ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলতি বছরে বসে বসেই বিল নেবে অধিকাংশ তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৪ জানুয়ারি ২০২০

চলতি বছরে বসে বসেই বিল নেবে অধিকাংশ তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র

রশিদ মামুন ॥ চলতি বছর অধিকাংশ তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রকে বসেই কাটাতে হবে। গত দুই বছর ক্রমান্বয়ে তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বছর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাবে। চলতি বছর উৎপাদনের যে হিসাব দেখানো হয়েছে তাতে দেখা গেছে তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে ডিজেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর হবে শূন্য দশমিক ০২ ভাগ আর ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর হবে ২০ দশমিক ১৮ ভাগ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই দুই জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন হবে ২০ দশমিক দুই ভাগ। আর ৭৯ দশমিক আট ভাগ বিদ্যুত কেন্দ্র বসে বসেই বিল নেবে। চাহিদা না থাকার পরও উচ্চমূল্যের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করাতে এখন কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যেই পিডিবির উৎপাদন পরিকল্পনা কাটছাঁট করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জ¦ালানি ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের যে হিসাব দাঁড় করিয়েছে সেখানে এই চিত্রই মিলেছে। পিডিবি জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য তারা ফার্নেস অয়েল চালিত কেন্দ্রগুলো ১৭ দশমিক ৭৫ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে এবং ডিজেল চালিত কেন্দ্রগুলো তিন দশমিক ২৯ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানো হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিইআরসি পর্যালোচনা করে বলছে, ফার্নেস অয়েলে ২০ দশমিক ১৮ ভাগ এবং ডিজেলে শূন্য দশমিক ০২ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালালেই চাহিদা পূরণ সম্ভব। সূত্র বলছে, একটি ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র যদি প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে তাহলে তার প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর হবে ১০০। আর যদি ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র ঘণ্টায় মাত্র ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে তাহলে তার প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ১০ ভাগ। এই হিসাব বলছে আগামী বছর অধিকাংশ তেলচালিত কেন্দ্র বসে থাকবে। বিদ্যুত উৎপাদনকারীকে বিল দেয়ার ক্ষেত্রে দুটি ভাগ করা হয়। জ¦ালানির দর উদ্যোক্তা নিজে জ¦ালানি সংস্থান করলে তাকে সরাসরি দেয়া হয়। আবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ¦ালানি সরবরাহ করলে সরাসরি তাদের দেয়া হয়। বিদ্যুত উৎপাদন করলেই কেবল উদ্যোক্তা জ¦ালানি বাবদ অর্থ পেয়ে থাকেন। কিন্তু তার বাইরে উদ্যোক্তা কেন্দ্র স্থাপন, পরিচালন এবং অন্যান্য যে ব্যয় রয়েছে তার হিসাবে একটি অর্থ পেয়ে থাকেন। যাকে বলা হয় ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। উদ্যোক্তা বিদ্যুত উৎপাদন করুক না করুক এই অর্থ তাকে পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো বসে থাকলেও তাদের বিল পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ তেল চালিত কেন্দ্রগুলো চালানো হোক বা না হোক তাদের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ফলে কেন্দ্র বিদ্যুত উৎপাদন না করলেও সাধারণত উদ্যোক্তার কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় সরকারের। পিডিবির হিসাব বলছে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো যথাক্রমে প্রথম দুই বছর ৪২ ভাগ এবং পরের বছর ৩২ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চলেছে। আর ডিজেল চালিত কেন্দ্রগুলো যথাক্রমে ৩০,৩৯ এবং ১৪ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চলেছে। দেশে এলএনজি আমদানি হওয়াতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়েছে পেট্রোবাংলা এতে করে গ্যাস চালিত কেন্দ্রগুলো এখন বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করছে। কাজেই চাহিদা পূরণে এখন আর খুব বেশি তরল জ¦ালানির বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে হচ্ছে না। তেলের বাইরে চলতি বছর জল বিদ্যুত ৩৬ দশমিক ৭৯ ভাগ, কয়লা ৫৪ দশমিক ২১ ভাগ, গ্যাস ৫৮ দশমিক ৪৯ ভাগ, সোলার ১২ দশমিক ৪৭ ভাগ এবং আমদানি বিদ্যুত আসবে ৭৭ দশমিক ৪২ ভাগ হারে। বলা হচ্ছে, বছরের শুরু এবং মাঝামাঝি সময়ে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র পায়রা উৎপাদনে আসায় তেল চালিত বিদ্যুত উৎপাদন আরও কমবে। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে পায়রার প্রথম ইউনিট পুরোদমে উৎপাদন শুরু করবে আর মে মাসেই পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। বেজ লোড পাওয়ার প্ল্যান্ট চাইলেও বন্ধ করা যায় না। এছাড়া তেলের তুলনায় অনেক কম দরে বিদ্যুত উৎপাদন করায় কয়লা থেকেই বেশি বিদ্যুত নেয়ার কথা পিডিবির। বিদ্যুত, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা তেলচালিত ছোট এবং অদক্ষ বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এলে যে পরিমাণ উৎপাদন কয়লা থেকে বাড়বে ওই পরিমাণ তেল চালিত কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া যাবে বলে জানান তিনি।
×