ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ হাইকমিশন কিছু জানে না ॥ এখন সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে

মালয়েশিয়ায় আটক ৭৮ বাংলাদেশী ডিটেনশন ক্যাম্পে

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০২০

মালয়েশিয়ায় আটক ৭৮ বাংলাদেশী ডিটেনশন ক্যাম্পে

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় সাধারণ ক্ষমা ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পর দিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭৮ বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করেছে। তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যেসব অবৈধ কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেয়নি তাদের আটক করা হবে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আটক কর্মীদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে। আটক কর্মীদের কোথায় রাখা হয়েছে এ বিষয়ে হাইকমিশন এখনও কিছু জানে না। অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর পরদিনই অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়া। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান সেরি মহিউদ্দিন ইয়াসিন ঘোষণা দিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেয়ার কারণে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকার আর কোন সুযোগ দিতে রাজি নয়। পাঁচ রূপরেখার ভিত্তিতে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে। সেই অভিযানে যারা গ্রেফতার হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। অবৈধ অভিবাসী ধরতে মালয়েশিয়া সরকার নতুন যে পাঁচ কৌশল হাতে নিয়েছে সেগুলো হলো- প্রয়োগকৃত অভিযান পদ্ধতি, যা দেশব্যাপী অবৈধদের বিরুদ্ধে পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে নির্দেশ করে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নীতি, যা নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের নীতিগুলোর সমন্বয় সম্পর্কিত বাস্তবায়ন, প্রবেশপথ ও বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, যা দেশের সীমানা ও প্রবেশ পথগুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন বোঝায়, বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগুলোর সমন্বয় পরিকল্পনার আওতায় ব্যবস্থাপনা কৌশল, মিডিয়ায় প্রচার কৌশল, যা অবৈধদের বিষয়ে মিডিয়া কাভারেজ, প্রচার ও সচেতন করা। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবৈধ অভিবাসী একটি জাতীয় সমস্যা, যা এখনও সম্পূর্ণ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি। এ সমস্যা স্থানীয়দের মধ্যে বড় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যা শুধু জাতীয় ও সীমান্ত নিরাপত্তাকেই বিঘিœত করে না, বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও বিরাট প্রভাব ফেলছে। সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান দাতুক খায়রুল দাজাইমি দাউদ ঘোষণা দেন, কোন অবৈধ অভিবাসীকে আর রাখা হবে না। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১২৪ অভিযানে বিভিন্ন দেশের ১ হাজার ৮শ’ ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরে ২২০ জনকে গ্রেফতার দেখায় অভিবাসন বিভাগ। এদের মধ্যে ৭৮ জন বাংলাদেশী। বাকিরা অন্যান্য দেশের। মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচীর আওতায় সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৯০ হাজার ৪শ’ ৭১ কর্মী দেশে ফিরে গেছেন। এরপরও বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীও দেশে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান পরিচালনা করবে অভিবাসন বিভাগ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এ বিষয়ে বলেন, মালয়েশিয়া থেকে কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রণালয় বিমানকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা দিয়েছে। এমন কি যারা দেশে ফিরতে চান তাদের জন্য সে দেশে বাস ভাড়া করে দেয়া হয়েছিল ইমিগ্রেশন সেন্টারে যাওয়ার জন্য। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় সাধারণ ক্ষমা ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর আওতায় ৩৬ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। তারা দেশে ফেরার জন্য ‘আউট পাস’ সংগ্রহ করে বসে আছেন। কিন্তু এয়ারলাইন্সের টিকেট সঙ্কটে অনেকেই ফিরতে পারেননি। তারা গত মার্চ থেকে সময় পেয়েছেন। কেন তারা তখন থেকে দেশে ফেরেননি। তাদের তো ফেরা উচিত ছিল। যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসতে পারেননি, মালয়েশিয়া সরকার তাদের কিছু দিনের সময় দেবে। আলাপ আলোচনা করে আমরা একটা মীমাংসায় পৌঁছেছি। তবে এই সময়টা খুব বেশি দিনের হবে না। তাদের অল্পদিনের মধ্যে দেশে ফিরতে হবে। বিমান ইতোমধ্যে ১৬ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। আমরা অনুরোধ জানিয়ে বিমানমন্ত্রী ও বিমানের এমডিকে চিঠি দিয়েছি আরও কিছু ফ্লাইট পরিচালনার। আশা করি এক দুই সপ্তাহের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে আউট পাস সংগ্রহ করা সবাই দেশে ফিরে আসবেন। মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্য ’১৭ সালে সুযোগ দিয়েছিল। সে সুযোগ শেষ হয় ’১৮ সালের ৩০ আগস্ট। এতে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়ে বহু বাংলাদেশী নিবন্ধিত হয়েছেন। অনেকে আবার প্রতারণার শিকার হন। এরপর ’১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে সরকার ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী চালু করে মালয়েশিয়া। এ কর্মসূচী শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। এ সময়ের মধ্যে যারা ‘আউট পাস’ সংগ্রহ করেছেন তারা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন। বাংলাদেশের কর্মীদের দেশে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ষোলোটি বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তবে এখনও বহুকর্মী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।
×