ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদায়ী বছরে আমাদের ছেড়ে গেলেন যারা

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১ জানুয়ারি ২০২০

বিদায়ী বছরে আমাদের ছেড়ে গেলেন যারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য বিদায়ী বছরে রাশি রাশি আনন্দের উল্টোপিঠের আয়নায় প্রিয় পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অনেক বিশিষ্টজন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ॥ বিদায়ী বছরে দেশের রাজনীতিতে শোকের চাদর বিছিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বছরের শুরুতেই ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী। মৃত্যর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ॥ এ বছরের ১৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তিন দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের অবসান হয়। ফজলে হাসান আবেদ ॥ এ বছরের ২০ ডিসেম্বর চিরবিদায় নেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার চেষ্টায় নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এই বরেণ্যজন। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ॥ এই বছরে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া ফেলে চিরবিদায় নেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ২২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। দুই শ’র বেশি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বুলবুল। আল মাহমুদ ॥ কালজয়ী কবিতা ‘সোনালি কাবিন’-এর রচয়িতা প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জানুয়ারি মারা যান। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান আল মাহমুদ। শাহনাজ রহমত উল্লাহ ॥ বিদায়ী বছরের ২৪ মার্চ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান শ্রোতানন্দিত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শাহনাজ রহমত উল্লাহর গানের শুরু স্কুল জীবন থেকেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। এরপর কণ্ঠ দিয়েছেন বহু চলচ্চিত্রে । আমানুল্লাহ কবীর ॥ বিশিষ্ট সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর চিরবিদায় নেন ১৬ জানুয়ারি। ৭২ বছর বয়সী এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ডায়াবেটিস ও লিভারের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শাহ আলমগীর ॥ এ বছর প্রয়াত হন আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক শাহ আলমগীর। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। পলান সরকার ॥ বই পড়ায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এক মানুষের নাম পলান সরকার। রাজশাহীর গ্রামে নিজের টাকায় বই বিলি করে অভিনব এক আন্দোলনের সূচনা করা পলান সরকারের জীবনের পরিভ্রমণ থেমে যায় ১ মার্চ। টেলি সামাদ ॥ দর্শকনন্দিত কৌতুকাভিনেতা টেলি সামাদের মৃত্যু হয় বিদায়ী বছরের ৬ এপ্রিল। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ হলেও ‘টেলি সামাদ’ হিসেবেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। চার দশকে ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সুবীর নন্দী ॥ গানে গানে শ্রোতার হৃদয় জয় করা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠস্বরটি চিরতরে থেমে যায় বিদায়ী বছরের ৭ মে। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাকে আসেন। খালিদ হোসেন ॥ এ বছরের ২২ মে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান একুশে পদকপ্রাপ্ত নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক খালিদ হোসেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ১৯৪০ সালের ৪ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্ম নেয়া খালিদ হোসেন পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে নজরুল গীতির শিক্ষক, গবেষক ও শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নে কাজ করেছেন। মমতাজউদদীন আহমদ ॥ বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অভিনেতা ও নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ। বিদায়ী বছরের ২ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। ৮৪ বছর বয়সী মমতাজউদদীন নাট্যচর্চায় অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। রিজিয়া রহমান ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রজ কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান মারা যান ১৬ আগস্ট। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা। মোজাফফর আহমদ ॥ বাংলাদেশের রাজনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মোজাফফর আহমদ মারা যান ২৩ আগস্ট। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন তিনি। কালিদাস কর্মকার ॥ বাংলাদেশে স্থাপনা শিল্প ও পারফরমেন্স শিল্পের সূচনাকারী অন্যতম শিল্পী কালিদাস কর্মকার মারা যান ১৮ অক্টোবর। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বাংলাদেশের সমকালীন চিত্রশিল্পে ভিন্ন মাধ্যম ও আঙ্গিক প্রবর্তনে যারা অগ্রণী, তাদেরই একজন কলিদাস কর্মকার । সাদেক হোসেন খোকা ॥ অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা গত ৪ নবেম্বর নিউইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। একাত্তরে খোকা ছিলেন গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য। মইন উদ্দীন খান বাদল ॥ ৭ নবেম্বর চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও জাসদ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৬৭ বছর বয়সী মইন উদ্দীন খান বাদল চট্টগ্রাম-৮ আসনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। রবিউল হুসাইন ॥ একুশে পদকজয়ী কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২৬ নবেম্বর। ৭৬ বছর বয়সী রবিউল হুসাইন রক্তের জটিলতায় ভুগছিলেন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত রবিউল হুসাইন কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে। রওশন আরা বাচ্চু ॥ ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চু মারা যান ৩ ডিসেম্বর। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মেয়েদের যে মিছিল পুলিশের ব্যারিকেডে ভেঙ্গেছিল, তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই মিছিলের। মাহফুজুর রহমান খান ॥ দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান মারা যান ৬ ডিসেম্বর। ৭০ বছর বয়সী মাহফুজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। অজয় রায় ॥ ৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়। ৮৩ বছর বয়সী অধ্যাপক অজয় রায় ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তালুকদার মনিরুজ্জামান ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান মারা যান ২৯ ডিসেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৬ সালে অবসরে যান তিনি। ওই বছরই সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক মনোনীত করে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ॥ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী মারা যান ৩০ ডিসেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মোয়াজ্জেম আলী জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কোর কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ভূমিকা রাখেন।
×