ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত হবে

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৪ জানুয়ারি ২০২০

কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সবজি আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর ও অর্থনীতির একটা বিশেষ দিক। এর মাধ্যমে আমরা রফতানি আয় বৃদ্ধি করতে পারব। কৃষিকে বহুমুখীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। শুধু গার্মেন্টসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আমরা কৃষিসহ অন্যান্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়াও এ বছর দেশে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) অডিটরিয়ামে জাতীয় সবজি মেলার উদ্বোধন ও সেমিনারে এসব কথা বলেন। আলু ও সবজি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা ধান-চালে উদ্বৃত্ত দেশ। আমাদের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকে লাভজনক করতে হলে বহুমুখীকরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবজি চাষের অনেক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। আমাদের কাছে যে প্রযুক্তি আছে তা ব্যবহার করতে পারলে শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও সবজি রফতানি করতে পারব। অন্যান্য অপ্রচলিত ফসল উৎপাদন করতে হবে। আলু আমাদের নটিফাইড ক্রপস ছিল। এটিকে আমরা তুলে দিয়েছি। আমাদের যারা আলু উৎপাদন ও রফতানি করে থাকে, তারা বিদেশ থেকে ভাল জাত নিয়ে আসতেছে। বিএডিসিও ভাল জাত আনতেছে। আগামী বছরই ভাল জাত এনে আমরা বিদেশে মানসম্পন্ন আলু রফতানি করতে পারব। সবজিতে একটু খরচ বেশি। কৃষক যদি লাভ না করতে পারে, তাহলে তারা চাষ করবে কেন সে প্রশ্নও রাখেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ধান করেও তারা লাভবান হচ্ছে না। সবজি এ মুহূর্তে একটু দাম বেশি হলেও কিছুদিন পরে এ আলু বা টমেটো কৃষক বিক্রি করতে পারবে না। উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কি করছেন আপনারা? এর সঙ্গে জড়িত সবাই বসেন কর্মসূচী নেন এবং আমি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মাশরুম দেশের পাঁচতারাকা হোটেলসহ বিদেশে বেশ চাহিদা রয়েছে, এর উৎপাদন বাড়াতে হবে কি করে এর বাজার সৃষ্টি করতে হবে তা বেড় করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হবে। আমি ফলাফল দেখতে চাই। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ২১ অঙ্গীকারের মধ্যে ২টি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কন্ট্রাক গোরয়ারস বৃদ্ধি করতে হবে। সবজি নিরাপদ কিনা এ প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা এবং যারা সবজি নিয়ে কাজ করে, তারা মেলায় অনেকগুলো প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। একটু সময় লাগবে আস্তে আস্তে মানুষ সচেতন হচ্ছে। যারা উৎপাদন করছে তারা এটাকে লাভজনক করার জন্য ফেরোমন, নিমসহ অন্যান্য জৈব উপাদান ব্যবহার করছে। যা মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। সবজি উৎপাদনের প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে, এটা যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, শুধু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের চাহিদা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও রফতানি করতে পারব। পেঁয়াজ সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। তারা হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে আমরা বিপদে পড়ে যাই। এরপর থেকে শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেই হবে না। আমাদের কাছে পেঁয়াজ উৎপাদনের যে প্রযুক্তি আছে, তাতে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত থাকব। সমস্যা হচ্ছে, কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চায় না। সে কারণে আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেছি, এ বছর মৌসুমে যেন পেঁয়াজ আমদানি করা না হয়। কৃষক যেন পেঁয়াজ উৎপাদন করে লাভ করতে পারে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমাদের পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত হবে। সেমিনারের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, অর্থনীতির মেরুদ- হচ্ছে কৃষি। এখন খাদ্য উৎপাদনই প্রধান এ দিন এখন শেষ। এখন নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের দিন। কৃষিসচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান। ‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি চাষ’ বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. শাহাবুদ্দীন আহমদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। কৃষিমন্ত্রী এর আগে কেআইবি চত্বরের তিনদিনের জাতীয় সবজি মেলা ২০২০ এর উদ্বেধন করেন। তিনি এ সময় বিশেষ অতিথি ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন। মেলা উপলক্ষে বিকেল ৩টায় মানব উদ্দীপন বন্ধন অনুষ্ঠিত হয় বিএআরসি চত্বর হতে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত। মানব উদ্দীপন বন্ধনে সবজির বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে অংশ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো। মেলায় বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ৬৫টি স্টল ও ৩টি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। মেলা চলবে আগামীকাল ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। পঞ্চমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
×