ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শপথ হোক নতুন বছরের

বেহাল ফুটবলের হাল ধরতে নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১ জানুয়ারি ২০২০

বেহাল ফুটবলের হাল ধরতে নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গোলের খেলা ফুটবলে গোল করে জিততে না পারলে ভাল খেলার কোন মূল্য নেই। জেতা দূরের কথা। বাংলাদেশ দল তো গোলই করতে পারে না। জাতীয় দলের আবরণে নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে পাঠানো অনুর্ধ-২৩ দল ভুটান ও নেপালের মতো প্রতিপক্ষের কাছে হেরেছে। জিততে পারেনি মালদ্বীপের বিরুদ্ধেও। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ খেলবে কিভাবে বাংলাদেশ? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েই বলেছিলেন, তার লক্ষ্য ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ। গোটা দেশ, জাতি এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ বাফুফে সভাপতির এই শ্রুতিমধুর বক্তব্য বাস্তবে রূপ নেবে কিনা তা দেখার জন্য। যদিও এখন আর কারও বুঝতে বাকি নেই কাজী সালাউদ্দিনের এই অভয়বাণী নিছক একটা ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। যে দল দক্ষিণ এশিয়ার গ-ি পেরোতে পারে না তারা কিভাবে বিশ্বকাপ খেলবে? সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসে খাবি খেয়ে দেশে ফেরায় সবাই বুঝে গেছেন অন্তত কাজী সালাউদ্দিনকে দিয়ে ফুটবলের কোন উন্নতি হবে না। হ্যাটট্রিক সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রায় ১২ বছরে ভালমানের একটা জাতীয় দল দাঁড় করাতে পারেনি সালাউদ্দিনের নেতৃত্বধীন বাফুফের বর্তমান কমিটি। এরচেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না সালাউদ্দিন গংদের। ক্ষমতাই তার কাছে সবচেয়ে বড়। অমিত সম্ভাবনার নারী ফুটবলের অবস্থাও করুণ। উন্নতির পরিবর্তে দিনকে দিন পারদের মতো ওঠা নাম করছে দেশের মহিলা ফুটবল দল। অথচ বয়সভিত্তিক ফুটবলে এই মেয়েদের অনেক সাফল্য রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র পর্যায়ে চরম ব্যর্থ। অনেকেই বলছেন ভয়ে এবারের এসএ গেমসে মহিলা ফুটবল দল পাঠায়নি বাফুফে। অবশ্য ভুল বলেননি তারা। বাস্তবতা হচ্ছে সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে দেশের মহিলা ফুটবলের পারদ নীচের দিকে নামতে নামতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর পুরুষ ফুটবলের যাচ্ছেতাই অবস্থা নিয়ে তো মহাকাব্য লেখা যাবে। ওয়াকিফহাল মহলের মতে সঠিক পরিকল্পনা, গোলা-বারুদ না থাকলে যুদ্ধে জেতা যায় না। বাফুফের বর্তমান কমিটি একটা মাকালফল। ফলে পরিবর্তন প্রয়োজন। যারা একযুগ ক্ষতায় থেকে কিছুই করতে পারেনি তারা আগামীতে ফুটবলের অগ্রগতিতেও কিছুই করতে পারবে না এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থায় নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই। ফুটবল বোদ্ধারা মনে করছেন নিবেদিতপ্রাণ ফুটবল সংগঠকদের নিয়ে নতুন নেতৃত্বকে চালকের আসনে বসাতে হবে। নতুন বছরের শপথ হোক জরাজীর্ণ আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করুক ফুটবলে। কাজী সালউদ্দিনের গরম বক্তৃতা আর শুনতে ভাল লাগে না, সহ্য হচ্ছে না ফুটবলপ্রেমীদের। ২০১৮ সালের ফুটবল ॥ পেশাদার লীগ চালুর সমস্ত কৃতিত্ব নেন বাফুফের সভাপতি। মাঠে নিয়মিত লীগ চালিয়ে যাচ্ছেন এটা বহুবার বহুভাবে বহু জায়গায় বলে বেড়ান। কিন্তু ২০১৮ সালে যে লীগ অনুষ্ঠিত হয়নি সেটা তো তার মুখ থেকে কখনও বের হয় না।। জানা গেছে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে নাকি খোদ বাফুফে বসও তা জানেন না। ফুটবলারদের জীবন থেকে এক মৌসুম কেড়ে নেয়া হয়েছে। এতে খেলোয়াড়দের রুটি-রুজিতে আঘাত হানা হয়েছে। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে বাফুফে। আগের তিন আসরের মতো এবারও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ঘরের মাঠে সাফে এর আগে এত বাজে পারফর্মেন্স করেনি লাল-সবুজের জার্সির দল। ২০০৩ সালে আয়োজক হয়ে শিরোপা জেতার কীর্তি রয়েছে বাংলাদেশ দলের। সেই দল আর বর্তমান সভাপতির দলের মধ্যে রাত-দিন পার্থক্য। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করে বাফুফে। ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। এ বছর ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৫টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। এটা ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। সাফল্য বলতে অনুর্ধ-২৩ দলের এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখা। তবে একে আহামরি কিছু বলার সুযোগ নেই। ২০১৯ পুরুষ ফুটবল ॥ বছরের প্রান্তে নেপালে এসএ গেমসে অনুর্ধ-২৩ দলের আড়ালে জাতীয় দল পাঠিয়েও ব্যর্থ। ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুটি শক্তিশালী দল ছিল না। এরপরও স্বর্ণ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। চার ম্যাচে মাত্র একটি জয়, একটি ড্র আর দু’টিতে লজ্জার হার। পুরুষ ফুটবলে বছর শুরু এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব দিয়ে। বাহরাইনে অনুষ্ঠিত আসরে গ্রুপপর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল দল। কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে ৪ দলের মধ্যে চতুর্থ হয় বাংলাদেশ। যেখানে ভুটান গ্রুপে থেকে তৃতীয় হয়ে বাংলাদেশকে লজ্জা দিয়েছে। চলতি বছরের জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফিফা উইন্ডো থাকার পর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আয়োজনে ব্যর্থ হয় বাফুফে। নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা ভুটানকে এনে দুটি লোক দেখানো প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে। অথচ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মতো জায়গায় খেলছে দল। সেখানে বড় দলগুলোকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে যে ভুটান বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নেই তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ আয়োজন করে। সালাউদ্দিন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দল খেলালেও সাফল্য নেই। পর্যাপ্ত অনুশীলন ম্যাচের ঘাটতি, কোচদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি, বেতন-ভাতা নিয়ে ঝামেলা নিয়মিত ঘটনা বাফুফের। ছিল বছরব্যাপী আলোচনার খোরাক। নারী ফুটবলে অবস্থাও করুণ ॥ ২০১৯ সালেও আয়োজন করতে পারেনি নারী ফুটবল লীগ। ২০১৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়মিত লীগ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০১৩ সালের পর পেরিয়ে গেছে ৬ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে আলোর মুখ দেখেনি মেয়েদের লীগ। ফলে রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেছে নারী ফুটবলারদের। অথচ ফিফা ও এএফসি’র গতিতে বসে আছেন বাফুফের নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। যিনি প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করতে দ্বিধাবোধ করেননি। গেল মার্চে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে ফুটবলে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের মেয়েদের। নেপালে অনুষ্ঠিত সিনিয়রদের এই আসরে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় ভারতের কাছে ৪-০ গোলে পরাজিত হয়ে। সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় মেয়েরা। এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়শিপ চূড়ান্তপর্বে ৮ দলের মধ্যে সপ্তম স্থান নিয়ে লজ্জা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের দারুণ সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের পাঠলে সেটা বুঝা যেত। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই নেপালে দল পাঠায়নি বাফুফে। এটাও পরিষ্কার যদি না পারে মেয়েরা, এই ভয় থেকে অংশগ্রহণ করেনি বাংলাদেশ মহিলা দল। এই যদি হয় ফুটবলের সার্বিক অবস্থা তাতে তো লজ্জায় গদি ছেড়ে দেয়া উচিত সালাউদ্দিনদের। মোদ্দাকথা বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে পরিবর্তন এখন গনদাবিতে পরিণত হয়েছে।
×