ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানের আগে আরও ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৩ জানুয়ারি ২০২০

 রমজানের আগে আরও ২ লাখ টন পেঁয়াজ  আমদানির সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চাহিদা মেটাতে আগামী রমজান মাসের আগে আরও ২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দাম কমাতে চিনি ও ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি এবং মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানান। বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী ৩১ মার্চের আগে চার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এরমধ্যে সিটি গ্রুপ আমদানি করবে ৫০ হাজার টন, মেঘনা গ্রুপ ৫০ হাজার টন, এস আলম গ্রুপ ৫০ হাজার টন এবং রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সাধ্যমতো পেঁয়াজ আমদানি করবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সহায়তা দেবে সরকার। প্রসঙ্গত, ইফতার তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন সব ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল, ছোলা, আদা, রসুন ও খেজুরসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি করে মজুদ বাড়ানো হবে। কোনভাবেই যাতে এবারের রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম না বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে সরকার। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিগত দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। আগামী রমজানে ন্যায্যমূল্যে পণ্যের যোগান দিতে আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে ব্যবসা করলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবেন। ভোজ্যতেল ও চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিলমালিকরা। তাদের মতে, আমদানিতে শুল্কারোপ, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি এবং দেশে চাহিদা বাড়ার কারণে দাম ভোজ্যতেলের বাড়ানো প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর আবেদনের পর থেকেই বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। খোলা সয়াবিনে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ৯-১২ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনির দামও বেড়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, চিনি, ভোজ্যতেলে ভ্যাট ট্যাক্স কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এর আগে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, চলতি বাজেটে অপরিশোধিত চিনির টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৩০ শতাংশ। পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্টে চিনি আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ ভ্যালু) টনপ্রতি ৩২০ ডলার নির্ধারণ করে এর ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ডিসেম্বরে ট্যারিফ ভ্যালু বাড়িয়ে টনপ্রতি ৩৫০ ডলার করা হয়। আগে থেকে প্রতিটন চিনিতে আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) ছিল ১৫ শতাংশ। আমদানিকারকদের দাবি, এর বাইরেও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) আরোপ করা হয়েছে নতুন বাজেটে, যা প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এছাড়া চলতি বাজেটে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা নেয়া হয়। এর আগে পরিশোধনকারীরা তিন পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে ভ্যাট আমদানি পর্যায়ে দিতেন। তাদের জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তিন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। যদিও রেয়াত সুবিধা থাকবে। এতে ভোজ্যতেলের ওপর করভার তিন টাকার মতো বেড়েছে বলে জানা গেছে। এসব কারণে রোজার আগে দাম নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর থেকে শুল্ক কমানোর কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত না এলেও বিষয়টি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় চায় এফবিসিসিআই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য, বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, মৎস্য ও পশুসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সময় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা, আমদানি ও আন্তর্জাতিক মূল্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করে থাকে। দেশের ৬৪ জেলায় তাদের মনিটরিং টিম কাজ করে। তারা শুধু ক্রাইসিস হলেই বেশি কাজ করে। এজন্য তাদের আরও একটিভ করতে হবে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের চেম্বারগুলোকে টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে আরও ভাল হতো। ওই বৈঠকে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল রহমান বলেন, উৎপাদন ও সাপ্লাই চেনের সমন্বয় থাকতে হবে। সঠিক তথ্য না থাকলে কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যায় না। তাই মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় এনে পলিসিগত কোন সমস্যা থাকলে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আর আশা করছি ব্যবসায়ীরা রমজানে নীতি ও নৈতিকতা বজায় রাখবে। তাহলে রমজানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
×