ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টানা দ্বিতীয় ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ১২:১১, ৪ জানুয়ারি ২০২০

টানা দ্বিতীয় ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

রুমেল খান ॥ টানা দ্বিতীয় বারের মতো ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে শক্তিশালী বসুন্ধরা কিংস। শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে তারা ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবকে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ আসরেও ফাইনালে উঠেছিল ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। তবে সেবার তারা আবাহনী লিমিটেডের কাছে ৩-১ গোলে হেরে গিয়েছিল। আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সেমির ম্যাচে কিংসই পরিষ্কার ফেবারিট ছিল। পুলিশ ছিল আন্ডারডগ। তবে প্রথমার্ধে পুলিশ বেশ ভালই খেলেছিল। দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরা ক্রমশ আধিপত্য বিস্তার করে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পুলিশের ভরসা মার্কিন ফরোয়ার্ড সিডনি রিভেরাকে এদিন বোতলবন্দী করে রেখেছিল কিংসের রক্ষণভাগ। তবে নবাগত দল হিসেবে যথেষ্ট ভালই খেলেছে পুলিশ। ৯ মিনিটে বসুন্ধরার গোলপোস্টের ৩৫ গজ দূরে ফ্রি কিক পায় পুলিশ। দলটির বুলগেরিয়ান ফরোয়ার্ড লাসকোভ আন্তোনিও উঁচু শট নেন। বলটি পোস্টে ঢুকে যাবার আগ মুহূর্তে বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো কোনমতে ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান। ১১ মিনিটে একটি গোল করে বসুন্ধরা। কিন্তু বক্সের ভেতরে ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের চমৎকার বাইসাইকেল কিকের শট জালে জড়িয়ে যায়। কিন্তু রেফারি সুজিত ব্যানার্জি চন্দন তা অফসাইড বলে বাতিল করেন। ১৫ মিনিটে পেনাল্টি লাভ করে কিংস। বল নিয়ে কলিনড্রেস বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়লে তাকে ফাউল করে ফেলে দেন পুলিশের ডিফেন্ডার খান মোঃ তারা। রেফারি তারাকে হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে ডান পায়ে ঠা-া মাথায় গোল করে কিংসকে এগিয়ে দেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ (১-০)। গোলরক্ষক হিমেল বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। ২৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ হারায় কিংস। কলিনড্রেসের পাস পেয়ে বাঁপ্রান্ত দিয়ে পুলিশের বক্সে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। এদিকে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন পুলিশ গোলরক্ষক হিমেল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বলটি বেশি ওপর দিয়ে পোস্ট অতিক্রম করলে গোলবঞ্চিত হয় কিংস। ৪৭ মিনিটে পুলিশের ডি-বক্সের বাইরে কলিনড্রেসের পাস পেয়ে বক্সে ঢুকে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে তাজিক ডিফেন্ডার আখতাম নাজারোভ বাঁ পায়ের উঁচু শট নিলে তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫০ মিনিটে সতীর্থ ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের কাছ থেকে পাস পেয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় পুলিশের বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন কলিনড্রেস। বক্সে ঢুকেই গোলরক্ষক হিমেলকে একা পেয়ে যান। হিমেল বল ধরার জন্য পজিশন নিয়ে নেন। একই সঙ্গে কলিনড্রেসও ডান পায়ের জোরালো-উঁচু কৌণিক শট নেন। সেই শট হিমেলের হাতে লাগলেও তা জালে জড়িয়ে যায়। ব্যবধান দ্বিগুণ করে কিংস (২-০)। ৬০ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে কলিনড্রেসের উড়ন্ত ক্রস করেন। সেই বল হেড করেন তপু বর্মণ। কিন্তু তার ড্রপ হেড সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ের শুরুর দিকেই দারুণ একটা গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তাদের। ডানপ্রান্ত থেকে পুলিশের আমেরিকান ফরোয়ার্ড সিডনি রিভেরা যে শটটি নেন তা অল্পের জন্য খুঁজে পায়নি জাল। দ্বিতীয়ার্ধের সংযুক্তি সময়ে (৯০+২ মিনিটে) পুলিশের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়ে আরেকটি গোল করে কিংস। পুলিশের বক্সের ভেতরে জটলার মধ্য বল পেয়ে বাঁ পায়ের উঁচু-জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস দেলমন্তে (৩-০)। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে যাবার চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। দুই দলই নবাগত। তবে শক্তির বিচারে এক দল খুবই শক্তিশালী। এক মৌসুম আগে আত্মপ্রকাশ করে (২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়) বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এবং স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে জানান দিয়েছিল নিজেদের আগমনী বার্তা। অপর দলটি এবারই প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লীগে খেলবে। দলটির নাম বসুন্ধরা কিংস। অপর দলটি বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। তারা বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাথলেটিক ক্লাব নামেও পরিচিত। ক্লাবটি ঢাকায় অবস্থিত ও বাংলাদেশ পুলিশের অর্থায়নে পরিচালিত। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে সার্ভিসেস দলটি খেলেছিল। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লীগে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় পুলিশ এফসি। চলতি আসরে এ-গ্রুপে পুলিশ তাদের প্রথম ম্যাচে আবাহনীর কাছে ৪-০ গোলে হেরে যায়। পরের ম্যাচে ৩-১ গোলে আরামবাগকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টারে ওঠে। সেখানে তারা ৩-১ গোলে হারায় সাইফকে। পক্ষান্তরে বি-গ্রুপেও রানার্সআপ হয় কিংস। সেখানে তারা ১-০ গোলে ব্রাদার্সকে হারায় ও ২-০ গোলে হেরে যায় চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। কোয়ার্টারে তারা টাইব্রেকারে ৪-১ (১-১) গোলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে হারায়।
×