ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াজেদ হীরা

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ৩ জানুয়ারি ২০২০

 উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি

কৃষি অর্থনীতির অন্যতম প্রধান কা-ারি। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান আগের চেয়ে কমে এলেও জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অনেক বেশি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাউত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি কৃষিকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কৃষির উন্নতির জন্য বহুমুখী বাস্তব কর্মসূচী গ্রহণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষিবিষয়ক গবেষণা কাজে উৎসাহ প্রদান এবং কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন জাত ও প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণে কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাসমূহ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাকে টেকসই রূপ দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি তৈরি, নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, বৈরী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্যশস্য উৎপাদন নানাভাবে ব্যাহত হলেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের কিছু বিষয় আলোকপাত করলে উঠে আসে নানা বিষয়। সাফল্যগুলো হচ্ছে- একটি ফসলের উৎপাদনশীলতা। যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন, যার ফলে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৬ সালে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২৬১.৩৩ লাখ মেট্রিক টন। এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চলবিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ২১৬%। ২০০৬ সালে দেশে ফসলের নিবিড়তা ছিল ১৮০%। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃৃদ্ধ ধানসহ এ পর্যন্ত ১২৭টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিবিড় সবজি চাষের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০০৬ সালে শাকসবজির উৎপাদন ছিল ২০ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩.৭২ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। ২০০৯ হতে বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৫৮৪টি উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত এবং ৯০৩টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও, কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার নিয়মিত প্রদানের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি ও মসলা উৎপাদন করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ পদ্ধতিটিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৫ সালে কৃষিতে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। শেখ হাসিনার সরকার সার, ডিজেল, বিদ্যুত ইত্যাদি খাতে আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সকল খাতে মোট ৭৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকার মধ্যে সার খাতেই ৬৬ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে প্রণোদনা/কৃষি পুনর্বাসন চালু করেছে। অদ্যাবধি এ কর্মসূচীর মাধ্যমে ৯১১ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪ হাজার ৫০৯ কৃষক উপকৃত হয়েছেন। উৎপাদনমুখী কৃষিবান্ধব সরকার নানাবিধ সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে মোট ২ কোটি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে। শেখ হাসিনার সরকার কৃষককে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়ায় ১ কোটি ০৭ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৫টি ব্যাংক হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছে, যেখানে বর্তমান স্থিতি প্রায় ২৮২ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত বাজেট ছিল ৭ হাজার ৯২৪ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় অর্থাৎ ৭৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিআরআরআই কর্তৃক ধানের ৫০টি জাত, বিএআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ২২৯টি জাত, বিজেআরআই কর্তৃক পাটের ১২টি জাত, বিএসআরআই কর্তৃক ইক্ষুর ৮টি জাত ও সুগার বিট, তাল ও স্টেভিয়া ৪টি জাত, সিডিবি কর্তৃক তুলার ৯টি জাত এবং বিআইএনএ কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ৬৩টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বিটি তুলার জাত উদ্ভাবনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশী ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার এবং পাটসহ পাঁচ শতাধিক উদ্ভিদ/ফসলের ক্ষতিকর একটি ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫১টি পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুষ্টিবিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন, প্রাপ্তি ও ব্যবহারের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। (চলবে) লেখক : সাংবাদিক
×