ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুট কাপড়ের পোশাক

সিরাজগঞ্জে ২১ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৪ জানুয়ারি ২০২০

সিরাজগঞ্জে ২১ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় রিসাইক্লিং করে তৈরি করা হয় পোশাক। এক সময় শখ করে তৈরি করা হতো, এখন তা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এই ঝুট কাপড়ের পোশাক তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের ২১ হাজার পরিবার। এলাকার বাজার দখল করে এসব পোশাক এখন যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। কাজীপুরের চারটি ইউনিয়নের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক এ শিল্পে কাজ করে প্রতিদিন পাঁচ শ’ থেকে ১২শ’ টাকা উপার্জন করেন। কাজীপুরের শিমুলদাইড়, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বিলচতল, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, বড়শীভাঙ্গা, রৌহাবাড়ী, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ী, হরিনাথপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে এসব ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা। প্রতিটি কারখানায় সর্বনি¤œ ২টি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি মেশিন রয়েছে। এ অঞ্চলে ঝুট কম্বল শিল্পের প্রথম সূচনা হয় প্রায় দুই যুগ আগে। ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টেস চাকরি করা এসব অঞ্চলের শ্রমিক ছুটিতে বাড়ি আসার সময় হাতে করে কিছু পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় নিয়ে এসে তাদের পরিবারের নারীদের হাতে তুলে দেন। নারীরা ছোট ছোট টুকরো করে সেগুলোকে সেলাই মেশিনের সাহায্যে জোড়া দিয়ে কম্বল আকৃতি তৈরি করে নিজেদের বাড়িতেই প্রথম ব্যবহার শুরু করেন। এগুলো বেশ গরম হওয়ায় ধীরে ধীরে এ শিল্পের প্রসার ঘটে। পরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এটি বাণিজ্যিক রূপ পায়। আর তখন থেকেই আশপাশের লোকজন নিজেরাই আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সংবাদ নিয়ে ঢাকা থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি শুরু এ কম্বল। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তের কাছেও পছন্দনীয় হয়ে ওঠে এটি। মধ্যবিত্তরা প্রথমে তাদের বাড়ির কাজের লোকজনের জন্য কেনা শুরু করলেও পরে নিজেরাই ব্যবহার শুরু করেন। ঝুট কম্বল শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক সোহেল বলেন, আমরা ঝুট কাপড়কে রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে নিজেদের ডিজাইনে পোশাক তৈরি করে সস্তা দামে বিক্রি করে টিকে আছি। তিনি একটি সরকারী জরিপ উদ্ধৃত করে বলেন, কাজীপুর থেকে যত ঝুট কম্বলের পোশাক উত্তরাঞ্চলে রফতানি হয় তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কাজীপুরের তৈরি পোশাক। তিনি বলেন, তাদের কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। ব্যাংক যদি আমাদের এ সময় ঋণ দেয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারব। ঝুট কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, অল্পদিনেই ঝুট কম্বলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক চাহিদাও সৃষ্টি হয়েছে। ঝুট কম্বলের কাঁচামাল ঝুট কাপড় প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকায় কেনা হতো। অথচ এখন তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঝুট কাপড় ভারতে যাওয়ার কারণে এখন বেশি টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল বলেন, এ সকল পোশাক কারখানা কাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সরকার যদি এদের নির্দিষ্ট একটি বড় জায়গা স্থায়ী বরাদ্দ দিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে। এটি হলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি কারখানায় এসে পোশাকের অর্ডার দিতে পারবেন। শিমুলদাইড় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ জানান, তারা ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগামের পোশাক কারখানা থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে কম্বল, ব্লেজার, ট্রাউজার, প্যান্ট ইত্যাদি তৈরি করছেন। তিনি বলেন, কাজীপুরে ৫টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এসব ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করলে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকরা উপকৃত হবেন।
×