ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুদে শিক্ষার্থীদের বড় পরীক্ষা, দিনভর পাসের আনন্দ

প্রকাশিত: ১১:১২, ১ জানুয়ারি ২০২০

খুদে শিক্ষার্থীদের বড় পরীক্ষা, দিনভর পাসের আনন্দ

মোরসালিন মিজান ॥ ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর আমরা বড় বড় পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়েছি। আর সব ভুলে ওরা এখন লেখাপড়া নিয়ে থাকে। শুধুই লেখাপড়া। বিশাল ব্যাগ ভর্তি পাঠ্যপুস্তক। সেটি কাঁধে নিয়ে দিব্যি স্কুলে ছুটছে। বাসায় ফিরতেই প্রাইভেট টিউটর। শিশু কিশোরদের শৈশব চুরি হয়ে যাচ্ছে এভাবে। আবার এ বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না যে, পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা এখন বহুগুণে বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বনাগরিকতার বোধ নিয়ে বড় হতে হচ্ছে শিশুদের। পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করতে হচ্ছে। তেমনই দুটি পরীক্ষার নাম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)। মাদ্রাসা শিক্ষার বেলায় এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (এবিটি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি)। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসব পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো মঙ্গলবার। এর পর থেকেই হাসিরাশি আনন্দ। সারা দেশের মতো ঢাকায়ও বাচ্চারা ভীষণ আনন্দ করেছে। এত কষ্টের পর ভাল ফল, উদ্যাপন না করলে চলে? রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি স্কুল এদিন দারুণ উৎসবে মেতেছিল। উৎসবে মাতার মতোই ফলাফল হয়েছে এবার। পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫১ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৮ জন। জেএসসিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ লাখ ২১ হাজার ৫৯১ জন। গতবারের তুলনায় পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪ হাজার ৬৩০ জন। পাস করেছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ জন। পাসের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৫ হাজার ২০০ জন। ফল প্রকাশের পর দুপুর ১টার দিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, খুদেরা ফড়িংয়ের মতো প্রজাপতির মতো উড়ছে। উড়ছে বলেই মনে হচ্ছিল। সহপাঠীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নাচছিল। গাইছিল। ‘দোস্ত’ বলে চিৎকার করতে করতে একে অন্যের দিকে ছুটে যাচ্ছিল। কাউকে আলাদা করে কথা বলার জন্য পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ কথা বলার সুযোগ হয় জেএসসিতে জিপিএ ফাইভ অর্জন করা তাহসিনের সঙ্গে। সে বলছিল, অনেক কষ্ট করেছি ভাল রেজাল্টের জন্য। এর পরও টেনশানে ছিলাম। যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়! শেষতক হয়নি। জিপিএ ফাইভ পাওয়ায় তার মতো বাবা মাও খুশি হয়েছে বলে জানায় সে। একই ফল করেছে মুহাইমেন। তাকে পাওয়া গেল না। তার মা বলছিলেন, ছেলে তো একা পড়েনি। আমি ওর বাবা দুজনেই ওর সঙ্গে লেখাপড়া করেছি। ওর বাবার অফিস আছে। আমার অফিস বাসা সবই ছেলে। ফল ভাল করায় ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হয়েছেন বলে জানান তিনি। বলছিলেন, আমাদের সময় এত প্রতিযোগিতা ছিল না। এখন প্রতিযোগিতা বেশি। তাই যুদ্ধটাও বেশি করতে হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। বিয়াম মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে গিয়েও দেখা যায় অভিন্ন চিত্র। ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছিল। নানাভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল তারা। পিইসিতে জিপিএ ফাইভ অর্জন করা শ্রেয়া বলছিল, আমার ভাইয়াও জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। আমিও পেয়েছি। তাই খুব ভাল লাগছে। বড় হয়ে আরও ভাল পরীক্ষা দিয়ে টিচার হবে জানায় সে। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের আলাদা সুনাম। ভাল শিক্ষার্থীদের বড় সমাবেশ এখানে। সঙ্গত কারণে ফলও আশানুরূপ হয়েছে। স্কুল আঙিনা ঘিরে উৎস আনন্দ দেখেই বোঝা গেছে, অর্জন এবারও ভাল। এখান থেকে পিইসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়া সাবরিনা বলছিল, আমি ডাক্তার হব। বাবা মা চায়, আমি ডাক্তার হই। তাই ভাল করে পরীক্ষা দিয়েছি। ফলও ভাল হয়েছে। তাই আমার খুব খুশি লাগছে। এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (এবিটি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় ভাল ফল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দিনটি উদ্যাপিত হয়েছে। তবে শুধু পাঠ্য বই নয়, শুধু লেখাপড়া নয়, মানুষ হওয়ার পরীক্ষায়ও পাস করতে হবে। সে শিক্ষাও দিতে হবে আমাদের ছেলে মেয়েদের। আমরা তা দিচ্ছি তো?
×