ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ ৩-১ সাইফ

সিডনির জোড়া গোলে সেমিতে পুলিশ

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১ জানুয়ারি ২০২০

সিডনির জোড়া গোলে সেমিতে পুলিশ

রুমেল খান ॥ পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি জাতিতে মার্কিন। অথচ নাম তার সিডনি। খেললেন ঢাকায়, করলেন জোড়া গোল, দলকে এনে দিলেন অসাধারণ এক জয়। মঙ্গলবার সিডনিম্যাজিক মঞ্চস্থ হলো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। তার ‘বিশ্বমানের’ জোড়া গোলে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল নবাগত বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। প্রতিপক্ষ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডকে তারা হারায় ৩-১ গোলে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়েছিল। বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাকার সতীর্থ ফুটবলার ছিলেন সিডনি। পুরো নাম রিভেরি সিডনি এ্যাডাম। পুলিশের হয়ে ঢাকার মাঠ মাতাচ্ছেন তিনি। চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লীগের দল অরল্যান্ডো সিটিতে ব্রাজিলের কাকার সঙ্গে খেলেছিলেন তিনি। সেই সিডনিই এখন চলতি ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মঙ্গলবার তিনি এতটাই ভাল খেলেন যে, তাকে (বয়স ২৬, উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি) ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার না দিয়ে কোন উপায় ছিল না আয়োজকদের। পুরো ম্যাচে দাপটের সঙ্গেই খেলে পুলিশ। মনেই হয়নি তারা এবারই প্রথম এই আসরে খেলছে, ক’দিন বাদেই প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক ঘটবে তাদের। বরং মনে হয়েছে সাইফই হয়তো নবীন-অনভিজ্ঞ কোন দল। পুলিশের গতিশীল, আক্রমণাত্মক ও বুদ্ধিদীপ্ত খেলা মুগ্ধ করেছে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের। ১৭ মিনিটে ফ্রি কিক পায় সাইফ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে সাইফের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ডান পায়ের বাঁকানো শটটি জালে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন পুলিশের গোলরক্ষক আরিফুজ্জামান হিমেল। ২০ মিনিটে বল নিয়ে সাইফের বক্সে ঢুকে জটলা থেকে ডান পায়ের উঁচু শট নেন পুলিশের মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড লুকা রটকোভিচ। কিন্তু তার নেয়া শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ২৩ মিনিটে পুলিশের মার্কিন ফরোয়ার্ড রিভেরি সিডনি এ্যাডাম সাইফের বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান। কিন্তু রিভেরি বাঁ পায়ের যে জোরালো শটটি নেন, সেটা গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনের পায়ে লেগে কর্নার হয়ে যায়। ৩১ মিনিটে সফলকাম হয় পুলিশ। ফ্রি কিক পায় তারা। কিরগিজ ডিফেন্ডার আতুর মুলাদঝানোভের উঁচু-লম্বা শটটি সাইফের বক্সের ভেতরে পড়ে। সেই বল সাইফের ডিফেন্ডাররা বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ফলে বল পেয়ে যান পুলিশের ফরোয়ার্ড এমএস বাবলু। বল পেয়ে ডান পায়ের চমৎকার ভলি শটে লক্ষ্যভেদ করে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন তিনি। এগিয়ে যায় পুলিশ (১-০)। প্রথমার্ধের সংযুক্তি সময়ে (৪৫+১ মিনিটে) ব্যবধান দ্বিগুণ করে পুলিশ। বাঁ প্রান্ত থেকে অধিনায়ক-মিডফিল্ডার নাজমুল ইসলাম রাসেলের কাছ থেকে ক্রস পেয়ে সেই বল ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শট নেন পুলিশের মার্কিন ফরোয়ার্ড রিভেরি সিডনি এ্যাডাম। সেই জোরালো শটটি বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও আপ্রাণ চেষ্টাতেও রুখতে পারেননি সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু (২-০)। দ্বিতীয়ার্ধেও একই ধাঁচে খেলতে থাকে পুলিশ। খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আরেকটি গোলও পেয়ে যায় তারা। ম্যাচের তখন ৫২ মিনিট। বাঁপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে সাইফের বক্সে ঢুকে পড়েন পুলিশের লুকা। তিনি মূলত সাইফের ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফির ভুলে বল পেয়ে যান। বক্সে ঢুকে তিনি বাঁ পায়ের যে ক্রস করেন, তা থেকে গোল করতে কোন ভুল করেননি রিভেরা সিডনি (৩-০)। এই আসরে এটা তার ব্যক্তিগত চতুর্থ গোল। এর মাধ্যমে এই আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন তিনি। টপকে যান ঢাকা আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স বেলফোর্টকে (৩ গোল)। ৫৫ মিনিটে ফ্রি কিক পায় সাইফ। কিরগিজ মিডফিল্ডার মুরোলিমঝোন আখেমেদোভের চমৎকার বাঁ পায়ের বাঁকানো শটটি পুলিশের জালে আশ্রয় নেয়। পুলিশ গোলরক্ষক হিমেল ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি, ব্যবধান কমায় সাইফ (১-৩)। ৭৫ মিনিটে ব্যবধান কমানোর দারুণ সুযোগ নষ্ট করে সাইফ। ডানপ্রান্ত দিয়ে পুলিশের বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন সাইফের তাজিক ফরোয়ার্ড জহাঙ্গীর এরগাসেভ। তিনি যে গড়ানো ক্রসটি করেন সেটা আলতো করে শুধু ফাঁকা পোস্টে যেখানে ঢোকালেই গোল হয়ে যায়, সেখানে সেই বল আকাশে তুলে অমার্জনীয় অপরাধ করে বসেন সাইফের কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার দেইনার আন্দ্রেস কর্দোবা। আক্ষেপ বাড়ে সাইফের। বাকি সময়টাতে সাইফ-পুলিশ উভয়দলই একাধিক আক্রমণ করেও আর কোন গোল করতে পারেনি। রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজালে এই আসরে তৃতীয় দল হিসেবে শেষ চারে নাম লিখিয়ে মাঠ ছাড়ে সাইপ্রাস কোচ নিকোলা ভিটোরোভিচের শিষ্যরা। বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবটি বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাথলেটিক ক্লাব নামেও পরিচিত। ক্লাবটি ঢাকায় অবস্থিত ও বাংলাদেশ পুলিশের অর্থায়নে পরিচালিত। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে সার্ভিসেস দলটি খেলেছিল। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লীগে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় পুলিশ এফসি।
×