ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে মধ্যপ্রাচ্য

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২০

দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে মধ্যপ্রাচ্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছেন। তবে শুক্রবার ইরাক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে কার্যত অন্তঃহীন যুদ্ধের পথে ঠেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। এই হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের প্রকৃত বৈদেশিক নীতি প্রকাশ পেয়েছে। কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। জাতিসংঘ, রাশিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশ এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা বলেছে। মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে অনেক বিশ্বনেতা আশঙ্কা করেছেন। এ বিষয়ে বারাক ওবামা প্রশাসনে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা নেড প্রাইস বলেন, জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী উত্তেজনার মধ্যে জড়িয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনায় জড়ানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের নিজের কথার মধ্যেই বৈপরীত্য প্রকাশ পেল। কারণ তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বারবার উত্তেজনা প্রশমিত করার কথা বলেছেন। তবে গতবছর হঠাৎ করে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত বিশ্ব শক্তিধর দেশগুলোর পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন ট্রাম্প। মূলত তার ওই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই ইরাক-যুক্তরাষ্ট্র ফের উত্তেজনা শুরু। সোলাইমানির হত্যা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বাধাতে নয়, যুদ্ধ থামাতে তাকে (সোলাইমানি) হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, এই হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে ‘ত্রাসের রাজত্বের পতন হয়েছে। ফ্লোরিডায় মার-আ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি নিখুঁত অভিযান পরিচালনা করেছে, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী কাশেম সোলাইমানির মৃত্যু হয়েছে।’ ‘সোলাইমানি খুব শীঘ্রই আমেরিকান কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর বিদ্বেষপূর্ণ হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু আমরা তাকে সেই প্রক্রিয়ার মাঝেই ধরে ফেলেছি এবং তাকে শেষ করে দিয়েছি। এই হত্যাকা-ের প্রেক্ষাপটে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পূর্বসতর্কতা হিসেবে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা সদস্য পাঠাচ্ছে। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, এই হামলায় যারা কলকাঠি নেড়েছেন-তাদের ওপর চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে। সোলাইমানির স্মরণে তিনদিনের শোক পালনের ঘোষণা দেন তিনি। এই শীর্ষ জেনারেল নিহতের খবর গণমাধ্যমে আসতেই মার্কিন পতাকা দিয়ে একটি টুইট পোস্ট করেন ট্রাম্প। ইরানের শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি কাশেম সোলাইমানি। তার কুর্দস বাহিনী সরাসরি দেশটির প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে রিপোর্ট করে। ইরান সমর্থিত ইরাকী মিলিশিয়া গ্রুপ পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস বলেছে, কাশেম সোলাইমানি ও ইরাকী মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হয়েছেন। কাশেম সোলাইমানির নিহতের খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার এক লাফে তেলের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে, ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক অভিযানে জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের ভবিষ্যত আক্রমণের পরিকল্পনা বানচাল করতে এই হামলা চালানো হয়। সারাবিশ্বে মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের বিপ্লবী রেভ্যুলুশনারি গার্ডস সোলাইমানিকে ইসলামের গৌরবান্বিত কমান্ডার আখ্যা দিয়ে বলেছে, একটি মার্কিন এমকিউএক্স-৯ ড্রোন বিমান থেকে এই হামলা চালানো হয়। কয়েকদিন আগে বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করার পর মার্কিন সেনাদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরে এই হামলার ঘটনা ঘটল। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন কোন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ তারা বরদাস্ত করবে না। এ সময় মার্কিন দূতাবাসে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেন এসপার। তিনি আরও বলেন, আমাদের ওপর কোন হামলা হলে তার জবাব আমাদের পছন্দের জায়গায় ও যথাসময়ে দেয়া হবে। ইরানী শাসন ব্যবস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন তাদের হঠকারি কার্যক্রম বন্ধ করে। ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সোলেইমানি হত্যার ঘটনাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় জারিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হঠকারিতার ফল ভোগ করবে। ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজাই বলেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেবে। কাশেম সোলাইমানি ১৯৯৮ সাল থেকে কুদর্স ফোর্সের নেতৃত্ব ছিলেন। এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে থাকে। ১৯৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন করার সময় কাশেম সোলাইমানি পরিচিতি লাভ করেন। -এপি
×