ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তির বিস্ময়

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ৪ জানুয়ারি ২০২০

প্রযুক্তির বিস্ময়

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষেরই আবিষ্কার। এখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে সংযুক্ত থেকে এমন সব উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাচ্ছে যে তাতে এক উদ্ভাবক বা আবিষ্কারক ছাড়া বিশ্বের বাদবাকি মানুষই বিস্ময় মানছে। মানুষের কল্পনাকেও যেন ছাড়িয়ে যেতে বসেছে একেকটি উদ্ভাবন ও উৎকর্ষ। বলাবাহুল্য, প্রযুক্তির নিত্য উৎকর্ষ দাক্ষিণ্যে পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিজ্ঞানীদের নিত্যনতুন আবিষ্কারে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে আমাদের জগত। প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে গতানুগতিকতা, পরিবর্তন ঘটছে মানুষের জীবনধারায়। মানুষের জীবন সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তি অবদান রাখছে বড় মাত্রায়। জীবনের মুখ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তির খোঁজ করে চলেছেন। মানুষের প্রয়োজনে অবিকল মানুষেরই মতো যন্ত্রমানব (রোবট) যখন বিজ্ঞানাগারেই উৎপন্ন হলো, মানুষ চমকে উঠেছিল। মানুষের সহযোগী অবস্থানে থেকে এই রোবট কি কোনকালে মানুষেরই প্রতিযোগী তথা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে? মানুষেরই হাতে সব কিছুর জন্ম ও লয় এবং তার নিয়ন্ত্রণ। তাই দুশ্চিন্তারও কিছু নেই। তবে মানবকল্পনায় এসেছে মানুষের সাহায্যকারী রোবটের মানবশত্রু হয়ে ওঠার বিষয়টি। এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষ তা অবলোকন ও উপভোগ করেছে। কম্পিউটার তৈরি হওয়ার পর মানুষের মনে হয়েছিল এরপর কি? জাদুর এই বাক্স কী না পারে। এখন ভারি চৌকোনা বড়সড় স্থির যন্ত্রের জায়গাটি নিয়ে নিয়েছে মুঠোয় বন্দী বিশ্বপর্যটক মোবাইল ফোন। মিনি কম্পিউটারের মতোই হয়ে উঠেছে এখন মোবাইল ফোন। রাজ্যের সব কাজই সে করে দিচ্ছে। একেকটি নতুন আবিস্কার আসে আর বাতিল হয়ে যায় পুরনো প্রযুক্তি। হাতে একটি স্মার্ট ফোন থাকলে ঘড়ি, টর্চলাইট, পোস্ট অফিস, মানি অর্ডারের আয়োজন, এমনকি রেডিও-টিভিরও দরকার নেই, দশভুজার মতো বিচিত্র ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন। অবশ্য এর সঙ্গে সহায়ক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট। মহাকাশজুড়ে হাজার হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর দৃশ্যপট বদলে দেয়ার নেপথ্য নায়ক। শুধু কম্পিউটার নয়; ল্যাপটপ, আইপড, ট্যাব, এ্যাপল, এ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মোবাইল এ্যাপ, রোবট, ড্রোন, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে কেনাকাটা, রাইড, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, ফিসিং প্রযুক্তিসহ বহু অভিনব প্রযুক্তি বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। আমাদের দেশেও দিন দিন বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে আজকের প্রজন্ম। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে। আগামী বছরগুলোতে এই গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। আশাজাগানিয়া খবর হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগরী। প্রজন্মের চোখ এখন অনলাইনে। ক্যানালিস রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে পাঁচ শ’ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১০ সালে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩০ কোটি। ২০১৯ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটিতে। আরেকটি বিষয় হলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য ২০১৯ সালটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। নিরাময় অযোগ্য অসুখের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার থেকে শুরু করে প্যারালাইসিস সারানোর উপায় বের করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে এ বছর। সবচেয়ে বিস্ময়কর বুঝি ডিএনএ- কে সম্পাদনা করার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন। ডিএনএতে থাকা যে কোডের কারণে নানান রোগ-বালাই হয় সেগুলো ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত সারানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম প্রাইম এডিটিং। মানবকল্যাণে প্রযুক্তি আর কী বিচিত্র বিস্ময় আগামীতে সামনে মেলে ধরে সেটিই দেখার বিষয়।
×