ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেল-মোটেলে রমরমা ব্যবসা

প্রবাসী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সিলেট অঞ্চল

প্রকাশিত: ১১:২৩, ৪ জানুয়ারি ২০২০

প্রবাসী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সিলেট অঞ্চল

সালাম মশরুর ॥ প্রবাসী ও পর্যটকদের আগমনে সিলেট অঞ্চলে নগর জীবনের চেহারা পাল্টে গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অতিথিদের সরব পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বৃহত্তর সিলেট। নগরীর নামী-দামী হোটেলগুলোতে সিট বুকিং হচ্ছে অনলাইনে। রমরমা ব্যবসা চলছে হোটেল-রেস্টুরেন্টে। বাড়তি ব্যবসা হচ্ছে পোশাক ও কসমেটিক্সের দোকানে। গত কিছুদিন ধরে লন্ডন-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটীরা মাতৃভূমিতে বেড়াতে আসছেন। লক্ষণীয় যে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ইদানিং প্রবাসীদের দেশে আগমনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া, শীত মৌসুম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও নানান বয়সী পর্যটকরা আসছেন দলে দলে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুযোগে অনেকেই সপরিবার ছুটে আসছেন এই অঞ্চলে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা হোটেলে থাকার ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ভাড়া করে নিয়ে আসছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসগুলো পার্কিং করে তারা বিভিন্ন স্পট ঘুরে ফিরে একদিন অবস্থান করে আবার ফিরে যাচ্ছেন। খোলা জায়গায় রাস্তার পাশে অনেকে নিজেদের বাবুর্চি দ্বারা রান্না-বান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন। গত ২ সপ্তাহে সিলেটে কয়েক হাজার লন্ডন প্রবাসী এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খ্রীস্টানদের ধর্মীয় উৎসব বড় দিনের ছুটি ও নতুন বছরের প্রথম দিকে ছুটি থাকার কারণে লন্ডন প্রবাসীরা দেশে এসেছেন। সিলেটের প্রায় ৪ লাখ মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। বছরের বিভিন্ন ছুটির সময় নাড়ির টানে তারা চলে আসেন আপন ভূমি সিলেটে। তবে শীতকালে বড় দিন ও নতুন বছরের ছুটির পাশাপাশি থাকার কারণে একত্রে ছুটি পান পশ্চিমা দেশের লোকজন। যে কারণে লন্ডন ও আমেরিকা প্রবাসীরা বছরের এই সময়ে ৩/৪ সপ্তাহের জন্য চলে আসেন দেশে। প্রবাসীদের দেশে আগমনকে কেন্দ্র করে প্রবাসী পরিবারে ভিন্ন ধরনের আনন্দ উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। বিয়ে-শাদি ছাড়াও পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠানাদি চলে এই সময়ে। লন্ডন প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ে ঠিক করেন সাধারণত এই সময়ে। সিলেটের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ঘুরে জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেকে বেশিরভাগ বিয়ে হচ্ছে লন্ডন প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের। তারা ছুটিতে দেশে আসার আগেভাগেই বিয়ে ঠিক করে রাখা হয় এই সময়ে। দেশে অবস্থানকালীন প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা নিজেদের প্রয়োজনীয় পোশাক কসমেটিক্সসহ নানান জিনিসপত্র কেনাকাটা করে থাকেন। যে কারণে নগরীর শপিংমলেতেও দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। দেশের রাজনীতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে এই বছর প্রবাসীরা অনেকেই আগ্রহ নিয়ে দেশে এসেছেন। এসব প্রবাসীদের মধ্যে কেউ থাকেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। আবার কেউ থাকেন শহরে। শহরকে কেন্দ্র করে তারা তাদের পরিকল্পনা ঠিক করেন। যাদের শহরে নিজস্ব বাসা-বাড়ি নেই তাদের অনেকেই ফার্নিচারসহ ফ্লাট ভাড়া করে নেন ৪/৫ সপ্তাহের জন্য। ৩ বেড রুমের একেকটি বাসা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ভাড়া যাচ্ছে। এদিকে দেশের বাইরে থেকে আগত প্রবাসী পরিবারের সদস্য ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের পদচারণায় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। জাফলং, বিছনাকান্দি, সাদা পাথর, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল চা বাগান, লাউয়াছড়া, মৌলভীবাজারের মাধবকু-সহ অন্যান্য স্থানে ভেড়াতে আসা লোকজন মানসম্মত টয়লেট, ওয়াস রুম, কাপড় পরিবর্তনসহ নানান সমস্যার কারণে অসুবিধাও ভোগ করছেন। সিলেট বিভাগের সর্বত্র এখন পর্যটকদের বিচরণ। পাহাড়-টিলা-নদী, আঁকাবাঁকা পথ। সবুজের সমারোহ, যতই দেখা যায় ততই ভাল লাগে। সুরমা কুশিয়ারা মনু খোয়াই বিধৌত, দুটি পাতা একটি কুড়ির সবুজে মোড়ানো ছোট-বড় পাহাড়-টিলা, হাওড়-বাঁওড় বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট বিভাগের সর্বত্র এখন পর্যটকদের আনাগোনা। এক সময় স্থানীয় পর্যায়ে হোটেল ব্যবসায়ী, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিতে পর্যটকদের আগমন ছিল নিছক বেড়ানো। হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারত, জাফলং ও মাধবকু- যাতায়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পর্যটকরা এসেছেন, হোটেল বুকিং নিয়েছেন। গাড়ি ভাড়া করে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাজারে তেমন প্রভাব ফেলার মতো বিষয় ছিল না। কিন্তু কালের ব্যবধানে গত ১০/১৫ বছরে এ চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। এখন শুধু জাফলং মাধবকু- নয় বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্যম-িত স্থানগুলো দৃষ্টির সীমানায় আসছে। সৌন্দর্য পিপাসুদের খুঁজে আনা এসব স্থানের তথ্য ইন্টারনেটের বদৌলতে মুহূর্তেই চলে যাচ্ছে দেশে-বিদেশে। আর এই মনমুগ্ধকর স্থাপনা দর্শনের লোভ যে কত তীব্র সেটা কেবল ভ্রমণ পিপাসুরাই বলতে পারেন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে পর্যটন সেক্টর নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নতুন স্বপ্ন দেখছেন। সে লক্ষ্যে নিজেরা প্রস্তুত হচ্ছেন, পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। সিলেট বিভাগে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসার সাফল্য ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করছে। সাম্প্রতিককালে সিলেট মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে রুচিসম্মত, আধুনিক মানের অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সারা বছর এ সকল হোটেল-রিসোর্টে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাইরে থেকে ইমেল, ইন্টরনেটে রুম বুকিং করে সময় মতো তারা অবস্থান নিচ্ছেন। ঈদের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটি ও বিভিন্ন দিবসে এক দুদিনের ছুটির সঙ্গে আরও এক দুদিন যোগ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমিকরা। আর সে লক্ষ্যে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের যথাযথ সেবা দানে নিজেদের প্রস্তুত করে রাখেন। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে অধিক সংখ্যক পর্যটকের আগমন সামাল দিতে পূর্ব থেকেই বিশেষ নজর রাখেন। শহরের বাইরে প্রকৃতি ঘেরা মনোরম পরিবেশে তৈরি রিসোর্টগুলোতে সময় কাটিয়ে বাড়তি আনন্দ উপভোগকারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নামী-দামী রিসোর্টগুলোতে এক রাতে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়েও পর্যটকরা বাড়তি আনন্দে মনকে তৃপ্ত করছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। শ্রীভূমি সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সারাবছরই মুখর থাকে পর্যটকদের পদচারণায়। আর বিভিন্ন মৌসুমে ঢল নামে পর্যটকদের। চাঙ্গা হয়ে ওঠে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য। আর এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। ঈদে দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে এই অঞ্চলে। পর্যটকদের বরণ করতে আগেভাগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। এদিকে, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘেœ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বিস্তৃত পর্যটন এলাকাগুলো ঘুরে দেখার জন্য পর্যটকদের কাছে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। অধিকাংশ এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ানোর উপায় নেই। বর্ষাকালে নৌকাযোগে বেড়ানোর সুযোগ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সড়ক পথে সে সুযোগ নেই। সৌন্দর্যম-িত এসব এলাকায় বর্ষায় এক রূপ আর শুষ্ক মৌসুমে আরেক রূপ। প্রকৃতির এই বিশাল রূপের ভা-ার ভ্রমণ পিপাসুদের উপভোগ করার জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কমতি নেই। এখন প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালি, স্বচ্ছ জলের নিচে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের পাথর। উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, ছোট-বড় পাহাড়ী নদীর বাঁক ধরে নৌকায় করে ঘন বনে হারিয়ে যাওয়া, প্রকৃতির এমন রূপ-লাবণ্য উপভোগ করার টান যেন অন্য ধরনের। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রটি সাম্প্রতিককালে দেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পিয়াইনের দুই তীরে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি। সেখানে শত শত পাথর শ্রমিক প্রতিদিন পাথর উত্তেলন করে থাকে। বর্ষায় পাহাড়ী ঢলের স্বচ্ছ পানিতে পিয়াইন সাগরের রূপ ধারণ করে যা রীতিমতো অপরূপ। আবার বসন্তেও বিছনাকান্দি মুগ্ধ করছে হাজার হাজার পর্যটককে। তারই ঢালুতে ভারতীয় খাসিয়া পল্লী ও বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। এখানে পর্যটকদের ছবি তুলে দিতে কাজ করছে মেঘালয়-বিছনাকান্দি সমিতির প্রায় ১০০ তরুণ সদস্য। বর্ষায় একই রূপ জাফলং জিরো পয়েন্টে। এবার সিলেট কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কটি পাকাকরণ কাজ হয়ে যাওয়ায় শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী ভারতের সীমানা ঘেঁষা এই এলাকাটি পর্যটকদের কাছে নতুন রূপে আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, অপার সৌন্দর্যম-িত সবুজ গ্রাম পান্তুমাই, জাফলংয়ের মায়াবী ঝর্ণাধারা। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রকৃতির নির্মল প্রেমে নিজেরা হারিয়ে যান প্রকৃতি ভাবনায়। ওপারে নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ সমতল ভূমিতে জাফলং চা-বাগান, তামাবিল জিরো পয়েন্ট ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের খাসিয়া পল্লী, সব কিছুই খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। এ ছাড়াও বিজিবির সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি ও জাফলং চা-বাগান সংলগ্ন এলাকায় পিয়াইন নদীর ওপর জাফলং সেতু। যে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে একই সঙ্গে দেখা যায় সমতল ভূমির চা বাগান, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলের স্রোত ধারা ও ভারতের মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়। জাফলং ও বিছনাকান্দির আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পর্যটন জেলা চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ভিড় এখন সারা বছর। জেলাজুড়ে শতাধিক চা বাগান, জীব্যবৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, দেশের বৃহত্তম জলরাশি মাধবকু- জলপ্রপাত, দুর্গম পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে হামহাম জলপ্রপাত, এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওড়, দোসাই রিসোর্ট এ্যান্ড স্পা সেন্টার, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, মনু ব্যারেজ এলাকায় রাঙাউটি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধবপুর লেক, শ্রীমঙ্গলের স্বাধীনতার বধ্যভূমি, বাইক্কা বিল, আগরের কারখানা, রাবার বাগান, জুড়ির কমলার বাগান, তুর্কী নক্সায় নির্মিত শ্রীমঙ্গলের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, মনিপুরী তাঁতশিল্প, খাসিয়াদের চাষকৃত পানের বরজ, মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কসহ আরও অনেক সুন্দর আকর্ষণীয় স্থান। ছোট-বড় ২৩৮ বিল নিয়ে হাকালুকি হাওড়ের আয়তন ২০ হাজার ৪শ’ হেক্টর। নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ, পাখি, শাপলা-শালুক, ঝিনুক, শত শত প্রজাতির জলজ প্রাণী আর হিজল, কড়চ, বরুন, আড়ং, মূর্তা, কলুমসহ সবুজের ঢেউ জাগানিয়া মনকাড়া পরিবেশ। এই মৌসুমে থৈ থৈ পানি আর শীত মৌসুমে পাখির খেলা বিমোহিত রূপ মাধুর্যে কাছে টানে প্রকৃতি প্রেমীদের। দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত মাধবকু-। বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী বাজার থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগোলেই কানে আসবে ক্রমাগত জল গড়ানোর শব্দ। প্রায় ২শ’ ৫০ ফুট পাথারিয়া পাহাড়ের ওপর থেকে ছোট-বড় পাথরের বুক চিড়ে আছড়ে পড়া জলরাশির ঝর্ণা ধারার দৃশ্যে মন নাচে আনন্দ আবেগে। তাই যে কোন প্রকৃতি প্রেমীর জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, লাউয়াছড়া রেন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর বৃক্ষাদি। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শ্রীমঙ্গল হতে মাত্র ১০ কিলোমিটার আর ঢাকা থেকে ১৯৬ কিলোমিটার। এর আয়তন ১২৫০ হেক্টর। মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত, চীন, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশসহ চারটি দেশে ওদের প্রজাতি সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেঁষা রয়েছে তিনটি আদিবাসী পল্লী। (মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া) ও একটি ত্রিপুরাদের পাড়া। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সাধারণত পাহাড়ী কৃষ্টি কালচারের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে যা সাধারণের থেকে অনেক আলাদা। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা। বড়লেখার আজীমগঞ্জ ও সুজানগর এলাকায় বিশাল বিশাল আগর বাগান আর তা থেকে নানা প্রক্রিয়ায় সুগন্ধী সংগ্রহের দৃশ্য কৌতূহল জাগায়। এখানকার উৎপাদিত আগর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুনাফা অর্জিত হয়। মাধবকু- জলপ্রপাতের চেয়ে তিনগুণ বড় হামহাম জলপ্রপাত। কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্তে হামহাম জলপ্রপাত। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান। হাইল হাওড়ে অবস্থিত সংরক্ষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ‘বাইক্কা বিল’। ইউএস আইডি’র অর্থায়নে মাচ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও পাখির অভয়াশ্রম। নয়নাভিরাম জলাভূমিতে হাজারো শাপলা আর পদ্মফুল ফোটে। বিলের পানির ওপর ঘুরে বেড়ায় ফড়িং।
×