ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিষয় হেগ আদালতে অস্বীকার করেনি মিয়ানমার

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৩ জানুয়ারি ২০২০

  রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিষয় হেগ আদালতে অস্বীকার করেনি মিয়ানমার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে সব ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শুনানির মুখোমুখি হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিষয়ে সেখানে অস্বীকার করেনি মিয়ানমার। তবে ‘গণহত্যা’ হয়েছে সেটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে তারা। খবর বাসস ও বিডিনিউজের। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘ফ্ল্যাশ অন রোহিঙ্গা জেনোসাইড’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দুই দফা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, আমরা তাদের এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গাকে নিজেদের নাগরিক বলে মেনে নিয়েছে। তারা হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করেনি। তাদের আন্তরিকতার অভাব থাকায় দুই দফা উদ্যোগ নিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু তাদের জোর করে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় না। তারা যেন নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমাদের জনগণ তোমাদের বিশ্বাস করছে না। তোমরা রোহিঙ্গা নেতাদের দেশে নিয়ে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখাও। তাহলে তাদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে আমরা মিয়ানমারকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু এর কোন জবাব আসেনি। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, কক্সবাজারে স্থানীয়দের থেকে রোহিঙ্গা দ্বিগুণ। স্থানীয় জনসংখ্যা পাঁচ লাখ। আর সেখানে এই মুহূর্তে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ কারণে কক্সবাজারের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানকার তরুণরা চাকরি পাচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও, তা যথেষ্ট নয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ সরকারের পাঁচ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই অর্থ আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করতে পারতাম। শিল্পকলা একাডেমি, দৈনিক ভোরের কাগজ এবং প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম যৌথভাবে সাত দিনের এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোকচিত্রী মাহমুদ হোসেন অপু, কে এম আসাদ, সুমন পাল ও সালাউদ্দিন আহমেদের তোলা শতাধিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। স্বাগতিক দেশের সরকার, নীতিনির্ধারণী মহল এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানির প্রবৃদ্ধি অক্ষুণœ রাখতেও নির্দেশ দেন তিনি। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন প্রধানদের কাছে সম্প্রতি লেখা এক পত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কৃষিপণ্য রফতানির সম্ভাবনাময় নতুন বাজার অনুসন্ধানে মিশনসমূহকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। সার্বিক বিনিয়োগ এবং রফতানি বৃদ্ধিতে আরও মনোযোগী হতে হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করতে পারি। ড. মোমেন পত্রে উল্লেখ করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি এবং আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের নতুন বাজার তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিও আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠনের মাধ্যমে সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করছে। বাংলাদেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে মিশনসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিদেশী বিনিয়োগবান্ধব যেসব নীতি গৃহীত হয়েছে এবং যেসব প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তা স্বাগতিক দেশসমূহের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নিকট তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে মিশনসমূহ ভূমিকা রাখতে পারবে। এ বিষয়ে সকলকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন প্যাকেজের বিবরণ ইত্যাদি সকল সহায়তা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রদান করবে। ড. মোমেন পত্রে উল্লেখ করেন, বিগত দশকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি অভাবনীয় বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকার সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে এ সকল মিথ্যা প্রচারকে প্রতিরোধ করার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের এ বিষয়ে বিশেষ করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের যে কোন প্রচার সম্পর্কে দূতাবাসসমূহকে সজাগ থাকতে হবে এবং উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতিতে দূতাবাসসমূহকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার জন্য মিশনসমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×