ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষে উঠল ঢাকা

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৪ জানুয়ারি ২০২০

খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষে উঠল ঢাকা

মিথুন আশরাফ ॥ যে দল জিতবে, তাদেরই ১২ পয়েন্ট হয়ে যাবে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে যাবে। ‘প্লে-অফ’ খেলার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে যাবে। এমন ম্যাচে পেসার হাসান মাহমুদের (৪/৩২) অসাধারণ বোলিংয়ে খুলনা টাইগার্সকে ১২ রানে হারায় ঢাকা প্লাটুন। ১২ পয়েন্ট পেয়ে রানরেটে এগিয়ে থেকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে যায় ঢাকা। হারলেও ১০ পয়েন্ট থাকা খুলনার ‘প্লে-অফ’ খেলার সম্ভাবনা এখনও ভালভাবেই আছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় খুলনা। ঢাকা ব্যাটিংয়ের সুযোগটি কাজে লাগায়। ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭২ রান করে। আসিফ আলী শেষে ব্যাটিং ঝড় তুলে ১৩ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৩৯ রান করেন। মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ রান। আরিফুল হকও (৩৭*) দ্যুতি ছড়ান। মোহাম্মদ আমির (২/২৭) ছাড়া আর কোন বোলারই বিশেষ নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। ১৭৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মুশফিকুর রহিমের (৬৪) ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের কাছে চলে যায় খুলনা। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬০ রান করতে পারে। হাসান মাহমুদের বিধ্বংসী বোলিংয়েই আসলে শেষ পর্যন্ত হার হয় খুলনার। খুলনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের যে কী হলো? বল হাতে এবার বিপিএলে নজর কাড়তে পারছেন না। শুক্রবার ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নেমেও ৪ রানেই আউট হয়ে গেছেন। খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন লেগ স্পিনার আমিনুল। তার আউটের পর তো টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে খুলনার। যেখানে ঢাকার ওপেনিং জুটি থেকেই ৪৫ রান আসে, সেখানে ৪৪ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। আমিনুলের পর মেহেদী হাসান মিরাজ (১৫), শামসুর রহমান শুভ (৩), রাইলি রুশোও (১৮) আউট হয়ে যান। মহাবিপদে পড়ে যায় খুলনা। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, নজিবুল্লাহ জাদরান, রবি ফ্রাইলিঙ্কই ভরসা হয়ে থাকেন। রানের গতি এতটাই দুর্বল থাকে যে ১০ ওভারে গিয়ে ৫৮ রান করে খুলনা। মুশফিক ও নজিবুল্লাহ মিলে হাল ধরেন। বিপদ দূর করেন। একটু থিতু হয়ে দুইজনই মারমুখী ব্যাটিং করেন। জিততে হলে যে এর বিকল্প কোন পথই খোলা থাকেনি। ১০ ওভারে ৫৮ রান করা মানে পরের ১০ ওভারে জিততে হলে ১১৫ রান করতে হবে। মুশফিক ও নজিবুল্লাহ মিলে দলকে ১০০ রানেও নিয়ে যেতে থাকেন। যখনই ১০০ রান পূরণ হয়, তখনই নজিবুল্লাহ (৩১) রান আউট হয়ে যান। ৯৯ রান হওয়ার পর ১ রান নিয়ে আরেক রান নিতে গিয়ে রান আউট হন নজিবুল্লাহ। মুশফিকের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন নজিবুল্লাহ। দলকে একটা অবস্থানে রেখে যান। তবে জয়ের জন্য তখনও ৩২ বলে ৭৩ রান লাগে। বিপত্তিতেই পড়ে যায় খুলনা। হারের সম্ভাবনাতেও আটকা পড়ে। রবি ফ্রাইলিঙ্ক (৬) নেমে যখন দলের ১২৫ রানেই সাজঘরে ফিরেন তখন জয়ের আশাই শেষ হয়ে যায়। মুশফিক একাই যতটা পারেন দলকে টানতে থাকেন। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন মুশফিক। দলকে জয়ের কাছেও নিয়ে যান। খেলা জমিয়ে তুলেন। যখন ১২ বলে ৩৬ রান লাগে তখন দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারে প্রথম বলে চার ও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান মুশফিক। রান আর বলের পার্থক্য কমিয়ে আনেন। কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান মুশফিক। আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রান করেন। যখন দলের জিততে ৮ বলে ২৪ রানের দরকার থাকে, তখন মুশফিক আউট হয়ে যান। জয়ের একেবারে কাছে নিয়ে গিয়ে মুশফিকের আউটে জয়ের ক্ষীণ আশাও শেষ হয়ে যায় খুলনার। হাসান মাহমুদ একাই ৪ উইকেট শিকার করে নেন। মিরাজ, রুশো, ফ্রাইলিঙ্ককে আউটের পর মুশফিককেও আউট করেন হাসান। গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট তুলে নেন। শেষ ওভারে জিততে ২২ রান লাগে খুলনার। শেষ ওভারে ৯ রান আসে। আবার মোহাম্মদ আমিরও (৫) আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত খুলনা ১৬০ রান করতে পারে। ঢাকার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় মিলে বড় জুটি গড়ার আশা দেখান। কিন্তু ৪৫ রান হতেই তামিম (২৫) আউটের পর ব্যাটিং ধস নামে। ৬২ রানেই আরও তিন উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। বিজয় ও মেহেদী হাসান দ্রুতই সাজঘরে ফিরেন। এমন ধস আটকাতে একটি বড় জুটির দরকার লাগে। মুমিনুল হক ও আরিফুল হক মিলে সেই জুটি গড়েন। ধস থামান। দুইজন মিলে দলকে ১১৮ রানে নিয়ে যান। ৫৬ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি দলকে ভাল একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এমন সময় মুমিনুলকে আউট করে দেন পাকিস্তান পেসার আমির। ততক্ষণে ১৭তম ওভারে খেলা চলে যায়। মনে করা হয়, ১৫০ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আসিফ ব্যাট হাতে নেমে এমনই ধামাকা দেখান, মুহূর্তেই রান বাড়তে থাকে। রানের গতি এতটাই বেশি থাকে শেষ পর্যন্ত ১৭২ রানে চলে যায় ঢাকা। আরিফুল একদিক আঁকড়ে থাকেন। সুযোগ পেলে ছক্কাও হাঁকান। আরেকদিকে ব্যাটিং ঝড় তুলেন আসিফ। শফিউল ইসলামের করা ইনিংসের শেষ ওভারে তো আসিফ তিন ছক্কা হাঁকান। ওভারটিতে একাই ২০ রান নিয়ে ফেলেন। তাতে ১৩ বলেই অপরাজিত ৩৯ রান করে মাঠ ছাড়েন আসিফ। আরিফুলও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। মুমিনুল আউটের সময় ২৫ রানে থাকেন। সেখান থেকে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন আরিফুল। দুইজন মিলে ৫৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও গড়েন। সেই জুটি আসে ২১ বলে। এর মধ্যে আসিফই ৩৯ রান করেন। শেষ মুহূর্তে পাকিস্তান ব্যাটসম্যান আসিফের ব্যাটিং ঝলকেই এত বড় স্কোর গড়ে ঢাকা। তাতে জয়ও মিলে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে যায় ঢাকা প্লাটুন। স্কোর ॥ ঢাকা প্লাটুন-খুলনা টাইগার্স ম্যাচ- সিলেট টস ॥ খুলনা টাইগার্স (ফিল্ডিং)। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ১৭২/৪; ২০ ওভার; তামিম ২৫, বিজয় ১৫, মুমিনুল ৩৮, মেহেদী ১, আরিফুল ৩৭*, আসিফ ৩৯*; আমির ২/২৭। খুলনা টাইগার্স ইনিংস- ১৬০/৮; ২০ ওভার; মিরাজ ১৫, আমিনুল ৪, রুশো ১৮, শামসুর ৩, মুশফিক ৬৪, নজিবুল্লাহ ৩১, ফ্রাইলিঙ্ক ৬, শহিদুল ৬*, আমির ৫; হাসান ৪/৩২। ফল ॥ ঢাকা প্লাটুন ১২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ হাসান মাহমুদ (ঢাকা প্লাটুন)।
×