ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রগতির অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২ জানুয়ারি ২০২০

প্রগতির অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতি এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল ও সমৃদ্ধ হচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দার উত্তাপ বাংলাদেশে পড়েনি বললেই চলে। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে দিয়েছে আশাবাদের পূর্বাভাস। গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে থাকায় বাংলাদেশের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতা প্রদর্শন করেছে বলে তাদের অভিমত। ব্যাংক-বীমা ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও নতুন বছরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতি সামনের দিকেই এগিয়ে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা। বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে এ বছর ৮ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে। মন্দাবস্থা কাটিয়ে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই-আগস্টে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার, গত বছরের চেয়ে যা ১২ শতাংশ বেশি। সর্বাধিক যা সুখবর তা হলো, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন, যাতে ক্রমশ স্ফীত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০১৯ সালে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিদেশীরা। প্রেরিত অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় বিশ্বের নানা দেশে কর্মরত শ্রমজীবীরা সরকারী চ্যানেলে বৈধভাবে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত হয়েছেন। এর পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রাজধানীতে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলসহ ১০টি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হওয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। চলতি অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ এবং তা বাড়বে অব্যাহতভাবে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে ২০২১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। তাতে করে ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এর মধ্যে ১১টি চালু হয়েছে, ৭৯টি প্রক্রিয়াধীন। মাত্র সাত দিনে এসব জোনে বিদ্যুত দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যাও নেই বললেই চলে। সর্বোপরি রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতায় রূপপুরে নির্মাণাধীন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ পাওয়া যাবে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে, যেটির দরপত্র আহ্বান করা হবে আগামী বছর। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও অনুন্নত এলাকায় এটি নির্মাণ করা হবে। আগামীতে একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। ১০ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আগামীতে বাজেটের আকারও অনেক বড় করার পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। দেশে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮ ভাগে। হতদরিদ্র মানুষের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩ ভাগে। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলিত জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অতিক্রম করা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বলেই প্রতীয়মান।
×