ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান যেভাবে সোলাইমানি হত্যার জবাব দিতে পারে

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৫ জানুয়ারি ২০২০

ইরান যেভাবে সোলাইমানি হত্যার জবাব দিতে পারে

জেনারেল কাশেম সোলাইমানির ওপর মার্কিন হামলা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। ইরানের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী বিভিন্ন হুমকির কয়েক মাস পর এ হত্যার ঘটনা ঘটল। ইরান কিভাবে এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে এখন সেই প্রশ্ন এখন সবার। এপি। দীর্ঘদিন চলা উত্তেজনা নতুন মাত্রা পাওয়ার পর সোলাইমানি হত্যার বদলা নেয়ার জন্য অনেক পথই খোলা আছে ইরানের সামনে। পার্সিয়ান উপসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজকে চ্যালেঞ্জ জানানো, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো বা অসমর্থিত প্রক্সি বাহিনী মোতায়েন করা থেকে শুরু করে ইরান তার দীর্ঘ-অনুমোদিত বা অনুমোদিত সনাতনী বাহিনীকে সুসজ্জিত করার জন্য যে কোনও বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন বলছেন, ‘সমর কৌশলে সোলাইমানির মস্তিষ্ক ছিল ক্ষুরধার। ফলে তাকে কখনও হত্যা করা হলে কী করতে হবে তেমন পরিকল্পনাও হয়ত তিনি করে রেখে গেছেন। ইরান যে এর জবাব দেবে, তা নিশ্চিত। সোলাইমানি এতদিন ধরে দেশের বাইরে ইরানের যে প্রভাব তৈরি করেছেন, তা টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা করবে।’ ইরানের সম্ভাব্য একটি লক্ষ্যস্থল হতে পারে সিরিয়ায় ছোট মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান উপযুক্ত সময় ও স্থানের অপেক্ষা করতে পারে। আপাতত সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কন্টিনজেন্টগুলো ইরানী হামলার শিকার হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন স্বার্থ ও নাগরিকরা হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এই পরিস্থিতি চলতে পারে বছরের পর বছর ধরে। ইরান হয়ত এমন একটি বার্তা দিতে চাইবে যে মার্কিন নাগরিকরা কোথাও নিরাপদ নয়। গতবছর মে মাসে পার্সিয়ান সাগরে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে নির্দেশ দেয় হোয়াইট হাউস। এর কিছুদিন পর হরমুজ প্রণালীতে তেল ট্যাঙ্কারে হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের মে’তে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের করে আনে। এরপর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন রেষারেষির পর সোলাইমানির হত্যার ঘটনা ঘটল। ইরানের প্রচলিত সামরিক শক্তি সীমিত। ইরানের হাতে রয়েছে বিপ্লব পূর্ববর্তী আমেরিকান এফ-৪এস, এফ-৫এস ও এফ ১৪এস যুদ্ধ বিমান। এর সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য সোভিয়েত আমল এবং ফরাসী ও পুরাতন বিমান। এসব বিমান অত্যাধুনিক মার্কিন ও ইসরাইলী সমরাস্ত্রের সামনে কতটা টিকতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। মার্কিন হামলায় ইরানী কমান্ডার নিহত হওয়ার পর অনেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলতে শুরু করেছেন। বিবিসির সাংবাদিক লুইস আলকট এর সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন। তিনি মনে করেন বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চীন বা রাশিয়ার মতো শক্তিকেও এ জটিলতায় জড়াতে হবে। তবে আপাতত এ নাটকে তারা মুখ্য চরিত্র নয়। তবে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটবে, সে বিষয়ে আলকটেরও কোন সন্দেহ নেই। স্বাভাবিকভাবেই ইরান প্রতিশোধ নিতে চাইবে এবং তাতে ধারাবাহিকভাবে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ আসবে। সোলেমানি ও মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ এড়ানোর সেই চেষ্টা আরও কাজ করবে বলে মনে করছেন না বিবিসির সাংবাদিক লিস ডুসেট। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন মিত্র দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর সৈন্য ও সমরাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে।
×