ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ম্যাচসেরা ডেভিড মালান, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হার ২ উইকেটে

শেষ বলের বাউন্ডারিতে কুমিল্লার নাটকীয় জয়

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১ জানুয়ারি ২০২০

শেষ বলের বাউন্ডারিতে কুমিল্লার নাটকীয় জয়

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিবিপিএল টি২০) হেরেই চলেছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। তাতে ‘প্লে-অফে’ খেলার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছিল। অবশেষে টানা চার ম্যাচ হারের পর জিতল কুমিল্লা। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ডেভিড মালানের (৭৪) ব্যাটিং দ্যুতিতে শেষ বলের রোমাঞ্চে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ২ উইকেটে হারিয়ে ৮ ম্যাচে তৃতীয় জয় তুলে নিল কুমিল্লা। কুমিল্লার অধিনায়ক ইংল্যান্ডের মালান ম্যাচ জিতিয়েই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে ছুটেন। তার স্ত্রী অসুস্থ। তাই নিজ দেশে মঙ্গলবার ম্যাচটি শেষ হতেই চলে যান। আর এবার বিপিএলে না খেলার সম্ভাবনাই আছে মালানের। রাত ৭টায় বিমান ধরতে হবে। তাই ম্যাচ শেষ হতেই চলে যান মালান। ম্যাচসেরার পুরস্কারও তাই নিজ হাতে নিতে পারেননি। মালানের ব্যাটিং ধামাকায় এই ম্যাচে জয়ে এখন ‘প্লে-অফে’ খেলার আশা জিইয়ে থাকে কুমিল্লার। চট্টগ্রাম জিতলে ‘প্লে-অফ’ খেলা নিশ্চিত হয়ে যেত। কুমিল্লা হারলে ‘প্লে-অফ’ খেলার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যেত। লীগপর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম জিতেছিল। এবার চট্টগ্রামকে হারিয়ে প্রতিশোধও নিল কুমিল্লা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৯ রান করে চট্টগ্রাম। ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ও জুনায়েদ সিদ্দিকী মিলে ওপেনিংয়ে ১০৩ রানের জুটি গড়াতেই এমন স্কোর হয়। সিমন্স ৫৪, জুনায়েদ ৪৫ রান করার পর জিয়াউর রহমান অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংস উপহার দেন। বল হাতে সৌম্য সরকার ২ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে শেষ বলে গিয়ে জয় পায় কুমিল্লা। ম্যাচের শেষদিকে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। কোন দল জিতবে সেই দ্বিধা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত শেষ বলে গিয়ে মুজিব উর রহমানের বাউন্ডারিতে জয় তুলে নিতে পারে কুমিল্লা। ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬১ রান করে জিতে কুমিল্লা। শেষ বলটির এক বল আগে আউট হন মালান। ৫১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৪ রান করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। অনেক নাটকীয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত কুমিল্লাই শেষ হাসি হাসে। চট্টগ্রামের ইনিংসের মতো আকাশচুম্বী সূচনা হয়নি কুমিল্লার ইনিংসের। তবে শেষটা ঠিকই ভাল করে তুলে। দুই ওপেনার রবিউল ইসলাম ও স্টিয়ান ভ্যান জিল মিলে দলকে ৩০ রান পর্যন্ত নিয়ে যান। এমন সময় ভ্যান জিল (২২) আউট হয়ে যান। রবিউল ইসলাম (১৭), সৌম্য সরকারও (৬) বিশেষ কিছু করতে পারেননি। ডেভিড মালান একাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মালানের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমান রুম্মন যখন ৫০ রানের জুটি গড়ে সামনের পথ পাড়ি দিতে থাকেন ভরসা মিলে। কিন্তু দলের ১৩৪ রানে ৬৪ রানের জুটি হতেই সাব্বির (১৮) আউট হয়ে যান। তখন চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। ১ রান যোগ হতেই ডেভিড উইজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে আউট করে দেন রুবেল হোসেন। তাতে বিপদে পড়ে যায় কুমিল্লা। যেখানে সহজেই জিতবে এমন ভাবনা হতে থাকে। সেখানে বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। মালান ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলা মালান উইকেটে থাকায় ভরসা থাকে। তবে ১২ বলে যখন জিততে কুমিল্লার ২৪ রান লাগে, তখন আশাহত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়নি। ৬ বলে যখন জিততে ১৬ রান লাগে। প্লাঙ্কেটের করা শেষ ওভারের প্রথম বলটিতে এক রানের বেশি নেয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয় বলে ক্যাচ মিস করার সঙ্গে বাউন্ডারিও বাঁচাতে পারেননি নাসুম আহমেদ। তাতে করে ৪ বলে জিততে ১১ রান লাগে। তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন আবু হায়দার রনি। ৩ বলে জিততে লাগে ৫ রান। চতুর্থ বলে ১ রান হয়। জিততে লাগে ২ বলে ৪ রান। মালান এক রান নিয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান। ব্যাটিং দ্যুতি ছড়িয়েছে, ঝড়ো ইনিংস খেলে ৭৪ রান করে দলকে জয়ের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে আউট হন মালান। ১ বলে জিততে তখন ৩ রান লাগে। ব্যাট হাতে সানজামুল ইসলাম নেমে যেতে থাকেন। মাঠেও ঢুকে যান। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট মুজিবকে নামান। তাতে করে মাঠে ঢুকে আবার বের হওয়ায় আইন অনুযায়ী সানজামুল ‘রিটায়ার্ড আউট’ হন। আফগানিস্তানের মুজিব ব্যাট হাতে নেমে ফুলটস বল পেয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ ও ডিপ মিড উইকেটের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। অপরাজিত ১২ রান করা আবু হায়দার রনিকে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়েন মুজিবুর। ১৬১ রান করে জিতে যায় কুমিল্লা। হাফ ছেড়ে বাঁচেন কুমিল্লার ক্রিকেটাররা। টানা চার ম্যাচ হারের পর জয়ের স্বস্তি যে মিলে। শুরুটা যেভাবে হয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের, শেষটা সেভাবে হয়নি। শুরুতে ১১তম ওভারেই ১০০ রান করে ফেলে চট্টগ্রাম। দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ও জুনায়েদ সিদ্দিকী মিলে ব্যাটিং ঝড় তুলেন। যে দলের ১০৩ রানে গিয়ে ৩৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ রান করা সিমন্সকে আউট করে দেন সৌম্য সরকার তখন চট্টগ্রামের রানের গতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১ রান যোগ হতেই জুনায়েদও (৩৭ বলে ৪৫ রান) রান আউট হয়ে যান। এরপর ভরাডুবি শুরু হয়। সিমন্স আউট হন ১১.৩ ওভারে। ইনিংসের ২০ ওভার শেষ হতে আরও ৮.৩ বল অর্থাৎ ৫১ বল থাকে। এই বাকি থাকা বলে আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৬ রানের বেশি করতে পারেননি চট্টগ্রাম ব্যাটসম্যানরা। টি২০ ক্রিকেটে শেষেই বেশি রান হতে দেখা যায়। অথচ সিমন্স আউটের পর জুনায়েদ, চাডউইক ওয়ালটন (৯), রায়ান বার্ল (২), ম্যাচটিতে চট্টগ্রামের অধিনায়ক থাকা নুরুল হাসান সোহান (৪), লিয়াম প্লাঙ্কেটরা (৪) কিছুই করতে পারেননি। জিয়াউর রহমান শেষদিকে যদি হাল না ধরতেন তাহলে আরও কম রান হতে পারত। ২১ বলে ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪ রান করে দলকে ১৫৯ রানে নিয়ে যান জিয়া। শুরুতে যেভাবে রান উঠছিল, তাতে মনে হচ্ছিল দুই ওপেনার না আবার দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নেন। ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটিও না গড়ে ফেলেন। কিন্তু যে সিমন্স আউট হলেন, সব ধসে পড়ল। এরপর কুমিল্লা বোলাররা এমনই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেন, চট্টগ্রামের রান যে আকাশচুম্বী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তা রুখে দেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইনজুরির জন্য খেলতে পারছেন না। ইমরুল কায়েসও অসুস্থতার জন্য ম্যাচটি খেলতে পারেননি। তাতে করে মাঝপথে চট্টগ্রামের ব্যাটিং ধসই দেখা মিলে। এই ধসে স্কোরবোর্ডে আশানুরূপ রান হয়নি। তাতে মালানের দ্যুতিতে কুমিল্লাও জিতে যায়। স্কোর ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ম্যাচ- মিরপুর টস ॥ কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স (ফিল্ডিং)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস- ১৫৯/৬; ২০ ওভার; সিমন্স ৫৪, জুনায়েদ ৪৫, ওয়ালটন ৯, বার্ল ২, সোহান ৪, জিয়া ৩৪*, প্লাঙ্কেট ৪, পিনাক ০*; সৌম্য ২/২০। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস- ১৬১/৮; ২০ ওভার; রবিউল ১৭, ভ্যান জিল ২২, মালান ৭৪, সৌম্য ৬, সাব্বির ১৮, উইজ ১, অঙ্কন ০, রনি ১২*, সানজামুল ০, মুজিব ৪*; রুবেল ২/১৬। ফল ॥ কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ডেভিড মালান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।
×