ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধনীতে আইনমন্ত্রী

সোনার বাংলা বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

প্রকাশিত: ১১:০০, ২ জানুয়ারি ২০২০

সোনার বাংলা বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভার কাজের ধরন আলাদা হলেও সবার আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন এবং সেটি হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা। এই সোনার বাংলা বিনির্মাণে সবাইকে এক লক্ষ্যে, এক প্রেরণায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এই আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। কেবল আইনের শাসন নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র সুসংহতকরণ এবং দারিদ্র্যদূরীকরণেও বিচারকদের তথা কোয়ালিটি জুডিসিয়ারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই জনগণকে কোয়ালিটি জুডিসিয়ারি উপহার দেয়ার লক্ষ্যে সরকার বিচার বিভাগকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরে (২০২০ সালে) পাঁচ থেকে ছয় লাখ মামলার জট কমানো হবে বলে আশা করেছেন তিনি। লক্ষ্য থাকবে নতুন বছরে কম করে হলেও ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা কমানো। আমরা সেইভাবে বিচারিক প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল প্রস্তুতির চেষ্টা করছি। বুধবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারকদের জন্য আয়োজিত ৪০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা সিস্টেম চালু করেছি। যেটা হচ্ছে জাস্টিস অডিট। প্রত্যেক তিন বছর আমরা একটা হিসাব নেই। শুধু যে মামলা সেটা না। কি প্রকারে মামলা, কোন বিষয়ে বেশি মামলা হচ্ছে। সেসব বিষয়ে একটা ধারণা নেই। এখানে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মামলার যে কথা বলা হচ্ছে সেটার সঙ্গে কিন্তু কিছুটা পার্থক্য আছে। সেখানের হিসাব হচ্ছে ৩১ লাখ। এটা যা-ই হোক। এটা মামলার জট। আমাদের এই বছর লক্ষ্য থাকবে অন্তত পক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা কমানো। আমরা সেভাবে বিচারিক যে প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল সেভাবে করার চেষ্টা করছি। আমরা মামলা কমানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা অবাস্তব না। প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পেশাগতজীবনে অন্যের অনুসরণীয় হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিচার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সততার ভিত্তিতে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা হতে হবে কর্মজীবনের মূলমন্ত্র। বিন্দুমাত্র লোভ কিংবা অসততার কারণে বিচার বিভাগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে যাতে কোন হতাশা বা বিরূপ ধারণার সৃষ্টি না হয় সেদিকে তাদের খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনাদের বিচারক হয়ে ওঠার পেছনে এ দেশের গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। তাদের কর্মক্ষেত্রই হলো বিচারপ্রার্থী এসব মানুষের শেষ ভরসাস্থল। তাই জনগণের দ্রুত ও সহজে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিছক গতানুগতিক বা দায়সারা ভাব পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আনিসুল হক বলেন, সরকার আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সেবার সঙ্গে বিচারক ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সমান তালে এগিয়ে নিতে চায় এবং সরকারী আইনী সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায় যেখানে সব মানুষ তার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় সেবাসমূহ সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দুই হাজার ৬৯০ কোটি টাকার ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বিচারকদের এখন থেকেই তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারিক সেবা প্রদানের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, এডিআর বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাই প্রশিক্ষণ থেকে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির কৌশলগুলো ভালভাবে জানতে হবে।
×