ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০২০

জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

জবি প্রতিনিধি ॥ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রথমবারের মতো সমাবর্তন হতে যাচ্ছে আগামী ১১ জানুয়ারি শনিবার। তবে এর আগেই সমাবর্তনের রঙে রঙিন হতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বড় আয়োজনের জন্য বানানো হচ্ছে সমাবর্তনের মূল মঞ্চ। এবারের সমাবর্তনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ও সান্ধ্যকালীন ডিগ্রীধারী সকল শিক্ষার্থী যারা অন্তত একটি ডিগ্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছেন তারাই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রায় ২০ হাজার গ্র্যাজুয়েট। জবির ইতিহাসে এবারই প্রথম গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো সমাবর্তনের আয়োজন হওয়ায় কাজটা জটিল ছিল। কারণ, এসব কর্যক্রম সম্পর্কে অনেকেরই অভিজ্ঞতা ছিল না। একসঙ্গে ১৮৩১৭ শিক্ষার্থীর গাউন, ব্যাগ, গিফটসামগ্রী ও সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা সহজ কাজ নয়। এখন সবকিছু সম্পন্ন করে সমাবর্তনের প্রস্তুতি প্রায় শেষেরদিকে। যেহেতু রাষ্ট্রপতি থাকবেন, তাই এসএসএফ কর্মকর্তারা সর্বদা সমাবর্তন প্রাঙ্গণ (ধূপখোলা মাঠ) তদারকি করছেন। সমাবর্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা গাউন পরবে, মহড়া থাকবে। আর নির্দিষ্ট এন্ট্রি পাস ছাড়া কেউ সম্মেলন প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে না। সমাবর্তনের দিন রাত ৮ টা পর্যন্ত এবং পরের দুই দিন (১২ ও ১৩ জানুয়রি) অফিস চলাকালীন স্ব স্ব বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবে। আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমাবর্তন সফল করতে দিনরাত কাজ করছেন। আশা করছি, সমাবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটা নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সমাবর্তনে বক্তা মনোনীত হয়েছেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক। তিনি বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ্ইমেরিটাস প্রফেসর। ড. অরুণ কুমার বসাক ১৯৭৫ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাবর্তনকে সফল করতে ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথম সমাবর্তনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাক্ষী হতে অপেক্ষমাণ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাবর্তন হয়নি। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের সমাবর্তন প্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদেরকে সমাবর্তন বা কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সনদ প্রদান করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন এবং শিগগিরই সমাবর্তন দিতে হবে বলে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের জোর আন্দোলনে প্রশাসনের টনক নড়ে। প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার নিমিত্তে সমাবর্তনের স্থান, সময় ও পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সুপারিশ করার লক্ষ্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আতিয়ার রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রশাসন ও একাডেমিক এ্যান্ড কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সদস্যসচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। সমাবর্তনের আনুষঙ্গিক বিষয় দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ধারণ করে উপাচার্য বরাবর সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিটিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় পহেলা মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। নিবন্ধন কার্যক্রম ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আরও কিছু সময় বাড়ানো হয়। তবে সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রী অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর ডিগ্রীর সনদ তুলতে পারবেন। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সমাবর্তন গাউন শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে না। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ২০ ডিসেম্বর হতে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘এন্ট্রি পাস’ সংগ্রহ করতে হয়েছে। এন্ট্রি পাসের রঙিন প্রিন্ট নিতে হয়েছে এবং যাতে তিনটি অংশ রয়েছে। যা দিয়ে যথাক্রমে কস্টিউম সংগ্রহ, কনভোকেশন ভেন্যুতে প্রবেশ এবং মূল সনদ সংগ্রহ করা যাবে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশনকৃতদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মূল সনদ উত্তোলন করেছেন তারা দ্বিতীয়বার মূল সনদ পাবেন না। তাদের তালিকা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
×