ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তেল গ্যাস অনুসন্ধানে পিএসসি পর্যালোচনা করতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ১১:০১, ২ জানুয়ারি ২০২০

তেল গ্যাস অনুসন্ধানে পিএসসি পর্যালোচনা করতে চায় সরকার

রশিদ মামুন ॥ তেল গ্যাস অনুসন্ধানে স্থলভাগে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) পর্যালোচনা করতে চায় সরকার। বিগত ২০০৯ সাল থেকে স্থলভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে এককভাবে কাজ করছে বাপেক্স। এর মধ্যে ঠিকাদার হিসেবে বিদেশী কোম্পানি কাজ করলেও গ্যাস ব্লকগুলোতে তাদের অংশীদারিত্ব ছিল না। সরকার এখন স্থলভাগে পিএসসি করলে বিদেশী কোম্পানিগুলো স্থলভাগে কাজ করার সুযোগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা স্থলভাগের পিএসসি রিভিউ করব। বাপেক্সকে রেখেই অন্য ভাল কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা যায় কি না তা দেখা হবে। তিনি বলেন, আমরা সাগরে নতুন করে বিডিং রাউন্ডে (দরপত্র আহ্বান) যাব চলতি বছর। পিএসসি রিভিউ কিভাবে হতে পারে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত স্থলভাগের কোন ব্লকে বিদেশীদের তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলনের কোন চুক্তি হয়নি। সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় স্থলভাগে নতুন কোন বিদেশী কোম্পানিকে আর কাজ দেয়া হবে না। ফলে এখন রিভিউ করতে হলে কোননা কোনভাবে আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে কাজ দেয়ার পন্থা বের করা হবে। বাপেক্স সূত্র বলছে, স্থলভাগে বাপেক্স ২য় মাত্রার তৃতীয় মাত্রার জরিপ করেছে কূপ খনন করছে এবং গ্যাস উত্তোলনও করছে। ফলে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যেসব কাজ করতে হয় স্থলভাগে তার সব কাজই বাপেক্স করছে। এখন সেই কাজে বাপেক্স কতটা গতিশীল তা বিচার করা যেতে পারে। গতিশীল না হলে কেন কাজে ধীরগতি তা দূর করার জন্য কি করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু স্থলভাগেও পিএসসি করতে চাইলে নতুন করে দেশের স্থলভাগেও বিদেশীদের অংশীদারিত্ব তৈরি হবে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বহুজাতিক কোম্পানি যেসব ব্লকে গ্যাস তুলছে এর বাইরে সব ব্লকেই বাপেক্সের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে উত্তর পূর্বের কয়েকটি ব্লকে বাপেক্স কাজ করছে না। ওখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এসব জায়গাতে পিএসসি আহ্বান করা হলে কোন বিদেশী কোম্পানি আগ্রহী হবে না। এক্ষেত্রে যেসব ব্লকে সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে বিদেশীদের আহ্বান করা যেতে পারে। তবে সরকার কিভাবে করতে চায় এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি বলে জানান তিনি। সম্প্রতি বাপেক্সের এক সেমিনারে যোগ দিয়েও বাপেক্স এবং পেট্রোবাংলার কাজে গতি না থাকার অভিযোগ এনেছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন এই দুই সংস্থার ব্যর্থতার দায় সরকার নেবে না। প্রয়োজনে তাদের কাজের মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বার বার তাগাদা দেয়ার পরও বাপেক্সের কর্মকর্তারা কোন কাজ করে না এমন অভিযোগও করেন প্রতিমন্ত্রী। স্থলভাগের সব ব্লকে কাজ করার সুযোগ থাকলেও গত ১০ বছর বাপেক্স তাদের মেলে ধরতে পারেনি। নতুন রিগ, জরিপ এবং তথ্য বিশ্লেষণের যন্ত্রাংশ কিনে দেয় সরকার। কিন্তু তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যে গতি আসার কথা ছিল তা আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। বাপেক্সের রিগ বসিয়ে রেখে তিন গুণ বেশি দামে বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে কূপ খনন করা হয়েছে। এতে অনেকটা দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়েছে বাপেক্স। সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে বাপেক্স কাজ করছে না একই ভাবে বাপেক্সের কর্মকর্তারাও অভিযোগ করেন সরকার তাদের চেয়ে বিদেশী কোম্পানিকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর বলেন, এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যেখানে বাপেক্স স্থলভাগের সব কাজ করতে পারে সেখানে কেন বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। বাপেক্স ভাল কাজ করছে এমনটি দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে কেন বাপেক্স বসে রয়েছে তারা কাজ করছে না বা তাদের কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না এটি পর্যালোচনা করতে হবে। তিনি মনে করেন স্থলভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগালে আর নতুন কোন পিএসসির প্রয়োজন হবে না। দেখা গেছে, সারাদেশের বিদ্যমান খনিতে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। আর গত জুন পর্যন্ত এক বছরের হিসেব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমেছে মাসে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএসসিএম) উপরে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ কমে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে আসবে। এখন স্থলভাগের হিসেব করলে আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি দেশে মোট গ্যাস উৎপাদনের ৬১ ভাগ করছে। আর দেশীয় কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে উৎপাদন করছে ৩৯ শতাংশ।
×