেল, গাড়ি যারা দেশে তৈরি করবে তাদের কিছু সুবিধা আগেই দেয়া ছিল। এ খাত থেকে আগে ভাল রেভিনিউ আসত, এখন তা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বৈশি^ক অর্থনীতির নিম্নগতি রয়েছে যার প্রভাব আমদানিতে পড়েছে। তবে আমরা কাস্টমস হাউসগুলোর মনিটরিং জোরদার করছি। কেউ যাতে আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি না দিতে পারে বলে জানান এনবিআরের এই উর্ধতন কর্মকর্তা। সূত্র আরও জানায়, ঘাটতিতে রয়েছে দেশের অন্যতম আরেক কাস্টমস হাউস মংলা। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯৩ কোটি টাকা। ঢাকা কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকা। আর রাজধানীর অদূরে জুলাই-১৯ থেকে ডিসেম্বর-১৯ পর্যন্ত পানগাঁও কাস্টমস হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে ঘাটতি ৩৩৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কাস্টমস হাউসগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে আমদানি কমে যাওয়া। অব্যাহতির কারণেও কাস্টম হাউসগুলোর রাজস্ব কমছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
×