ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৩ জানুয়ারি ২০২০

সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল কুমিল্লা

জিএম মোস্তফা ॥ সুপার ওভারে সুপার জয় পেয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) এবারের আসরে প্রথম সুপার ওভারে গড়ানো ম্যাচে বৃহস্পতিবার তারা নাটকীয়ভাবে হারিয়েছে সিলেট থান্ডারকে। ম্যাচে এক সময় মনে হয়েছিল বেশ বড় জয়ই পেতে যাচ্ছে কুমিল্লা। কেননা ৩৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। সেখান থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে প্রায় জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় জয় মিলেনি। সিলেটকে হারানোর ফলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন ধরে রাখল কুমিল্লা। সুপার ওভারে কুমিল্লার হয়ে বল করতে আসেন মুজিব উর রহমান। তার প্রথম বল থেকে বাউন্ডারি তুলে নেন সিলেটের রাদারফোর্ড। তবে পরের পাঁচ বলে দারুণ নিয়ন্ত্রণ রেখে মাত্র ৩ রান দেন মুজিব। ফলে এক ওভারে কুমিল্লার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ রান। সে লক্ষ্যে প্রথম দুই বলেই রানআউট করার দারুণ সুযোগ ছিল সিলেটের। তবে দুইবারই রান আউট করার সুযোগ মিস করেন বোলার নাভিন-উল-হক। তা না পারলেও তৃতীয় বলে দারুণ এক স্লোয়ারে সৌম্য সরকারকে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ পরিণত করেন। কিন্তু চতুর্থ বলে অসাধারণ বাউন্ডারি মেরে স্কোর সমান করেন ডেভিড উইজে। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে কুমিল্লার ছুড়ে দেয়া ১৪১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সিলেট থান্ডার। দলীয় ৩৩ রানেই প্রথম সারির ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। সানজামুল ইসলামের হাতে কট এ্যান্ড পবাল্ড হয়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস। ২ রান করা আরেক ওপেনার রনি তালুকদারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মুজিব উর রহমান। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন (১৩), শেরফান রাদারফোর্ড (১৫) এবং আন্দ্রে ফ্লেচারও (১) উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। তবে বিপর্যস্ত দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন সোহাগ গাজী এবং নাজমুল হোসেন মিলন। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩ বলে ৫০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তারা। নাজমুল মিলন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ৫২ রান করে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও আউট হয়ে যান সোহাগ গাজী। পরবর্তীতে নাভিন-উল-হকের ১৫ আর মনির হোসেনের ১৬ রানের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান সংগ্রহ করে সিলেট থান্ডারও। যার ফলে নাটকীয়তা জমিয়ে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। বিপিএলে এটা দ্বিতীয় সুপার ওভারের ম্যাচ। টি২০ ক্রিকেট সবমিলিয়ে ৪৩তম। বিপিএলে এবারের আসরে শুরু থেকেই বাজে খেলে সিলেট থান্ডার। বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামে সিলেট থান্ডার। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সিলেট। এবার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে হারিয়ে ‘প্লে-অফে’ খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও টিকিয়ে রাখতে হোম ভেন্যু সিলেটে খেলতে নামে। ৩ উইকেট করে নেয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাদারফোর্ড, এবাদত হোসেন ও ২ উইকেট নেয়া সোহাগ গাজীর অসাধারণ বোলিংয়ে আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪০ রান করে কুমিল্লা। শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা যে শুরুতে ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন, সেটিই কুমিল্লার ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে থাকে। শুরুটা অসাধারণ করে কুমিল্লা। ওপেনিংয়ে উপুল থারাঙ্গা ও ভ্যান জিল মিলে ৪২ রানের জুটি গড়েন। ৪ ওভারেই তা হয়েও যায়। এই সময়ে ভ্যান জিল (১০) আউট হতেই কুমিল্লার উইকেট পড়ার ধুম যেন শুরু হয়ে যায়। দলের ৭৭ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। থারাঙ্গা প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ৩১ বলে ৯ চারে ৪৫ রান করে দলের ৭৭ রানে আউট হন। এর আগে সৌম্য সরকার (৫) ব্যাট হাতে নামেন, আর সাজঘরে ফিরেন। ১০ ওভারে গিয়ে ৮০ রান করে কুমিল্লা। রানের গতি ঠিকই থাকে। তবে আর ৭ রান যোগ হতেই ইয়াসির আলীও (৫) যখন আউট হয়ে যান, তখন রানের গতিতে ভালভাবে প্রভাব পড়ে। দলের ১০০ রান হওয়ার পর ১১০ রানে গিয়ে ডেভিড উইজ (১৪) আউট হলে, বিপদেই পড়ে যায় কুমিল্লা। শুরুতে যেভাবে পথ চলা গেছে, মনে হচ্ছিল ১৭০-১৮০ রান হবে। কিন্তু টপাটপ উইকেট পড়াতে তা হওয়ায় ভালভাবেই বাধা তৈরি হয়। সাব্বির রহমান রুম্মন উইকেটে থাকেন। তাতে অনায়াসেই ১৫০ রানে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু তিনিও বেশি দূর যেতে পারেননি। ২৫ বলে ১৭ রান করে আউট হয়ে যান। যেন টি২০ নয়, টেস্ট খেলতে নামেন সাব্বির। তখন দেড় শ’ রানও যে হবে না, তা বোঝা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান করতে পারে কুমিল্লা। রাদারফোর্ড, এবাদত ও সোহাগ গাজীর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অল্পতে আটকে যায় কুমিল্লা। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেন মুজিব উর রহমান।
×