ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের পড়ার চাপ না দিয়ে মেধা বিকাশে নজর দিতে হবে

প্রকাশিত: ১১:০২, ১ জানুয়ারি ২০২০

শিশুদের পড়ার চাপ না দিয়ে মেধা বিকাশে নজর দিতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের শুধু পড়ার জন্য চাপ না দিয়ে তাদের ভেতরের মেধা ও শক্তি বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টিতে নজর দিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বর্তমান যুগে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চাই। যাতে তারা পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে। এ কথা মাথায় রেখেই তাঁর সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক মানোন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার গণভবনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, শিশুর ভেতরে যে একটা মেধা থাকে, একটা শক্তি থাকে- এই জিনিসটা যেন বিকশিত হতে পারে, সেটা যেন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে দেশের জন্য। কাজেই সারাদিন বই পড়ে পড়ে সময় কাটানো নয়। বেশি পড় পড় করলে কিন্তু পড়তে ইচ্ছা করে না; মনটা খারাপ হয়ে যায়। কাজেই খেলাধুলার মধ্য দিয়েই তাদের পড়ালেখা শেখাতে হবে। তবেই সেটা ফলপ্রসূ হবে। নিজের গরজে সবাই পড়বে। একা একা পড়বে। সেটাই তো ভাল লাগে। আমরা সেভাবেই পড়াশোনা করাকে উৎসাহিত করি। পরীক্ষার ফল হস্তান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে উপস্থিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে সারাদেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা যেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে তাদের সেই শিক্ষা দিয়ে ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষা আমরা দিতে চাই। যেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা চলতে পারে। সেই শিক্ষাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আজকের এই নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে। তাদের পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলা। সবার জীবন সুন্দর হোক আমি সেই কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, আমরা শিক্ষাকে আরও আধুনিক, উন্নত এবং বিজ্ঞানসম্মত করতে চাই। শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, কারিগরি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। যাতে ছেলে বা মেয়ে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে। তিনি এ সময় ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাল ফল করতে হলে আমাদের শিশুদের আরও মনোযোগী হতে হবে। ভবিষ্যতে যেন ফল আরও ভাল হয়, সেজন্য মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। তাঁর সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দেয়াসহ বৃত্তি প্রদান করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব বা-মার ওপর যেন চাপ না পড়ে, সেজন্য আমরা বছরের শুরুতেই বই দিচ্ছি। স্কুল ও কলেজ সরকারী করে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের যেন নদী-নালা, খাল-বিল পার হতে না হয়, সেটা বিবেচনায় রেখে স্কুল করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। উচ্চশিক্ষাসহ সর্বস্তরে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করেছি। কোন শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানে শিক্ষার কথা বলা আছে গুরুত্বের সঙ্গে। আর বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশটাকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই। উন্নত এবং সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আমরা এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে থাকবে না কোন দারিদ্র্য, বৈষম্য। থাকবে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা। সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়া এবং তাঁর সরকারের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে তোলাতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে আরও বলেন, খেলাধুলার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করবেন। এখন আমরা সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ফল প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি পরীক্ষা সময়মতো হবে এবং ফলও সময়মতো হবে। আমরা কোন সেশনজট রাখব না। সেশনজট থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অমনোযোগ চলে আসে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু সরকার শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছিল। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করার পাশাপাশি ৩৬ হাজার প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা ২৬ হাজার প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করেছি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করছি। বই উৎসবে শিশুদের সঙ্গে খেলায় মাতলেন প্রধানমন্ত্রী গণভবনের সবুজ চত্বর। শীতের সকালে নরম আলোয় প্রাণখুলে খেলাধুলায় মত্ত স্কুলের ছোট্ট শিশুরা। পরম মমতায় তাদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কখনও শিশুদের দোলনায় বসিয়ে দোল খাওয়াচ্ছেন, আবার কখনও ছোট্ট শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে ¯েœহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর এমন ¯েœহভরা সঙ্গ পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা শিশুরাও। মঙ্গলবার গণভবন চত্বরে ছিল এমনই বিরল দৃশ্য। এর আগে গণভবনের বাঙ্কোয়েট হলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ি, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং বই উৎসবের এই অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায়ের ছোট্ট স্কুল শিশুরাও অংশ নেয়। ফলপ্রকাশের পর বই উৎসবে শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখানে থাকা দেশের বিভিন্ন স্কুলের এসব শিশুকে গণভবনের মাঠের সবুজ চত্বরে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সব শিশুর সঙ্গে ফটোসেশন শেষে তাদের ঘুরে ঘুরে দেখতে ও খেলাধুলা করতে বলেন। সুযোগ পেয়ে স্কুলের ছোট্ট শিশুরা হৈ-হুল্লোড়, দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি ও খেলাধুলায় মেতে উঠে। গণভবনের সবুজ মাঠকে মুহূর্তেই মাতিয়ে তোলে শিশুরা। গণভবনের সবুজ মাঠে নির্মিত বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন কুঁড়েঘর, স্লাইডে পিছলে পড়া, দোলনায় দোল খাওয়া, ট্রাম্পলিন-এ লম্ফ-ঝম্ফসহ বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে থাকে শিশুরা। শিশুদের প্রতি স্বভাব-সুলভ মমতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠেন। শিশুদের দোলনায় বসিয়ে নিজেই দোল দেন প্রধানমন্ত্রী। অনেককে কাছে টেনে আদরও করেন তিনি। গণভবনে আসা কয়েকটি প্রতিবন্ধী শিশুকেও পরম মমতায় বুকে টেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন তিনি। পরে শিশুদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চকোলেট, মিষ্টি, ফলসহ হালকা নাস্তা দিয়ে গণভবনে আপ্যায়িত করা হয়। নতুন বইয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পরম মমতার সঙ্গ, গণভবনের সবুজ মাঠে খেলাধুলায় শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×