ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরে বেড়েছে ৬০টি

চট্টগ্রাম বন্দরে রেকর্ড জাহাজ হ্যান্ডলিং

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৩ জানুয়ারি ২০২০

 চট্টগ্রাম বন্দরে রেকর্ড  জাহাজ হ্যান্ডলিং

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৮০৭টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। ২০১৮ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছিল ৩ হাজার ৭৪৭টি। এক বছরে বেড়েছে ৬০টি, ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত বছরে ৩ মিলিয়ন কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৯ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউস) হিসেবে সর্বমোট ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৭টি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। এর আগের বছর যা ছিল ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে বন্দর ২০১৯ অর্থবছরে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ টন। এর আগের বছর যা ছিল ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ টন। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, জোয়ার-ভাটা নির্ভর কর্ণফুলী চ্যানেল দিয়ে কন্টেনারবাহী জাহাজ বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে আনা হয়। আবার গম, ছোলা, লবণ, ভোজ্যতেল ইত্যাদি খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলো বহির্নোঙরে রেখে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস করে নদীবন্দর, সাইলো জেটি ও শিল্পকারখানার কাছাকাছি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশে শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ছোট ছোট অনেক জাহাজ আনার চেয়ে বড় জাহাজে কন্টেনার ও কার্গো পরিবহন করতে পারলে খরচ সাশ্রয় হবে। আবার জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমাতে পারলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানো যাবে। একটি জাহাজ যদি একদিন বহির্নোঙরে অপেক্ষা করে তাহলে ১০-১৫ হাজার ডলার বেশি দিতে হয় আমাদের। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে বিষয়গুলো জানানো হয়েছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগও আলোর মুখ দেখছে। আশাকরি বে টার্মিনাল নির্মিত হলে বেশি ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ জোয়ারের অপেক্ষা না করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আসা যাওয়া করতে পারবে। একই সঙ্গে বন্দরের বিদ্যমান জেটিগুলো সচল রাখতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (বন্দর ও কাস্টম) খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হচ্ছে, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, আমদানি-রফতানি বাড়ছে। তাই বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। কিন্তু যদি প্রতিবেশী দেশগুলোকে বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিতে চাই তবে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব কার্গো বা কন্টেনার রাখার জন্য নতুন নতুন ডিপো তৈরি করতে হবে। বন্দরের বেশিরভাগ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয় নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চট্টগ্রাম কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি)। এখানে হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে আছে দেশের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ক্যাপ্টেন তানভির হোসেন বলেন, সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেন ও কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট যুক্ত করার ফলে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দ্রুততার মধ্যে আমরা একটি জাহাজের কন্টেনার লোড-আনলোড করতে পারছি। ২০১৯ সালে ৪৭ দশমিক ৮ ঘণ্টায় (২ দিনের কম) একটি জাহাজের কন্টেনার লোড-আনলোড করে আমরা রেকর্ড সৃষ্টি করেছি। তিনি জানান, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ছিল প্রায় ২ দশমিক ৬ দিন। আগামীতে এটি আরও কমে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটি জাহাজশূন্য করতে হয়েছে ২০১৯ সালে। তারপরও জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমেছে। আমাদের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এটি হলে আমরা আরও চারটি জাহাজ ভিড়াতে পারব। এ ছাড়া বে টার্মিনালের নির্মাণকাজও এ বছর শুরু করতে পারব আশা করি। তিনি বলেন, সরকারের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানেরা নীতি, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন ও সরবরাহ সাপ্লাই চেন নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
×