ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের প্রথম স্প্যান বসছে আগামী সপ্তাহে

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৪ জানুয়ারি ২০২০

বছরের প্রথম স্প্যান বসছে আগামী সপ্তাহে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল ॥ পদ্মায় বছরের প্রথম স্প্যান বসছে আগামী সপ্তাহে। ২১তম স্প্যানটি বসানের প্রস্তুতি চলছে এখন। ১০ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের ৩২ ও ৩৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হচ্ছে ‘৬বি’ নম্বর স্প্যান। আর এর আগেই সর্বপ্রথম তৈরি করা ‘এফ১’ স্প্যানটি ৬ ও ৭ নম্বরের নিজস্ব খুঁটি নিয়ে আসা হচ্ছে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এই ‘এফ১’ স্প্যান সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে অস্থায়ীভাবে বসানো ছিল। এখন স্থায়ীভাবে এটি বসানো হচ্ছে। ‘১ই’ স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর স্থানে বসিয়ে দেয়া হবে ২০ জানুয়ারি। এছাড়া ৩০ জানুয়ারি ‘৬এ’ নম্বর স্প্যানটি বসবে সেতুর ২১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এভাবেই জানুয়ারি মাসের কর্মসূচী সাজানো হয়েছে। তাই সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২০ বছরের প্রথম মাসে তিনটি স্প্যান স্থাপন এবং একটি স্প্যান স্থানান্তর করা হচ্ছে। এর আগে ৩১ ডিসেম্বর সেতুর ২০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান অর্থাৎ সেতুটির অর্ধেক দৃশ্যমান হয়েছে। আর ২০ স্প্যান বসানোর পর ২০২০, মুজিববর্ষ শুরু হয়েছে। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী শুরুর আগে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি আরও অনেক বাড়বে বলে দায়িত্বশীলরা মনে করছেন। মুজিববর্ষে সেতুটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বীরত্ব গাথা গোটা পৃথিবীকে বিশেষভাবে জানান দিবে এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, মূল সেতুর মোট ৪২ পিয়ারের (খুঁটি) মধ্যে ৩৬ পিয়ারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে মাত্র ছয়টি পিয়ার। ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ এবং ২৯ নম্বর পিয়ার এখন পদ্মার তলদেশ থেকে ওপরের দিকে উঠছে বা উঠে গেছে। ৮, ১০, ১১ এবং ২৯ চারটি পিয়ারের কাজ আগামী ৪৫ দিন অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সম্পন্ন হয়ে যাবে। অবশিষ্ট ২৬ এবং ২৭ নম্বর পিয়ারের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। এদিকে বসানো স্প্যানের নিচের তলায় রেলওয়ে স্লাব এবং ওপরের তলায় রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পৌষের কনকনে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করেই সেতুর কর্মযজ্ঞ চলছে রাতদিন। পদ্মা সেতুর মোট ৪১ স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৩ স্প্যান। আরও দুটি স্প্যান চীন থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা হয়েছে। বাকি ছয়টি স্প্যান চীনে তৈরি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান আছে। মার্চের মধ্যে সব স্প্যান দেশে চলে আসবে। সেতুর ৪১ স্প্যানের মধ্যে ২০টি স্প্যান স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে যার দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার। এছাড়া একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি অস্থায়ী স্প্যানটি স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হবে। প্রতি মাসে এখন তিনটি করে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ সিডিউল মেনে স্প্যান বসাতে পারলে আগামী বছরের জুলাই নাগাদ ৪১টি স্প্যান বসানো শেষ হবে। সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জিডিপি বৃদ্ধি পাবে দেড় থেকে প্রায় ২ শতাংশ। এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যেই পদ্মার দু’তীরে নানা রকমের কর্মযঞ্জ শুরু হয়েছে। দুই পারের দুই থানা হয়েছে। দু’পারেই তৈরি হচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট। সেনাবাহিনী ৯৯ কম্পোজ ব্রিগেট এখানে সেতুর নির্মাণ শুরু থেকেই কাজ করছে। দু’পারেই স্থাপিত হচ্ছে ক্যান পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। প্রধানমন্ত্রী আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এই অঞ্চলকে সাংহাই সিটিতে রূপান্তর করা হবে। তাই এই অঞ্চলের মানুষ অনেক আশা বুকে নিয়ে বসে আছে। পদ্মা সেতুর একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জানিয়েছেন, দু’পারে পদ্মা সেতুর শুধু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে বহু জমি। সেতুর কাজ শেষ হলে এই জমিগুলো যথাযথ কাজে লাগানো জরুরী। সে ক্ষেত্রে এই প্রকৌশলী মনে করেন মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগ এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে প্রায় ৬৪ হেক্টর জমি এবং ওপারের জাজিরায় প্রায় ৮৫ হেক্টর জমিতে হাই রাইস বিল্ডিং করে সাংহাই শহরের চেয়েও সুন্দর শহরে রূপান্তর সম্ভব। পদ্মা সেতু পাশের এসব হাই রাইস ভবন সেতুর সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করবে। তার মতে, এখানে অন্তত ৫ হাজার এপার্টমেন্ট করা সম্ভব। ৬ দশমিক ১৫ দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সেতুর দু’প্রান্তে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতু রয়েছে। সেই সংযোগ সেতুর কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে।
×