ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২ জানুয়ারি ২০২০

নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচনই বর্তমান সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ। নির্বাচনে জনগণ বর্তমান সরকারকে সমর্থন না জানালে, স্বাভাবিকভাবেই আমরা সরকারে থাকব না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সম্প্রচারের পর এবার বাংলাদেশ বেতার শুনবে ভারত। জানুয়ারিতেই সারা ভারতে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বছরের অর্জন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমানের ‘হঠাৎ করেই সরকারের পতন হবে’ মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের পতন হবে- সেলিমা রহমানের এই কথা তো আমরা ১১ বছর ধরেই শুনে আসছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই সরকারের পতনের কথা শুনে আসছি। সরকার পরিবর্তনের একটিই পথ, সেটি হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনে জনগণ বর্তমান সরকারকে সমর্থন না জানালে, স্বাভাবিকভাবেই আমরা সরকারে থাকব না। এছাড়া অন্য পথ তো নেই। অবশ্য তারা (বিএনপি) নানা পথে বিশ্বাস করে। কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেলিমা রহমানের এই বক্তব্য সেই ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অতীতের মতো আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না এবং সরকারকে বিদায় দেয়ার একটিই পথ- সেটি হচ্ছে নির্বাচন। নতুন বছরে বিরোধী দলকে ‘স্পেস’ দেয়া প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে আমরা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজেই বসবাস করি। এখানে বিরোধী দল সবসময় তাদের মত প্রকাশ, প্রতিবাদ করার আইনগত, সাংবিধানিক যে অধিকার, সেই অধিকার সবসময় প্রয়োগ করছে। এখানে কাউকে অধিকার দেয়ার বিষয় নেই। মাল্টিপার্টি ডেমোক্র্যাসিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এখানে বিরোধী দল সব সময়ই সংসদে, সংসদের বাইরে তাদের মত প্রকাশ করছে। সুতরাং অধিকার দেয়া না দেয়ার প্রশ্ন অবান্তর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি- এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্য আমি শুনেছি। দক্ষিণের মেয়র যেটি বলেছেন, মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রীর মর্যাদা থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংগ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। সেই বিধিনিষেধের কথাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমে নিবন্ধন দেয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা সব রিপোর্ট এখনও পাইনি। পেলে খুব সহসাই কিছু অনলাইন নিবন্ধন পেয়ে যাবে। এক বছরের অর্জন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সম্প্রচারের পর এবার বাংলাদেশ বেতার শুনবে ভারত। জানুয়ারিতেই সারা ভারতে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। বিগত বছরের সাফল্য তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যে কাজগুলো কয়েক যুগে হয়নি। ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল বহু বছর আগে থেকে, কয়েক যুগ আগে থেকে। কিন্তু সেটি সম্ভবপর হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দূরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া সদ্য শেষ হওয়া বছর প্রদর্শনের ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রম নির্ধারণ, বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ, বিদেশী টেলিভিশনের বিদেশী অনুষ্ঠান প্রচার নিয়মনীতির মধ্যে আনা হয়েছে। বুধবার থেকে অবৈধ ডিটিএইচের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। যারা ব্যবহার করবে কিংবা যারা সংযোগ প্রদান করবে উভয়েই দোষী বলে সাব্যস্ত হবে, আইন অনুযায়ী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় একটি ছবি নির্মিত হচ্ছে, এই ছবির কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। খুব সহসা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো বেতারও ভারতে সম্প্রচারিত হবে। আমরা আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই আমরা সেটি করতে সক্ষম হব। পুরো ভারতেই বাংলাদেশ বেতার শোনা যাবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পীদের বহুদিনের দাবি ছিল, চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করার লক্ষ্যে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে, এটি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত হয়ে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে সেটি ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব সহসা চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংসদে নিয়ে যেতে পারব। তথ্য মন্ত্রণালয় ১৮টি আইন, বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন/সংশোধন/ হালানাগাদের কাজ চলছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী আইন খুব সহসা মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংবাদিকদের দাবি অনুযায়ী আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৬৪ জেলায় আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে একটি হলও থাকবে, সেই হল আমরা ভাড়াও দিতে পারব। এ সময় নতুন তথ্যসচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
×