ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী

ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২ জানুয়ারি ২০২০

ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমানতের সুদহার কোনভাবেই ৬ শতাংশের বেশি দেয়া যাবে না। এছাড়া সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন বছরে অর্থনীতি ভাল যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, শেয়ার বাজার উন্নয়নেও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নিলামের মাধ্যমে যানবাহনের পছন্দের নম্বর প্লেট বিক্রি করে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বুধবার সচিবালয়ে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক সুদ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা হবে। আমরা আশাকরি এটি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র শিল্পখাতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হলে অনেক ইন্ডাস্ট্রি বাদ পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে এখন সব ঋণ গ্রহীতাকে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কোন সেক্টর ঋণ নিল এটা তার ব্যাপার। ঋণ গ্রহীতা যাই করবেন তাতে দেশের লাভ হবে। ট্রেড করলেও দেশের লাভ হবে, একটি ইন্ডাস্ট্রি এমনকি সেলুন করলেও দেশের লাভ হয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে, সকল খাতেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সবক্ষেত্রে কি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিপোজিটের জন্য কোন ব্যাংক কাউকে ৬ শতাংশ সুদের বেশি অফার করতে পারবে না। সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখলে যিনি টাকা রাখেন তাকে টাকা দিতে হয়। আমাদের মতো দু’একটি দেশে ব্যাংকে টাকা রাখলে হয়তো আপনি দুই-তিন পার্সেন্ট সুদ পাবেন, এর বেশি না। কিন্তু আমাদের যে কোন কারণে হোক ডিপোজিটে বেশি সুদ দেয়া হয়। এটা আর সইতে পারছি না। সে কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সরকারী ডিপোজিট ফিফটি ফিফটি থাকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারী ডিপোজিট সরকারী-বেসরকারী উভয় ব্যাংককে দেব। পাবলিক ব্যাংকগুলো সবই প্রায় বড়। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে অনেক বড় ব্যাংক আছে আবার ছোট ব্যাংকও আছে। তাই এ ব্যাংকগুলোকে যার পেইড অব ক্যাপিটাল বেশি তাকে একটু বেশি দেয়া হবে, আর যার কম সে ব্যাংক কম পাবে। বেসরকারী ব্যাংক খাতকে মোট ডিপোজিটের যে ৫০ শতাংশ দেয়া হবে সেটা থেকে ভাগ করে দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি সরকারী ও বেসরকারী উভয় ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে যদি সুদহার ৬ শতাংশ করে দেয়া হয় তাহলে সবাই সরকারী ব্যাংকে টাকা রাখবে। তাই সরকারী ব্যাংকে ডিপোজিটের সুদহার হবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারী ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ৬ শতাংশ। যদি দুই জায়গায় ৬ শতাংশ করি তাহলে বিভিন্ন কারণে সবাই চলে যাবে সরকারী ব্যাংকে। এ জন্য আমরা এক্ষেত্রে আধা পার্সেন্ট গ্যাপ রাখছি। এদিকে, নিলামের মাধ্যমে যানবাহনের পছন্দের নম্বর প্লেট বিক্রি করে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিদেশে দেখি যে প্রত্যেকটি গাড়ির নম্বর প্লেট বা লাইসেন্স প্লেট অকশন হয় এবং প্রচুর টাকা আয় করে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আয় করে। যত সুন্দর নম্বর দামও তত বেশি। আমরা নেক্সট যে কোন সময় থেকে শুরু করব এটা, অকশন করে নম্বর প্লেটগুলো পছন্দের লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট বিক্রি করতে চাই তাতে কিছু অর্থ আসার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, বিদেশে পদে পদে রাজস্ব আদায় করা হয় উদাহারণ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে বাসা থেকে বের হলেও তো পেমেন্ট করতে হয়। গাড়ি যেখানে দাঁড় করিয়ে রাখবেন সেখানেও রেভিনিউ। আমাদের দেশে এগুলো অর্জন করলে রোড বা ব্রিজের মেনটেইনন্সে কস্ট এগুলো থেকে আদায় করতে পারতাম। অর্জন করার ক্ষমতা আমাদের আছে শুধু এগুলোকে এখন বাস্তবায়ন করা। প্রতি পদক্ষেপে টাকা দিতে হলে জনগণ ক্ষেপে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের চাহিদা একটাই টাকা অর্জন, তাদের টাকা অর্জনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি তাহলে তারা সুখে শান্তিতে টাকা অর্জন করতে পারে তারা খরচ করতে প্রস্তুত। টাকা না দিয়ে তো টাকা চাইব না। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের মূল ভিত্তি হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে পুঁজিবাজার তত শক্তিশালী হতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা ঘটে না, কেন হয় না সময় আসলে হয়ত বলা যাবে। তবে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে ৬ হাজার ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ১৪ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ প্রস্তাবটির অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্রক্রিয়াকরণের জন্য আবুধাবি ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানি ও সৌদি এ্যারাবিয়ান ওয়েল কোম্পানি থেকে মারবান ও এ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড-এএলসি আমদানির একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ তেল আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। জ্বালনি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ তেল আমদানি করবে। এছাড়া ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিকটন ফসফরিক এসিড আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (এসএবিআইসি) ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির ১৩তম সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×