ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে প্রভাবশালীদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না স্থানীয়রা

সরকারী খাল-বিল দখল করে মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৪ জানুয়ারি ২০২০

সরকারী খাল-বিল দখল করে মাছ চাষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ৩ জানুয়ারি ॥ নির্মাণাধীন পূর্বাচলের বাগলার বিল ও সরকারী খাল দখলে মেতেছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে মাছ চাষ ও উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ১১ গ্রামের বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নির্মাণাধীন পূর্বাচল নতুন শহরের অধীনে থাকা সরকারী লেক দখল করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছে দীর্ঘদিন। তারা বঞ্চিত হলেও বিভিন্ন মহলে আবেদন করে পাননি সুরাহা। তাই তাদের ক্ষোভের যেন শেষ নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বাচলের ৬শ’ একর জমির মধ্যে প্রায় ২০টি লেক রয়েছে। এসব লেকের বেশিরভাগেই মাছ চাষ হচ্ছে। তবে কোন লেকেই সরাসরি স্থানীয়দের অংশ নেই। স্থানীয়রা এসব খালে মাছ চাষে অংশ নিতে চাইলে প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে পড়েন। একইভাবে উপজেলার পিংলাইন, ভোলানাথপুর এলাকার প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জাহিদুলের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় আক্তার, জাকির, মোজাম্মেল, সাইফুল ইসলাম ওরফে হাজী সাইফুল গং বাগলার খাল দখলে নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আশপাশের ৮টি গ্রামের ৫ শতাধিক সমিতি সদস্যদের বঞ্চিত করে মোজাম্মেল ও সাইফুল ১শ’ সদস্য নামে মাত্র সিন্ডিকেট করে একাই তারা ৯০টি সদস্যপদ বা শেয়ার দখলে নেয়। এতে কিছু সদস্যরা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। শুধু তাই নয়, এ খালে মাছ ধরতে গেছে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ মাছের ব্যবসার আড়ালে ওই সিন্ডিকেটের একটি চক্র পাহাড়ার নামে ইছাপুরা বাজার এলাকার নবী হোসেনের খাবার হোটেলে বসা জুয়ার আসর। তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না স্থানীয় কেউ। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নীলার বাড়ি ভাঙ্গার পর ওই সিন্ডিকেট কিছুটা নিষ্ক্রিয় হলেও তাদের পরিবারের লোকজন ওই মাছ চাষ নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয়রা জানায়, নামেমাত্র পুঁজি বিনিয়োগ করে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের নাম ভাঙ্গিয়ে ওই চক্র দখলে নেয় বাগলার খাল। সূত্র জানায়, বিশাল খালে মাত্র ২ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে দখলে নেয় তারা। স্থানীয় বাসিন্দা নাজির হোসেন বলেন, গরিবের হক মেরে সরকারী খাল তারা দখল করে রেখেছে প্রায় ১৩ বছর। এ খালটি বালু নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকলেও বানা পেতে সাধারণ নৌ চলাচল আটকে দিয়েছে তারা। টেক নোয়াদ্দার সোহেল রানা বলেন, ব্রিজের নিচে মাটি ফেলে বাঁধ দিয়ে খালটিকে স্থায়ীভাবে দখলে নিয়েছে তারা। পূর্বাচলের পরিচালক উজ্জল মল্লিকের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন সুরাহা পাইনি। সূত্র জানায়, পূর্বাচলের বিভিন্ন খাল বিল ছাড়াও নতুন শহর নির্মাণের নক্সায় লেকগুলোও দখলে নিয়েছে বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালীরা। কোন খালেই সাধারণদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সবগুলোই বেদখল হয়ে আছে। ইয়াপুরা এলাকার বাসিন্দা তাপস পাল বলেন, এক সময়ের বাগলার বোন বা বিলের মাছ বিক্রি করে স্থানীয় ভোলান, পিংলান, বরুলিয়া, কাদিরাটেক, মাইঝপাড়া, মোল্লাবাড়িসহ ৮টি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন এ বিল প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় তারা বঞ্চিত। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, এতদিন ছোট ছোট প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৬০ জনের সমিতি করে আলাদা আলাদাভাবে মাছ চাষ করত। পরে তা ভেঙ্গে জোর করে দখলে নেয় ওরা। এদের মধ্যে মোজাম্মেল একাই ৯০টি কিনে নেয়। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আমার ভাই সাইফুল ইসলাম এ মাছ চাষে জড়িত হলেও আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ফলে রাজনৈতিক প্রভাব নেই বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রামের লোকজনকে নিয়ে মাছ চাষ করছি। এসব মাছ চাষে সবাইকে মাছ দিয়েই খাই। কাউকে বঞ্চিত করি না। তবে কিছুলোক পুঁজি দিতে পারেনি বিধায় বাদ দিয়েছি। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, কোন সরকারী খাল কোন সিন্ডিকেটের আওতায় থাকতে পারে না। তবে পূর্বাচলের বিষয়গুলো রাজউকের দেখার বিষয়। তবু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সুরাহা করব। এ বিষয়ে পূর্বাচলের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) উজ্জল মল্লিক বলেন, লেকগুলোসহ পূর্বাচলের সবকটি স্থানের উন্নয়ন কাজ চলছে। ফলে কে বা কারা কিভাবে দখলে নিয়েছে এমন তথ্য নেই। মাছ চাষ বিষয়টা স্থানীয়দের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
×