ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ কাদরীর কবিতার নতুন দিগন্ত

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ৩ জানুয়ারি ২০২০

শহীদ কাদরীর কবিতার  নতুন দিগন্ত

কবিতার অর্থ খুঁজে কবিতার মর্মার্থ কী বোঝা যায়! যায় না বলেই অর্থের দ্যোতক, অর্থের ব্যঞ্জনায় কবিতার স্বাদ মেটাতে হয়। কিন্তু কোন কবিকে বা তার কবিতাকে যদি কোন বিশেষ ধারায় বা ছাঁচে ফেলে বিবেচনা করা হয় তা হলে বিশেষ ধারার প্রভাব স্বীকার করে নিয়ে কবিতার অর্থ খোঁজার চেষ্টা আমার বৃথা। যদি কবি বিশেষ ধারার না হন তা হলে তাকে মোটা দাগে বিবেচনা না করাই শ্রেয় এটিকে মনে করিয়ে দেয় কবি নাজমুন নেসা পিয়ারি তাঁর বিশেষ একটি সঙ্কলনের মধ্য দিয়ে। সঙ্কলনটি বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি শহীদ কাদরীর কবিতা নিয়ে। তিনি সম্প্রতি সম্পাদনা করেছেন ‘শহীদ কাদরীর নির্বাচিত কবিতা।’ আর এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি তাঁর একটি দীর্ঘ ও গবেষণামূলক ভূমিকা উপস্থাপন করেছেন গ্রন্থে। তাঁর ভূমিকায় যে বিশ্লেষণ তা একেবারেই নতুন হবে পাঠকের কাছে এবং নতুন করে শহীদ কাদরীকে আবিষ্কার করবেন এটি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। নাজমুন নেসা পিয়ারির বিবেচনার কিছু অংশ তুলে ধরা হলোÑ ‘শহীদ কাদরী নাগরিক কবি এই অভিধায় বিশ্লেষিত ও মূল্যায়িত হওয়ায় তাঁর কবিতার শরীরে প্রকৃতির যে বর্ণিল সমারোহ তা আড়ালে থেকে গেছে। তাঁর অধিকাংশ কবিতা নাগরিক হলেও গোলাপ থেকে শুরু করে বেলফুল পর্যন্ত নানা রঙের ও ধরনের ফুল কবিতার অবয়বে ধারণ করেছেন আর তা তাঁর কবিতার অন্তর্লোক ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় উদ্ভাবিত।’ নাজমুন নেসা পিয়ারি নিজেও স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘নাগরিক কবি হয়ে ওঠার এবং বাংলাদেশের কবিতায় এককভাবে প্রতিনিধিত্ব করবার একমাত্র উদাহরণ শহীদ কাদরীই।’ নাগরিক কবি বলেই তিনি বেলফুলের মতো একটি তুচ্ছ, গ্রাহ্য না করা ফুলকে নাগরিক প্রতিবেশে প্রিয়তমার কাছে নতুন মূল্যে যে ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তা খুবই অতুলনীয়। ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ কবিতার অংশ বিশেষ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হলো। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো স্টেট ব্যাংকে গিয়ে গোলাপ কিংবা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান। এভাবে বেলফুলের মতো একাধিক ফুলকে কবিতার উপকরণ করেছেন শহীদ কাদরী আর তা গবেষণার আলোকে শহীদ কাদরীর কবিতা থেকে ছেঁকে এনেছেন নাজমুন নেসা পিয়ারি। যেমন চন্দ্রমল্লিকা, চামেলী, জুঁই, বকুল, শিমুল, রাধাচূড়া, টগর, শিউলী প্রভৃতি। জ্যোৎস্নার উপকরণ অনেক কবির কবিতায় এসেছে। শহীদ কাদরীর জ্যোৎস্নার উপলব্ধি যে নতুন ব্যঞ্জনায় এবং জ্যোৎস্নার রূপের রসের নতুন আবেদনে চিত্রকলার অবয়ব নিয়ে প্রতিভাতÑ এ বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে নাজমুন নেসা পিয়ারির ভূমিকায়। তাঁর বর্ণনা- ’জ্যোৎস্নার রং, সময়, ছবি, জ্যোৎস্নার ধ্বনির সুর এবং জ্যোৎস্নার রূপের রসের যে বর্ণনা তা শহীদ কাদরীর অনেক কবিতায় নতুন শব্দবোধের আকর হয়েছে।’ শহীদ কাদরীর কবিতা যে নতুন বিষয়কে নতুন রূপের সামর্থ্যে গুরুত্ব পায় এরও অন্তর্নিহিত স্বরূপ তুলে ধরেছেন তিনি। তবে নাগরিক কবি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে শহীদ কাদরী যে বাংলা কবিতায় একক ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল কবি এ বিষয়টিও তিনি তুলে এনেছেন। প্রসঙ্গক্রমে কবিতার উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।
×