ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিফাইনাল আজ প্রতিপক্ষ রহমতগঞ্জ

ফাইনালে চোখ মোহামেডানের

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২ জানুয়ারি ২০২০

ফাইনালে চোখ মোহামেডানের

রুমেল খান ॥ দুটি ক্লাবই বেশ পুরনো। উভয় ক্লাবেরই জন্ম প্রায় একই সময়ে, ত্রিশের দশকে। দুই ক্লাবেরই নামটি বেশ লম্বা। দুই ক্লাবের নামের মধ্যেই ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’ শব্দটি আছে। ও হ্যাঁ, সবচেয়ে বড় দুটি মিলের কথা তো এখনও বলাই হয়নিÑ চলমান ফেডারেশন কাপে দুই ক্লাবই একইদিনে এবং কোয়ার্টার ফাইনালে (৩০ ডিসেম্বর) ভিন্ন ম্যাচে ‘দুই’ আবাহনীকে হারিয়ে তাদের ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে এক আবাহনী (ঢাকা) তো গত আসরেরই চ্যাম্পিয়ন। আরেক আবাহনী (চট্টগ্রাম) ২০১৭ আসরের রানার্সআপ। এতগুলো তথ্য জানার পর এতক্ষণে নিশ্চয়ই সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা ধরে ফেলেছেন আমি কোন্ দুটি ক্লাবের কথা বলছি। হ্যাঁ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। মৌসুম-সূচক ফুটবল আসর ফেডারেশন কাপের খেলা শেষ হতে বাকি আছে আর মাত্র তিনদিন। আজ বৃহস্পতিবার হচ্ছে সেই তিন দিনের প্রথমদিন। এদিন অনুষ্ঠিত হবে ৩১তম আসরের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটি। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় এই ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। ১৯৩৬ সালে জন্ম ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডানের। আর রহমতগঞ্জের জন্ম তারও তিন বছর আগে, ১৯৩৩ সালে। তিন বছরের সিনিয়র হলেও সাফল্যের নিরিখে মোহামেডানের চেয়ে যোজন ব্যবধানে পিছিয়ে আছে পুরনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ। যেখানে মোহামেডান তাদের ৮৩ বছরের ইতিহাসে ৩৭টি ট্রফি জিতেছে এবং সেগুলোর ১০টিই জিতেছে এই ফেডারেশন কাপ থেকে; সেখানে ৮৬ বছর পার করেও ‘আইলো’, ‘ডাইলপট্টি’ এবং ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জের অর্জন মাত্র ১টি ট্রফি (২০১৪ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ) এবং ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরে থাক কখনও ফাইনালেই উঠতে পারেনি তারা। অবশ্য তারা শেষ চারে এর আগেও খেলেছে। সর্বশেষ খেলেছে ২০১৭ আসরে। সেবার সেমিতে তারা চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হার মেনেছিল ১-০ গোলে। তবে সেই আক্ষেপ আজই দূর হয়ে যেতে পারে তাদের। এ জন্য তাদের হারাতে হবে সাদা-কালো বাহিনীকে। মোহামেডান এই আসরে সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ২০১৫ সালে। সেবার তারা সেমিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ৪-৩ (১-১) গোলে। ইতিহাস বলছে, মোহামেডানের জন্য রহমতগঞ্জ বরাবরই কঠিন প্রতিপক্ষ। ফেডারেশন কাপে তারা সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৬ সালে। ১০ জুন অনুষ্ঠিত দু’দলের সেই ম্যাচটি ছিল গ্রুপ পর্যায়ের। ডি-গ্রুপের সেই ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে মোহামেডানকে সেবার রুখে দিয়েছিল এবং শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছিল রহমতগঞ্জ, আর মোহামেডান বিদায় নিয়েছিল গ্রুপপর্বেই। চলতি আসরে রহমতগঞ্জ সেই অল্প দলগুলোর একটি, যারা এখনও অপরাজিত আছে। শুধু তাই নয়, আন্ডারডগ হয়েও তারা এই আসরে ঘটিয়েছে সবচেয়ে বড় অঘটনটি। কোয়ার্টারে টাইব্রেকারে ৪-৩ (১-১) গোলে হারিয়ে দেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও সর্বাধিক ১১ বারের শিরোপাধারী ঢাকা আবাহনীকে। এই আসরে রহমতগঞ্জ খেলছে রক্ষণাত্মক ধাঁচে। তাদের ছয় ডিফেন্ডার নিচে নেমে খেলেন। সুযোগ পেলেই কাউন্টার এ্যাটাক করে। দলটির সেরা সম্পদ তাদের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লিটন তার অসাধারণ নৈপুণ্যেই এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে রহমতগঞ্জ। সৈয়দ গোলাম জিলানির শিষ্যরা ‘সি’ গ্রুপে গোলশূন্য ড্র করে সাইফের সঙ্গে। আর ১-১ গোলে ড্র করে শেখ জামাল ধানম-ির সঙ্গে। ২ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সাইফের সঙ্গে কোয়ার্টার খেলা নিশ্চিত করে। ক্যাসিনো-কা-ে বিপর্যস্ত মোহামেডানের দিন শেষ ... এমনটা ক’দিন আগেও বলতেন অনেক ফুটবলবোদ্ধাই। দলটির সাবেক ফুটবলারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কোনমতে মাঝারি শক্তির দলগঠন করলেও সেই দলে একসময় জাতীয় দলে খেলা গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল ছাড়া কোন চেনা মুখ ছিল না। ফলে মোহামেডান চলতি মৌসুমেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে নিশ্চিতভাবেই, এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে চলমান ফেডারেশন কাপ ফুটবলে একের পর এক চমক দেখিয়েই যাচ্ছে মতিঝিলপাড়ার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। এখনও টিকে আছে তারা বহাল তবিয়তেই। যেখানে গ্রুপপর্বেই তাদের বাদ পড়ার কথা ছিল, সেখানে এখন তারা সেমিফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ২০১৭ সালের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীকে। এই জয়ে তিন বছর পর ফের শেষ চারে নাম লেখায় মোহামেডান। এবার মনেই হয়নি মোহামেডান দলটি একেবারেই আনকোরা ও অনভিজ্ঞ। দারুণ আক্রমণাত্মক, গতিশীল ও গোছানো ফুটবল খেলেছে তারা। এবার তারা ডি-গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ১-১ গোলে ও শেখ রাসেলের সঙ্গে ০-০ গোলে ড্র করে, উত্তর বারিধারাকে হারায় ১-০ গোলে। ৩ ম্যাচে সংগ্রহ করে ৫ পয়েন্ট। তাদের সমান পয়েন্ট হয় মুক্তিযোদ্ধা ও রাসেলেরও। ফলে চার দলের গ্রুপে এই তিন দলের মধ্যে কোন দুটি দল শেষ আটে যাবে (বারিধারা চার নম্বর দল হওয়াতে তারা বাদ পড়ে আগেই), তারজন্য প্রয়োজন পড়ে সমীকরণের। সেখানেও বাধে গোল। কেননা তিন দলেরই গোল পার্থক্য সমান (+১) হয়ে যায়। তবে মুক্তিযোদ্ধা বেশি গোল (৪) করায় তারা হয়ে যায় গ্রুপসেরা। মোহামেডান ও রাসেলের গোল (২) এক্ষেত্রে আবারও সমান হয়ে যায়। ফলে বাইলজ অনুযায়ী খোঁজ নেয়া হয় কোন্ দল বেশি লাল ও হলুদ কার্ড পেয়েছে। লালকার্ড কেউই পায়নি। কিন্তু হলুদ কার্ড কম পাওয়ায় কপাল খোলে সাদা-কালোদের। আর এভাবেই টিকে যায় তারা। আজ তাই মোহামেডান বনাম রহমতগঞ্জের লড়াইটি হবে সেয়ানে সেয়ানে, এমনটাই ধারণা করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। এখন দেখার বিষয় প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়তে পারে কি না রহমতগঞ্জ, নাকি পঞ্চদশবারের মতো ফাইনালে নাম লেখাতে পারে কি না মোহামেডান।
×