ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেইনকে ঘিরেই অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০২০

পেইনকে ঘিরেই অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনা সাফল্যের বড় অনুসঙ্গ। তবে সেটি যে সবসময় নিয়ম মেনে এগোবে তার গ্যারান্টি কোথায়? অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কথাই ধরা যাক। রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্কের মতো গ্রেটদের অবসরের পর কুলিন দেশটি যাদের সামনে রেখে ভাবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছিল তাদের অগ্রভাগে ছিলেন স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ২০১৮’র মার্চে বহুল আলোচিত বল টেম্পারিং ইস্যুতে দুই তারকা নিষিদ্ধ হলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ভিতটাই কেঁপে ওঠে। অনেকে বলেছিলেন এই ধাক্কা সামলে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আনকোরা টিম পেইনের নেতৃত্বে যে দলটা তখন একের পর এক ম্যাচ, সিরিজ হারছিল, মাত্র এক মৌসুমের ব্যবধানে সেই তারাই এখন দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইংল্যান্ডে এ্যাশেজ ড্র (২-২) করে ট্রফি নিয়ে ফেরা অসিরা পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি সিরিজ জিতে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে। প্রত্যাবর্তনে স্মিথ-ওয়ার্নার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তবে অস্ট্রেলিয়া যে পেইনের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে সেটি পরিষ্কার করেছেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। ল্যাঙ্গার বলেন, ‘যারা পেইনের সমালোচনা করছেন বা করেছেন, তাদের ক্রিকেটজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারা ভুলে যাচ্ছে কি কঠিন এক সময় আমরা ওরা কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম। নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচটা দেখুনÑ ম্যাচসেরা হওয়ার রেসে ছিল পেইন। উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স, ব্যাট হাতে মহাগুরুত্বপূর্ণ ৭০ (আসলে প্রথম ইনিংসে ৭৯)। আর অধিনায়কত্ব নিয়ে কী বলব? এখন তো দল অনেক গুছিয়ে এসেছে, এক মৌসুম আগে অস্থির সেই সময়েও নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডে সম্ভাবনার জানান দিয়ে রেখেছিল, ক্রমশ যা আরও পরিপক্ব হয়ে উঠেছে। সবাইকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই পেইন অস্ট্রেলিয়া দলের অতিগুরুত্বপূর্ণ সদস্য।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি কখনই মনে করি না পেইন হুট করেই দলের সঙ্গী হয়েছে। আমার মনে হয় স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্কের মতোই অস্ট্রেলিয়া একজন যোগ্য নেতার সন্ধান পেয়েছে। ঠা-া মাথা, অসাধারণ লিডারশিপ। ওর সঙ্গে কাজ করে আমি নিজেও গর্ববোধ করছি। আমাদের লক্ষ্য এ্যাশেজ জয় এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’ টিম পেইনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজে অংশ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের কাছে ১-০ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে ভারতের কাছেও হোম সিরিজ হারতে হয়েছিল। পাকিস্তান ও ভারতের কাছে হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয় ২০০১ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো এ্যাশেজের শিরোপা ধরে রাখে তারা। ওই সিরিজ ২-২ ম্যাচে ড্র হয়। দলের ওই সফলতার সব কৃতিত্ব অধিনায়ককেই দিয়েছেন ল্যাঙ্গার। অসি-টেস্ট অধিনায়কের ভূয়সি প্রশংসা করে কোচ ল্যাঙ্গার আগেই বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা স্টিভেন স্মিথকে ফের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার কোন সুযোগ নেই। ইংল্যান্ডের মাটি থেকে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ ট্রফি নিয়ে ঘরে ফেরার পরই তিনি বলেছিলেন, ‘পেইন এই মুহূর্তে খুবই ভাল করছে। অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ কাজ করছে। তবে সে কতদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারবে সেটি অন্য বিষয়। আমিও অন্যদের মতো নিশ্চিত যে এখন সে বেশ ভালই করছে। টিম পেইনের যে বিষয়টা সুন্দর সেটি হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তেই সে উন্নতি করছে। এটিই তার এবং আমাদের জন্য উৎসাহ ব্যঞ্জক।’ তখন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘পেইন যখন দল ছাড়বেন তখনই স্মিথের কাছে নেতৃত্ব দেয়া যেতে পারে। এই মুহূর্তে স্মিথ বিশ্বের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও অস্ট্রেলিয়া দলের বড় ভরসা তিনি। মৌসুমের শেষভাগে অস্ট্রেলীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছে স্মিথ। ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর এ্যাশেজ সিরিজেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন। টেস্ট সিরিজ শেষে ১১০.৫৭ গড়ে ৭৭৪ রান তুলেছেন।’ ল্যাঙ্গারের আশঙ্কা, নেতৃত্বের বাড়তি বোঝা কাঁধে নিলে তার স্বাভাবিক দক্ষতায় ভাটা পড়তে পারে। তখন কিছুটা দো-মনা মনে হলেও কোচ এখন তার অধিনায়ক পেইনকে নিয়ে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে ঘরের মাটিতে পাকিস্তান ও নিউজিলান্ডকে উড়িয়ে দেয়ার সিরিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে। টানা দুই টেস্টে কিউইদের উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে অসিরা। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) সিডনিতে শুরু তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। একচুলও ছাড় না দিয়ে পেইনের চোখ এখন নিউজিলান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার দিকে।
×