ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীত ও বৃষ্টির কারণে দেশী পেঁয়াজের দাম ফের বাড়ছে

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৪ জানুয়ারি ২০২০

শীত ও বৃষ্টির কারণে দেশী পেঁয়াজের দাম ফের বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশী পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকায় নেমে আবার তা উঠতে শুরু করেছে। শৈত্যপ্রবাহ ও দু’দফা বৃষ্টির কারণে দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বেশি দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ আগাম তুলে ফেলায় ফলন কমে গেছে দেশী পেঁয়াজের। এর একটি প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে বাজারে স্বস্তি দিচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ। ভর্তুকি দিয়ে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি বিক্রি করছে ৩৫ টাকায়। খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে এই পেঁয়াজ পেতে ৬০-১০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে একজন ভোক্তাকে। এদিকে, বেশি লাভের আশায় কৃষক অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে ফেলায় এবার দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে আগামী রমজান মাসের আগেই ২ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি, ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুর এবং ডাল আমদানি বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে এসব পণ্য আমদানি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে আরেকদফা বেড়েছে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি ও আলুর দাম। তবে চাল, ডাল, ছোলা ও আটার মতো নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় কমেছে শাক-সবজির দাম। দেশী জাতীয় মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। বেড়েছে দেশী মুরগি ও হাঁসের দাম। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আদা ও রসুন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে বেড়েছে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম। দাম বেড়ে প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেজিতে এক সপ্তায় দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। অন্যদিকে দাম বেড়ে প্রতিকেজি দেশী নতুন পেঁয়াজ ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৬০-৭০ টাকার মতো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ ও দু’দফা বৃষ্টির কারণে নতুন উঠা দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। আর এ কারণে দাম বাড়ছে দেশী পেঁয়াজের। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশী পেঁয়াজের দাম আবার ১০০ টাকার ওপরে। মানভেদে দেড় শ’ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। তিনি বলেন, দাম কম আমদানি করা বড় সাইজের পেঁয়াজের। চীনের সাদা জাতের প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। জানা গেছে, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েই প্রায় সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে নয়। এ কারণে ব্যবসায়ীদের অন্যভাবে সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে বাজেটে ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর নির্ধারিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত পূর্বাভাস সেলের বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এ বছর পেঁয়াজ থেকে আমরা বড় শিক্ষা পেয়েছি। ভবিষ্যতে পেঁয়াজের মতো আর কোন ভোগ্যপণ্য যাতে মানুষকে কষ্ট দিতে না পারে সেজন্য করণীয় সবকিছু করবে সরকার। তিনি বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়লে ভোক্তাদের কষ্ট হবে। এ কারণে এখনই ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানো হবে না। তবে ব্যবসায়ীরাও যাতে লোকসানের মুখে না পড়েন সেজন্য তাদের দাবিগুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। টিসিবির হিসেবে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ৯১-৯৩ টাকা, সয়াবিন তেল বোতল পাঁচলিটার ৪৭০-৫১৫, সয়াবিন তেল বোতল একলিটার ১০০-১১০, পামওয়েল লুজ প্রতিলিটার ৮০-৮২, পামওয়েল সুপার প্রতিলিটার ৮২-৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও রাজধানীর খুচরা বাজারে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি বেড়েছে চিনির দাম। প্রতিকেজি খোলা চিনি ৬২-৬৫ এবং প্যাকেট চিনি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৪৫-৬০, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪০-৫০, মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি আটা ২৮-৩৫, মসুর ডাল ৫৫-১২৫, রসুন ১৪০-১৮০, আদা ১২০-১৭০, ছোলা ৭৫-৮০, আলু ৩০-৩৫, দেশী মুরগি প্রতিপিস ৪০০-৪৫০, ব্রয়লার ১১৫-১২৫, গরুর মাংস ৫৩০-৫৫০, খাসী ৭০০-৮০০, ডিম প্রতিহালি ৩২-৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এদিকে, বাজারে দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম চড়া। পুকুর, ডোবা, জলাশয়, হাওর, বাওড় ও নদীনালায় পানি কমে যাওয়ায় বাজারে দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে গতবছরের তুলনায় এবার শীতে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় দাম বেশি। আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-১৫০০ টাকায়।
×