ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ

চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল কার্যকর

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৪ জানুয়ারি ২০২০

চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ অধ্যক্ষকে টেনে হেঁচড়ে পুকুরে নিক্ষেপের ঘটনায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক ও বর্তমান ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল, পাঁচজনের সনদ আটক ও সাতজনকে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ছাত্রত্ব বাতিল ও সনদ আটকানোর সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আর বদলির সিদ্ধান্তটি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোন ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গত মাসে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। কারিগরি বোর্ড গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর সভায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। সুপারিশ অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন বলে বোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্লা উপস্থিত সবাইকে জানান। সভায় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১০ ও ২০১৬ প্রবিধানের নিবন্ধনের ৩.২ ধারা অনুযায়ী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চার ছাত্রের নিবন্ধন বাতিল (ছাত্রত্ব) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইভাবে সভায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শেষ পর্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় পাঁচ ছাত্রের সনদ তিন বছরের জন্য জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানের বদলি করার জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সুপারিশ প্রেরণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিসহ ১৫ সদস্য সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেছেন। কারিগরি বোর্ডের সভার এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে, তারা হলেন- ছাত্রলীগের পলিটেকনিক শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (পরে বহি®ৃ‹ত), ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্র মেডিক্যাল বিভাগের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম। যাদের সনদ আটক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা হলেন- ২০১৫-১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন। ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ষষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলামকে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, ২০১৬-১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স সপ্তম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডুকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, মেকাট্রনিক্স সপ্তম পর্বের মেহেদী মাহমুদকে শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, মেকানিক্যাল বিভাগের সপ্তম পর্বের মেহেদী হাসানকে কাপ্তাই বিএস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের ওমর আজিজকে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, ২০১৮-১৯ সেশনের তৃতীয় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমানকে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ও একই সেশনের পাওয়ার তৃতীয় পর্বের মাসুদ রানাকে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন জানান, গত বুধবার বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত তারা হাতে পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও সনদ আটকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। আর যাদের অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার পরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের বদলির আদেশ কার্যকর করা হবে। প্রসঙ্গত, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মিডটার্মে অকৃতকার্য ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নবেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ওইদিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়। অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের করা মামলায় মূল হোতাসহ এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×