ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে হচ্ছে প্রতি ইউনিয়নে উন্নয়নের রূপরেখা

এলজিএসপির অগ্রযাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এসডিজি অর্জন

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৪ জানুয়ারি ২০২০

এলজিএসপির অগ্রযাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এসডিজি অর্জন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া ॥ মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন এখন চোখে পড়ছে বহির্বিশ্বে। প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিচের ধাপ থেকে ওপরের দিকে যাচ্ছে। সাধারণের চাহিদার ভিত্তিতেই তৈরি হচ্ছে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উন্নয়নের রূপরেখা। বাস্তবায়ন করছে সরকারের লোকাল গবর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে নারীদের দ্বারা প্রণীত সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের স্কিমে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের শতভাগ সফলতার ধারাবাহিকতায় এলজিএসপির তৃতীয় পর্যায় চলমান। শেষ হবে ২০২১ সালে। সূত্র জানায়, সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় এলজিএসপির চতুর্থ পর্যায়ের কাজ শুরু হতে পারে ২০২২ সালে। প্রতিটি পর্যায়ের মেয়াদ ৫ বছর। বর্তমানে দেশের ৪ হাজার ৫শ’ ৫০ ইউনিয়নের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ে আটটি বিভাগ থেকে দুটি করে ১৬ পৌরসভা যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ^ ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে এলজিএসপির তৃতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া যায় ৫ হাজার ৫শ’ ৩৫ কোটি টাকা। দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনকে এগিয়ে নিতে এলজিএসপি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এই বিষয়ে বগুড়া জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সুফিয়া নাজিম জানান, এলজিএসপির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জন প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বরে কল করলে দ্রুত সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। এলজিএসপি কার্যক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাদ্দ মেলে। প্রতিটি স্কিম গ্রহণ করা হয় জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওয়ার্ড সভায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। ওয়ার্ড সভাগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে। তারপর উপজেলা পরিষদের সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রকল্প পাস করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নে এলজিএসপি বড় ভূমিকা রেখে এসডিজির ৫ম অধ্যায় পূরণে সহযোগী হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি উন্নয়ন মনিটরিং ও অডিটের জন্য রয়েছে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট। মাঠ পর্যায়ে আছে প্রতিটি জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক। সঙ্গে আছেন জেলা ফ্যাসলিটেটর (ডিএফ)। এলজিএসপির কর্মসূচীতে যে ইউনিয়নে অডিট আপত্তি থাকবে সেই ইউনিয়নে বাৎসরিক বরাদ্দের ২৫ শতাংশ দেয়া হবে। আপত্তি নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাকি ৭৫ শতাংশ দেয়া হবে। এভাবে প্রতিটি ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজে জবাবদিহিতা এসেছে। প্রতিটি ইউনিয়নের ভাল কর্মকা-ের ওপর ৪০ নম্বর বরাদ্দ আছে। যে ইউনিয়ন পারফর্মেন্সে ৪০ নম্বর পাবে তাদের উন্নয়নে বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হবে। বগুড়ার ১শ’ আটটি ইউপির মধ্যে ৮২ ইউপির পারফর্মেন্স ভাল। বাকিগুলো ভাল করছে। বগুড়ায় চলতি বছর ১শ’ আটটি ইউপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রতিটি ইউনিয়নে বরাদ্দ মেলে জনসংখ্যা ও আয়তনভেদে ২০ লাখ টাকা থেকে ৩৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। বরাদ্দের অর্থ প্রতিটি ইউনিয়নের ব্যাংকের হিসেবে যোগ হয়। গেল বছর বগুড়ার ইউপিগুলোতে ২ হাজারেরও বেশি স্কিম বাস্তবায়িত হয়েছে। এলজিএসপির অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় উন্নয়ন কর্মকা- দেখে। প্রথমে দেয়া হয় মৌলিক থোক বরাদ্দ (বিবিজি)। এই অর্থে সফল উন্নয়ন দেখাতে পারলে পরবর্তী সময়ে আরেকটি বরাদ্দ মেলে যা দক্ষতাভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি)। একটা সময় যে গ্রামের রাস্তা এবড়ো-খেবড়ো থাকায় হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছতে পারত না তারা এখন সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছে। প্রসূতি মাতা সুস্থ শিশুর জন্ম দিয়ে মা ও শিশু নিরাপদে থাকে। গ্রামে পল্লী বিদ্যুত না গেলে সোলার প্যানেলে বিদ্যুতায়িত হয় প্রতিটি ঘর। গ্রামের কোথায় কি করতে হবে তার চাহিদার নিরূপণ করে ওয়ার্ডের লোকজন। তারপর ইউপিকে জানায়, ইউপি ওয়ার্ডের ৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয় ও জবাবদিহি করে। পরিষদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছোটখাটো অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করে। বগুড়ার শাখারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল উদা উজ্জ্বল বলেন, এলজিএসপি-৩’র আওতায় তিনি যে বরাদ্দ পেয়েছেন তা দিয়ে কয়েকটি কাঁচা সড়ক পাকা করেছেন। আরও কাজের জন্য বরাদ্দপত্র দিয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে নিয়মানুযায়ী ওয়ার্ড মিটিং করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করেছেন। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান জানান, এলজিএসপির বরাদ্দ যেভাবে এবং যে জবাবদিহিতার মধ্যে আসে তাতে গ্রামের নারী-পুরুষের সরাসরি অংশগ্রহণে উন্নয়নের গতি বাড়ে। সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রায়হানা ইসলাম জানালেন, এলজিএসপির কাজে সফলতা এসেছে। এই কাজের বৈশিষ্ট্য হলো মাঠ পর্যায়ের উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গাঁয়ের মানুষের সঙ্গে বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিও থাকেন। এলজিএসপি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি) নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ১৭টি গোলের মধ্যে কয়েকটি গোলে সহযোগী হয়েছে। যা নির্দিষ্ট সময়ের (২০৩০ সাল) আগে এসডিজি অর্জনেও সক্ষম হবে।
×