ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না গুজবের কারণে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩ জানুয়ারি ২০২০

  শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না গুজবের কারণে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, গুজবের (রিউমার) কারণে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এই গুজব বন্ধ করার জন্য প্রচলিত আইন শক্তভাবে প্রয়োগ করা হবে। আইনি দুর্বলতার অভাব আগামীতে পূরণ করা হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো বা ডিভ্যালুয়েশন করা হবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এনইসি ভবনে শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে শেয়ারবাজারে আরও গতিশীল করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে। বৈঠকে ডিএসইর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো: সুশাসন (কমপ্লায়েন্স) একটু দুর্বল, এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করার দাবিটিও সরকার আগামীতে বাস্তবায়ন করবে। মুস্তফা কামাল বলেন, আরেকটা গুজব হলো টাকার ডিভ্যালুয়েশন বা ডলারের বিপরীতে মান কমানো, আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করব না, টাকার ডিভ্যালুয়েশন করার কোন দরকার নেই। আমাদের রেমিটেন্স খাতে ডিভ্যালুয়েশন করার কথা বলা হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশ। এক মাসে একটা আইটেমে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাস। এই রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারবে না। এটা প্রমাণ হিসেবে আনলাম এই কারণে এখানে আমরা টাকার মান কমাই নাই। শুধু এই খাতকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছি। যার কারণে আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সুতরাং কোন খাতেই টাকার মান কমানোর আশঙ্কা নেই। মুস্তফা কামাল বলেন, ডিএসইর একটি দাবি ছিল যে, আমরা কিছু কর কেটে নেই। অগ্রিম আয়কর কেটে নেয়া হয়। লেনদেনের ক্ষেত্রে সেই হারটা আমরা কমাতে পারি কি না। আমরা তাদের বলেছি সেটা বিবেচনা করব। তাদের আরও দাবি ছিল এক্সসেস টু ব্যাংকিং ফাইন্যান্স। অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন ক্লাইন্ট ব্যাংকে গিয়ে ঋণ নিতে পারেন, তেমনিভাবে শেয়ারবাজারে যারা ব্যবসা করেন তারাও সেই সুযোগটা যেন পান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশের কারো জন্যই সীমাবদ্ধতা নেই যে ব্যাংকে যেতে পারবে না, আমরা বলছি ব্যাংক আইনে অন্যরা যেভাবে ঋণ পান, সুযোগ-সুবিধা পান, শেয়ারবাজারে যারা ব্যবসা করেন, তাদের জন্যও সেই সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তবে নিরাপত্তা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য আরও ভাল দিক হলো তারা অতীতে টাকা ঋণ নিয়ে সরকারকে সেটা শোধ দিয়েছেন। সুতরাং আমরা মনে করি তাদের জন্য আরও সুযোগ ভাল। এজন্য আমরা বলছি সেটাও থাকবে। ভাল সরকারী শেয়ার বাজারে আনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি, আমি এর ওপর কাজ করছি, এটা করতে সময় লাগে। কিন্তু দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না কবে নিয়ে আসব। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে একমত ভাল শেয়ার, সরকারী শেয়ার, যেগুলোর মৌলিক শেয়ার এবং ফান্ডামেন্টাল স্ট্রং, সেই স্ট্রং ফান্ডামেন্টাল শেয়ারগুলো বাজারে নিয়ে আসার জন্য সে কাজটাও আমরা করব। অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব আশাদুল ইসলাম, বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, কমিশনার ড. হেলাল উদ্দিন নিজামী ও ড. স্বপন কুমার বালা উপস্থিত ছিলেন। আর ডিএসইর পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, ভারপ্রাপ্ত এমডি আব্দুল মতিন পাটোয়ারি, পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী এবং মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ডিএসইর প্রস্তাব বিদ্যমান মন্দাদশা থেকে পুঁজিবাজারের উত্তরণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম। বৈঠকে ডিএসইর উপস্থাপন করা সুপারিশগুলো হলো : পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ব্যবস্থা করা। বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করার দাবিও জানান হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রামীণফোন এবং বিটিআরসির দ্বন্দ্বের দ্রুত নিষ্পত্তি। ডিএসই এবং পুঁজিবাজারের লেনদেনের ওপর কর হ্রাস করার দাবিও জানানো হয়েছে। অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কথাও ডিএসইর দাবিতে উঠে এসেছে।
×