ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একটিও রক্ষা পায়নি দখল থেকে ;###;৩৭ নদ-নদী বেশি দখল দূষণের শিকার ;###;৪০ হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত, চলছে উচ্ছেদ অভিযান ;###;প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ দখলে যুক্ত

মহাপরিকল্পনা দশ বছরের ॥ নদ-নদী বাঁচাতে

প্রকাশিত: ১০:১০, ৩ জানুয়ারি ২০২০

মহাপরিকল্পনা দশ বছরের ॥ নদ-নদী বাঁচাতে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশের নদ-নদী রক্ষায় কঠোর অবস্থানে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের শুরু থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়। বছরের শেষে ২৩ ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া অভিযান জানান দিল নতুন বছর নদীর বুক আরও খালি হবে নদী। ফিরে পাবে প্রাণ, নাব্য। বছরজুড়ে থাকবে পানি প্রবাহ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ফিরবে স্বরূপে। দখলের বদনাম থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। যদিও এই প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগবে ২০২২ সাল পর্যন্ত। কারণ দেশের ৪০৬ নদ-নদীর সবকটিই কমবেশি দখলের শিকার। পুরনো বছরে নদী তীরের দু’পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে সারাদেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন দেখা গেছে। যদিও দখল প্রক্রিয়ার সঙ্গে বেশিরভাগ যুক্ত ছিলেন প্রভাবশালীরাই। তবুও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অভিযান অব্যাহত। সরকারের তিন বারের মেয়াদে সকল মহল থেকেই দাবি ওঠে নদ-নদী দখলমুক্ত করার। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও খুব একটা কার্যকর সম্ভব হয়নি। মূলত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বারবার নেয়া উদ্যোগ থমকে যায়। তেমনই উচ্ছেদ অভিযানে প্রভাবশালীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যতই থাক না কেন, সরকার যদি ইচ্ছা করে নদী দখলমুক্ত করা হবে- তাহলে তা সম্ভব। এবারের অভিযানে তা প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক সদিচ্ছা এরকম অভিযানের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এই অভিযানের মধ্য দিয়ে নদী তার জায়গা ফিরে পেল। ভূমিদস্যুরাও জবাব পেয়েছে, অবৈধ দখল করে যেসব সময় টিকে থাকা যায় না। তিনি বলেন, নৌপথ ও নদী রক্ষায় অভিযান আরও বেগবান করতে হবে। কোন নদীর বুকেই অবৈধ স্থাপনা আমরা চাই না। নদীর জমি নদীকে ফিরিয়ে দেয়া হোক। জমি লাগানো হোক জনকল্যাণে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০১৮ সালে সারাদেশে নদীর বুকে ৪৪ হাজার দখলদার চিহ্নিত করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশজুড়ে নদ-নদী দখলমুক্ত অভিযান শুরু করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। এর পর পরই একযোগে নদ-নদী ও খাল দখলমুক্ত অভিযান সবার নজরে আসে। বছরের শুরুতে রাজধানীর আশপাশের নদী দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু হয়েছিল। শেষ দিকে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে নদীকে তার প্রবাহে ফেরানোর তোড়জোড় চলবে এমন প্রত্যাশা সকল মহলের। এদিকে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, সারাদেশে ৪৯ হাজার ১৬৫ জন নদ-নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত। ক্ষমতাবানরা বেশি দখল প্রক্রিয়ায় যুক্ত বলেও প্রতিবেদনে উঠে আসে। নদীর অধিকার প্রাপ্তি মানুষের মতো নদীও ভোগ করতে পারবে সাংবিধানিক অধিকার। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশেও আসে এই ঐতিহাসিক রায়। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ নদীকে ‘জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন’ অর্থাৎ আইনী সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেন। রাজধানীর পাশে প্রবাহিত তুরাগ নদকে ‘আইনী সত্তা’ ঘোষণা করা হয়। ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ রক্ষায় পূর্বে দেয়া রায়ের বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দেশের সব নদীর দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশনাও দেয় আদালত। আর পুরো কর্মকা- সমন্বয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করা হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ঢাকার ফার্মগেটে জাতীয় নদী রক্ষা অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘নদীর উন্নয়নে পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়-দায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে নদী-খালসহ অন্যান্য জলাশয় ইজারা দেয়ার সমালোচনা করলেও বিভিন্ন সময় নদী ইজারা দেয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। নদীকে কখনও খাস জমি হিসেবে ইজারা দেয়ার নিয়ম না থাকলেও যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে ভায়না নদী আরএস পর্চায় হয়ে ওঠে ধানী জমি। আর এভাবে ‘সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে’ খন্ড খন্ড করে মাছের ঘের ও চাষের জমি হয় ভায়না নদী। জাতীয় বা স্থানীয়- কোন ধরনের নির্বাচনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট। কোন নদী রক্ষা পায়নি নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা ৪০৬টি, এর একটিও দখলদারদের হাত থেকে রেহাই পায়নি বলে জানিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারের চিহ্নিত করা দখলদারদের একটি তালিকা সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রকাশ করেছে। সেখানে সারাদেশে নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার দখলকারীর সংখ্যা প্রায় ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। এই দখলকারীদের মধ্যে ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাড়াও রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও শিল্প-কারখানা। এ তালিকা এখনও অসম্পূর্ণ এবং দখলদারদের চিহ্নিত করার এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে নদী দখলকারীদের বিভাগভিত্তিক যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ৬২ জেলায় নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার দখলকারী হিসেবে ৪৬ হাজার ৮৩৯ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম এসেছে। এই তালিকা অনুযায়ী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করেছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৫৯। আর ২ হাজার ১৮৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, বাকলিয়া ও চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছে। গত ১ জুলাই প্রকাশিত হাইকোর্টের এক রায়ে নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়। দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার পাশাপাশি নদ-নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণে নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করা হয়। সেই রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ীই নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে নোয়াখালী জেলায় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৮৩ জন দখলকারীর নাম এসেছে। আর সবচেয়ে কম ১৪ জন দখলকারীর তালিকা এসেছে লালমনিরহাট থেকে। কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ময়মনিসংহ ও পঞ্চগড় জেলা বাদে ৬২ জেলার তালিকা আমরা এ পর্যন্ত প্রকাশ করেছি। বাকিদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে। হাইকোর্টের রায়ে স্থানীয়ভাবেও দখলদারদের নাম-ঠিকানা উন্মুক্ত স্থানে টাঙ্গানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নদী পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জরিমানা ডিসেম্বর থেকে দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে অবৈধ দখদকার উচ্ছেদের অভিযান শুরু হলেও বছরজুড়ে তুরাগের বিভিন্ন অংশ পুনরুদ্ধারে সক্রিয় থেকেছে বিআইডব্লিউটিএ। বছরের শুরুতেই একটি ডেভেলপার কোম্পানির কব্জা থেকে মাটি ভরাট করা তুরাগের একটি অংশ উদ্ধারের পর খনন করে ২৫ জুলাই তা নৌ চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। চ্যানেলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ হাজার ফুট, চওড়ায় ২৫০ থেকে ৪০০ ফুট। ভরাট একটি চ্যানেল পুরোপুরি উদ্ধার করার ঘটনা ‘এই প্রথম’ বলে বলেছিলেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন। ৪০ হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সারাদেশের নদ-নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছেন তারা। এসব উচ্ছেদের বিষয়ে গত ৫ নবেম্বর এ মন্ত্রণালয় থেকে জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ পাঠানো হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে গাজীপুর জেলার টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, ৬৪ জেলার নদ-নদী, খাল, ছড়াসহ অন্যান্য সরকারী জলাধারের তীরের তালিকা করা অবৈধ স্থাপনা একযোগে উচ্ছেদ চলছে। ১০ বছরের মহাপরিকল্পনা ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ছাড়াও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী দখল ও দূষণমুক্ত করে নাব্য ফেরাতে ১০ বছর মেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। সচিবালয়ে বুধবার এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয় বলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। সভা শেষে নিজের দফতরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে গ্রাম-গঞ্জের সকল মানুষের কাছে উন্নয়নের সব সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। তেমনিভাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করতে হবে, নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীগুলো দখল-দূষণমুক্ত করে নাব্য ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত এই টাস্কফোর্স কমিটিতে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, কমিটি এরই মধ্যে একটি খসড়া মাস্টার প্ল্যান করেছে, সেই মাস্টার প্ল্যানের ওপর আলোচনা করে নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি। একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রী জানান, তারা অনুমোদিত এই খসড়া এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়ে উনার অনেক আন্তরিকতা, এটার বিষয়ে তিনি অনেক গুরুত্ব দেন, সেই হিসেবে নিজস্ব অনেক তথ্য জানা আছে। যদি কোথাও ইনপুট দেয়া দরকার মনে করেন, সংযোজন করা দরকার মনে করেন, সেটা করবেন। মহাপরিকল্পনায় কী আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই মাস্টার প্ল্যানকে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’, ‘স্বল্পমেয়াদী’, ‘মধ্যমেয়াদী’ এবং ‘দীর্ঘমেয়াদী’ পরিকল্পনায় ভাগ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ বছর। প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। নদী দখলমুক্ত করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরপর ওয়াসার নেতৃত্বে স্যানিটেশনের কাজ শুরু হচ্ছে। দূষিত পানি যেন নদীতে না যায় সেজন্য ঢাকার স্যুয়ারেজ লাইনও ঠিক করার কথা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়। নদী দখলকারীদের ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে আইনে সংশোধন আনার কথা বলেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। অন্যদিকে নদী দখলকারীর তথ্য দিলে তথ্যদাতাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণাও দেয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। বেশি দখল দূষণের শিকার ৩৭ নদী দেশের ৪০৩ নদ-নদীর মধ্যে ৩৭টি সবচেয়ে বেশি দখল দূষণের শিকার। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলের বড়াল নদী, কুমিল্লা অঞ্চলের ডাকাতিয়া, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী, হালদা, নেত্রকোনার মগড়া, খুলনার ময়ূর, হবিগঞ্জের খোয়াই ও সোনাই, সিলেট অঞ্চলের সুরমা, পিয়াইন, বিবিয়ানা ও খাসিয়া, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ অঞ্চলের নবগঙ্গা, টাঙ্গাইলের লৌহজং ও লাঙ্গলিয়া, ঢাকা অঞ্চলের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বংশী, কক্সবাজারের বাঁকখালী, ময়মনসিংহ অঞ্চলের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, রংপুরের ঘাঘট, ইছামতী, দিনাজপুরের পুনর্ভবা, বগুড়ার করতোয়া, নওগাঁ-জয়পুরহাটের ছোট যমুনা, নাটোরের নারদ, কুড়িগ্রামের সোনাভরি, বরিশাল অঞ্চলের সন্ধ্যা, ফরিদপুরের কুমার, সাতক্ষীরার আদি যমুনা, যশোরের কপোতাক্ষ ও ভৈরব, নরসিংদী অঞ্চলের হাড়িধোয়া এবং গাজীপুরের চিলাই। এই ৩৭ নদ-নদীতে তিন ধরনের দখল রয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে স্থায়ী আবাসন বা বাণিজ্য কেন্দ্র ছাড়াও সরকারী অপরিকল্পিত স্থাপনার মাধ্যমেও নদ-নদী দখলের শিকার হচ্ছে। অপরিকল্পিত স্থাপনা বলতে সাধারণত পরিকল্পনাহীন ও অবৈজ্ঞানিকভাবে নির্মিত আড়াআড়ি সড়ক, বাঁধ ও সøুইসগেটকে বোঝানো হয়ে থাকে। নদীবিষয়ক নাগরিক সংগঠন রিভারাইন পিপল পরিচালিত এক প্রাথমিক সমীক্ষায় দখল দূষণের এই চিত্র ফুুটে উঠেছে। তারা এ নিয়ে একটি প্রাথমিক সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। সমীক্ষায় সংগঠনটি তিন ধরনের দখল ও দূষণের তিন প্রকার উৎস চিহ্নিত করেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যেসব নদ-নদী ইতোমধ্যে মৃত বা বিলুপ্ত, সেগুলো এই সমীক্ষার আওতার বাইরে। কিছু দুষ্টু চক্রের কারণে নদী দখল করার কার্যক্রম পুরোপুরি সফল হতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। রবিবার সচিবালয়ে চার নদী দখল এবং দূষনমুক্ত করা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি একথা জানান। তিনি জানান, ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালু- এই চার নদীর তীর দখলমুক্ত করা হলেও আবার সেগুলো বেদখল করছে কিছু অসাধু চক্র। তবে যত বড় চক্রই হোক ঢাকার চারপাশের নদী তীর দখলমুক্ত করা থেকে সরে যাবে না সরকার। অবৈধ দখল উচ্ছেদ অবশ্যই করা হবে, যতই কঠিন হোক এ কাজ। তিনি আরও জানান, নদী তীর দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম এক বছরে যেভাবে সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে, তাতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে।
×