ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিএএবিরোধী বিক্ষোভ

ভারতে সহিংসতা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৪ জানুয়ারি ২০২০

ভারতে সহিংসতা বেড়েছে

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ব্যাপকতা ভারতজুড়ে আরও মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানোর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তরুণরা। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। ভারতীয় পুলিশ সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে মাগিনা শহরে এক পড়ো বাড়িতে তাড়া করেছে একদল মুসলিম তরুণকে। তারা যেখান থেকে তরুণদের আটক করে এক অস্থায়ী কারাগারে পুরে। এ ছেলেরা ও তাদের সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ওপর নির্যাতন করেছেন। এদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সের চার তরুণ নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছে, পুলিশ কাঠের লাঠি দিয়ে তাদের প্রহার করেছে এবং বিভেদকারী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য তাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। তিন তরুণের শরীরে প্রহারের কালশিরে বা অন্যান্য আহত- চিহ্ন দেখা যায় স্পষ্টত। অনেক ভারতীয়ের আশঙ্কা যে, এ নতুন আইন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত বৈষম্যমূলক এবং সেক্যুলার ও পরমতসহিষ্ণু দেশ হিসেবে ভারতের যথার্থ ভিত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। নাগিনায় আটক ছেলেরা মুক্তি পাওয়ার পরপর বলেছে, ২০ ডিসেম্বর বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অভিযোগে তাদের ৩০ ঘণ্টা আটকে রেখে ভীতি প্রদর্শন করেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুটি ছেলে বলেছে, তাদের প্রহারের সময় পুলিশ তাদের বলেছে, এ কারাগারে তোমরা মরবে। উত্তর প্রদেশে কয়েকটি শহরে তিন ডজনের বেশি লোক তাদের সাক্ষাতকারে বলেছেন, মুসলিম বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে প্রায় সকল সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। বিক্ষোভে কেবল এ রাজ্যেই নিহত হয়েছে অন্তত ১৯ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গোলা-বারুদ ব্যবহার করেছে। অনেকের বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করেছে, অর্থ লুট করেছে এবং নারীদের ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। বিবিসির তোলা ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ একটি মুসলিম পাড়ায় নিরাপত্তা ক্যামেরা ও থেমে থাকা মোটরগাড়ির জানালার কাঁচ ভাংচুর করেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয় যে, সহিংসতায় জড়িত বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য উত্তর প্রদেশের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের প্রতি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। কিন্তু নিরাপরাধ লোকেরাও এ লক্ষ্যের শিকার হয়েছে। পুলিশ ৭২ বছর বয়স্ক এক মুসলিমকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করেছে এবং তাকে বলেছে, মসলমানদের স্থান মাত্র দু’জাগায়, পাকিস্তান বা সমাধিস্তান। মানবাধিকারকর্মী ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের এক সাবেক কর্মকর্তা হর্ষ মান্দের বলেন, তিনি সহিংসতা বিধ্বস্ত কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন এবং দেখেছেন পুলিশ রান্নাঘর ধ্বংস করেছে। টেলিভিশন সেট ভাংচুর করেছে এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের নাগরিকত্ব আইনে পুলিশ যেন মুসলমানদের পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানে ঠেলে দেয়ার জন্য লাইসেন্স পেয়েছে। তারা মনে করছে, ‘এটা দেশ বিভাগের অসম্পূর্ণ কাজ।’ পুলিশ অবশ্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে। পার্লামেন্টে ১১ ডিসেম্বর সিটিজেনশিপ এ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাস হওয়ার পর দেশের অনেক শহরে রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ লোক এবং তারা আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। মুসলমানরা উত্তর প্রদেশে ২২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার পুলিশ। নাগিনায় জামা মসজিদে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে। তারা ১শ’র বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করে এক খালি ব্যাডমিন্টন কোর্টে নিয়ে যায় এবং তাদের লাঠি পেটা করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন। আটক তরুণরা সংখ্যায় ছিল অন্তত ২১ জন। ২০ ডিসেম্বরের বিক্ষোভে সহিংসতায় আজও ভারাক্রান্ত অনেকগুলো শহর। ওইদিন বিক্ষোভে যুবক সুলেমান গুলিতে নিহত হয়। এ ধরনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে শেষ হয়ে গেছে। এ কথা তার পরিবার বিশ্বাস করতে পারে না আজও। সুলেমানের আঙ্কেল আনোয়ার উসমানি তার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, সুলেমান প্রতিদিন ভোর ৫টায় ওঠে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে এ দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে এভাবে হত্যা করা হলো।
×